১৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

সর্বনাশা তিস্তার অসময়ের ভাঙনে পাগলপ্রায় কৃষকরা

প্রতিদিনের ডেস্ক
মাঠে অক্লান্ত পরিশ্রম ও বুকভরা আশা নিয়ে ফসল ফলান কৃষকরা। উদ্দেশ্য একটাই খেয়ে-পরে একটু ভালো থাকা। তবে অসময়ের ভাঙনে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে কৃষকদের সেই আশায় গুড়েবালি দিয়েছে সর্বনাশা তিস্তা। ভাঙনে বিলীন হয়েছে প্রায় ৩০ বিঘা ভুট্টাক্ষেত। ক্ষেতের শস্য ও চাষযোগ্য জমি হারিয়ে এখন পাগলপ্রায় এসব কৃষক। বাধ্য হয়ে গবাদিপশুকে কেটে খাওয়াচ্ছেন মোচাধরা ভুট্টা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কাপাসিয়া ইউনিয়নের উজান বুড়াইল চরের দূরত্ব উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার। মাঝখানে পাড়ি দিতে হয় দুটো নদী। বছর পাঁচেক আগ থেকে তিস্তার বুকে জেগে ওঠা দুর্গম ওই চরে ফলছে ভুট্টাসহ নানা শস্য। ভুট্টাক্ষেতগুলোতে মোচা ধরেছে। দু’মাস পরই কৃষকদের ঘরে উঠতো ফসল। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না তাদের। ভেঙে তছনছ সেই ফসলি মাঠ। সর্বনাশা তিস্তার ভাঙনে এরইমধ্যে নদীতে ভেসে গেছে জহুরুল ইসলাম, লিটন মিয়া, নুরনবী ও রফিকুল ইসলামসহ বেশ ক’জন কৃষকের প্রায় ৩০ বিঘা জমির ভুট্টাক্ষেত। বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। এরউপর জমিজিরাত ভেঙে যাওয়ায় এখন দিশাহারা ওই কৃষকরা। উপায়ান্তর না পেয়ে মোচাধরা ভুট্টাই কেটে গবাদিপশুকে খাওয়াচ্ছেন তারা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় এবার গম, মসুর, সরিষা, আলু, ভুট্টা, তিল, তিশি, পেঁয়াজ, রসুনসহ নানান ধরনের রবিশস্যের চাষ হয়েছে ১১ হাজার ১০ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে ভুট্টা ৩ হাজার ৮২০ হেক্টরে চাষ হয়েছে। উপজেলার অন্যান্য এলাকা ছাড়াও তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, কাপাসিয়া ও চন্ডিপুর ইউনিয়নের চরগুলোতেও করা হয়েছে ভুট্টার আবাদ। কৃষকদের উৎসাহিত করতে ১১শো কৃষককে দেওয়া হয়েছে সার ও বীজ।
কৃষকরা বলছেন, সবমিলিয়ে বিঘায় খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা। ভালো হয়েছিল ভুট্টা। মোচাও এসেছিল। আশা ছিল, বিঘায় ফলন হবে ৫২-৫৫ মণ। কিন্তু তিস্তার ভাঙনে এখন সব শেষ। ঋণ শোধ কিংবা পুঁজি করবো কী দিয়ে?
কৃষক জহুরুল ইসলাম বলেন, অসময়ের ভাঙনে আমার সব ভুট্টাক্ষেত তিস্তায় বিলীন হয়েছে। ধার-দেনা করে এবার আবাদ করেছিলাম। আমার আশা ভেঙে দিলো সর্বনাশা তিস্তা।
রফিকুল ইসলাম বলেন, এবার সবাই আগাম ভুট্টা করেছিলাম। ভুট্টা খুব ভালো হয়েছিল। সবগুলোতে মোচাও এসেছিল। কিন্তু তিস্তা নদী সব শেষ করে দিলো।
কাপাসিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মনজু মিয়া বলেন, ভাঙন এখনো চলছে। অসময়ের ভাঙনে চরের কৃষকদের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। ভাঙনরোধে স্থায়ী সমাধান করতে না পারলে প্রতিবছর হাজার হাজার হেক্টর জমি তিস্তার পেটে যাবে। ভাঙনের বিষয়টি এরইমধ্যে উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।
তিস্তার ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রাশিদুল কবির বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের একটি তালিকা প্রস্তুত করা হবে। সেইসঙ্গে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাদেরকে কৃষিতে পূনর্বাসনের জন্য যতটুকু পারা যায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়