অভয়নগর সংবাদদাতা
যশোরের অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া নুরবাগ মশিয়াহাটী সড়কের নির্মাণ কাজের ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কাজে নিম্নমানের মালামাল ব্যবহার করা হচ্ছে। রাস্তায় ব্যবহৃত খোয়া ও ইট খুবই নিম্ন মানের। ওয়াটার মোয়েশ্চার মেকাডামের (ডব্লু এম এম) উপরে ইটের ডাস্ট ব্যবহার করা হচ্ছে। কাজে অনিয়ম হলেও অঞ্জাত কারণে প্রকৌশল বিভাগ কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। কার্যাদেশ পাওয়ার এক বছর পেরিয়ে গেলেও ২০ শতাংশ কাজও হয়নি। উপজেলা প্রকৌশল দপ্তর থেকে কাজের অগ্রগতি ২০ শতাংশ দেখালেও কাজ হয়েছে অনেক কম। কাজ শুরুর আগেই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে ১০ শতাংশ বিল প্রদান করা হয়। সরেজমিনে দেখা গেছে, নওয়াপাড়া জগবাবুর মোড় থেকে সরখোলা প্রভাতী যুব সংঘ পর্যন্ত ডব্লু এম এম এর কাজ চলছে। কাজে নিম্নমানের খোয়া ব্যবহার করা হচ্ছে। এবং রাস্তার উপরের অংশে ডাস্ট ব্যবহার করা হচ্ছে। এলাকার লোকজন উপজেলা প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তাদের জানালেও অঞ্জাত কারণে তারা কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এর আগে রাস্তাটির ডুমুরতলা ও সুজতপুর এলাকায় প্যালাসাইডিং কাজ করা হয়েছে। প্যালাসাইডিং কাজেও নিম্নমানের খোয়া ও অন্যান্য মালামাল ব্যবহারের অভিযোগও রয়েছে। ষ্টিল সাটার দিয়ে সেন্টারিং করার নিয়ম থাকলেও নিম্নমানের কাঠদিয়ে সেন্টারিং করা হয়। স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, নওয়াপাড়া নূরবাগÑমশিয়াহাটী সড়কটি দীর্ঘদিন মেরামত না হওয়ার কারণে জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে। ২০১১ সালের পর আর রাস্তাটি সংস্কার হয়নি। সাত দশমিক তিনশত কিলোমিটার সড়কের ছয় কিলোমিটারের দুইপাশে মাছের ঘের থাকার কারণে রাস্তা ভেঙ্গে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। গত অর্থবছরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, যশোর রাস্তার দরপত্র আহবান করে। পল্লীযোগাযোগ প্রকল্পের আওতায় (আরসিআইপি) নওয়াপাড়া নুরবাগ-মশিয়াহাটী সড়ক এবং শংকরপাশা খেয়াঘাট থেকে নড়াইল ফুলতলা আরএইচডি সড়কে মোট ১২ কিলোমিটার কাজের প্রাক্কলিত মুল্য ২১ কোটি ৯২ লাখ ৪৮ হাজার ৯৬৯ টাকা। প্রাক্কলিত ব্যয়ের ১ কোটি ৪১ লাখ ৭২ হাজার ৫৬০ টাকা বেশী দরে ঢাকার মনিপুরের,মিরপুর এলাকার এম এ এইচ কনস্ট্রাকশন লি: এবং মেসার্স মৈত্রী বিল্ডার্স (জেভি) লিড পার্টনার আনোয়ারা আক্তার আখি মনি কাজটি পান। গত বছর যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী ৫২৬৩ নম্বর স্বারকে ৩০/১১/২২ তারিখে কার্যাদেশ প্রদান করেন। কার্যাদেশ অনুযায়ী ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর কাজ শুরু করে ২০২৪ সালের ৩০ মের মধ্যে কাজটি শেষ করতে বলা হয়। এরমধ্যে মশিয়াহাটী সড়কটি নির্মাণ দৈর্ঘ্য ৭ দশমিক তিন কিলোমিটার এবং শংকরপাশা সড়কটি ৪ দশমিক সাত শত কিলোমিটার। দরপত্রে ২ হাজার ৭৮০ মিটার প্যালাসাইডিং করার কথা বলা হয়েছে। সরখোলা গ্রামের আলমগীর হোসেন বলেন “ কাজে কাদা মাটি দিয়ে নিম্ন মানের খোয়া দেয়া হচ্ছে। ইটের গুড়াদিয়ে রাস্তা হয় তা কখনো দেখিনি। ইঞ্জিনিয়ারদের বলেও কোন লাভ হলো না। কাজ বন্ধ করতে চেয়েছিলাম কিন্তু ঝামেলা হয় কিনা তাই করিনি। এক বছরে কাজের যে অগ্রগতি তাতে কাজ কবে শেষ হবে তা বলা যাচ্ছে না। কাজের মান নিয়ে কিছুই বলার নেই। সব মালামাল নিম্নমানের। আমাদের ভোগান্তির শেষ নেই।” ঠিকাদারের প্রতিনিধি আরিফুর রহমান বলেন, ভাটা থেকে কিছু ইটের গুড়া আনা হয়েছিল তা ব্যবহার করা হচ্ছে না। মাত্র দুইশত ফুটের মধ্যে গুড়া ব্যবহার করা হয়েছে। নিম্নমানের মালামাল ব্যবহার করা করার বিষয়টি তিনি ইঞ্জিনিয়ারদের সাথে কথা বলতে পরামর্শ দেন। উপজেলা প্রকৌশলী এস এম ইয়াফি বলেন, কাজের মান খারাপ হওয়ার সুযোগ নেই। ডাস্ট ব্যবহারের কোন নিয়ম নেই। আমি ডাষ্ট ব্যবহার না করতে বলেছি। এলাকার লোকতো ডাষ্ট ব্যবহার করলে কাজ বন্ধ করতে পারে। আমি ডাষ্ট এবং নিম্ন মানের খোয়া সরিয়ে নিতে বলছি।