অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিকগুলো নিয়ন্ত্রণে যেন কেউ নেই। বিনা চিকিৎসা বা ভুল চিকিৎসায় এসব হাসপাতালে রোগীর মৃত্যু যেন স্বাভাবিক বিষয়। আর উচ্চহারে বিল আদায়ের ঘটনা তো রয়েছেই। দায়িত্ব নেয়ার পর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন স্বাস্থ্য খাতে নৈরাজ্য দমনে নানা উদ্যোগের কথা বলছেন। তার কথায় আমরা আশাবাদী হতে চাই। এ খাতের পরিবর্তন দেখার অপেক্ষায়। ইতোমধ্যে রাজধানীর বাড্ডার সাতাকুল এলাকার ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় শিশু আয়ানের মৃত্যুর ঘটনা অবৈধ হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বিরুদ্ধে ঝিমিয়ে পড়া অভিযানে যেন গতি সঞ্চার করেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, এই অভিযান চলমান একটি প্রক্রিয়া। এর আগেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বরাবরই বলে এসেছে ভুয়া ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধে সরকারের অভিযান অব্যাহত থাকবে ও ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু জনবল সংকটের দোহাই দিয়ে কার্যকর কিছু দেখা যায়নি। বিভিন্ন সময় অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযানে নামে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বেশ কিছুদিন এই অভিযান চললেও পরবর্তী সময়ে তা গতি হারায়। ২০২০ সালে এমন অভিযানে নেমেছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু মালিকপক্ষের চাপে অভিযান আলোর মুখ দেখেনি। ফলে অবৈধ অনেক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যায়নি। ২০২২ সালের ২৫ মে আকস্মিক ঘোষণা দিয়ে অবৈধ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযানে নামে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সেই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে অভিযান অব্যাহত রাখার সুপারিশ করেছিলেন সাধারণ মানুষ থেকে বিশিষ্টজন। আমরা চাই নতুন মন্ত্রীর ঘোষণার মধ্য দিয়ে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। দেশে ১৩ হাজার ৬৮০টি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে লাইসেন্স আছে ৬ হাজার ১০২টির। এর মধ্যে হাসপাতাল ২ হাজার ১৪৮টি, প্যাথলজি ল্যাব ৩ হাজার ৮৭২টি ও ব্লাড ব্যাংক ৮২টি। লাইসেন্সের জন্য আবেদন এবং পরিদর্শনের অপেক্ষায় আছে আরো কয়েক হাজার প্রতিষ্ঠান। উদ্বেগের বিষয় লাইসেন্স ও ভ্যালিড কাগজপত্র নেই, অন্যদিকে তারা যে ভালো সেবা দিচ্ছে, তাও নয়। অনেক ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিকে নেই ন্যূনতম ডাক্তার, নার্স ও টেকনিশিয়ান। চিকিৎসা না দিয়ে যেনতেনভাবে মানুষের গলা কেটে ব্যবসা করাই যেন তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য। চিকিৎসা বিজ্ঞানের অভাবনীয় অগ্রগতি ঘটেছে। উন্নত বিশ্বের অনেক উদ্ভাবনের সুফল ভোগ করছে বাংলাদেশের মানুষ। তবে অর্থনৈতিক কারণে এ সুবিধা সবার কাছে সমভাবে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। বিশেষভাবে অসচ্ছল জনগোষ্ঠীর জন্য এ সমস্যা আরো তীব্র হয়, যখন চিকিৎসকরা অনেক ধরনের পরীক্ষার নিদান দেন। মেডিকেল টেস্টকে কমবেশি সব চিকিৎসক বাড়তি উপার্জনের হাতিয়ারে পরিণত করছেন, এমন অভিযোগ ক্রমশ বাড়ছে। চিকিৎসাসেবাকে সাধারণ মানুষের কাছে সহজলভ্য করতে সরকার প্রতি বছরই শত শত কোটি টাকা বাজেট বাড়াচ্ছে। সরকারি হাসপাতালে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকার কথা থাকলেও দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা এবং অনৈতিক কারসাজির সিন্ডিকেটেড বাণিজ্যের জন্য সে সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন দেশের দরিদ্র মানুষ। এ ধরনের হয়রানি ও অনৈতিক বাণিজ্য বন্ধ করতে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিকগুলোর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
অবসান হোক স্বাস্থ্য খাতে নৈরাজ্যের
Previous article
আরো দেখুন
নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা
গণমাধ্যম থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, চায়ের দোকান—সর্বত্র নির্বাচন নিয়ে খবর, আলোচনা চললেও ধোঁয়াশা কাটছে না। কবে হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন—এই প্রশ্নের এখনো...
পেঁয়াজ সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম
একদল ব্যক্তি বা কম্পানি সুনির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে পরস্পরের স্বার্থ সুরক্ষায় একত্রে কাজ করে সিন্ডিকেট তৈরি করে। ব্যবসায়ীদের অসাধু সিন্ডিকেটের কারণে এ দেশের জনসাধারণ নিত্যপণ্য...