রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া কোনোভাবেই শুরু করা যাচ্ছে না। নানা কারণে ঝুলে আছে। করোনা ভাইরাস মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং যুদ্ধের ফলে দেশে দেশে অর্থনৈতিক সংকট, পরাশক্তিগুলোর আধিপত্য বিস্তারের লড়াইসহ নানা বিষয়ে আড়াল হয়ে আছে প্রত্যাবাসনের বিষয়টি। এখন বলা হচ্ছে, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষের কারণে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করা যাচ্ছে না। নতুন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদও প্রত্যাবাসনের বিষয়ে জোর দেন। এ রকম পরিস্থিতিতে গত রবিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন চীনের রাষ্ট্রদূত এবং জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি। বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যু গুরুত্ব পেলেও প্রত্যাবাসনের বিষয়ে দুই মত এসেছে। চীন আশাবাদী থাকলেও জাতিসংঘ বলেছে পরিবেশ সহায়ক নয়। দুই মতের কারণে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত করার সুযোগ নেই। দ্রুত প্রত্যাবাসনের প্রতি মনোযোগ দিতে হবে। অন্যদিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপরাধ প্রবণতা দিন দিন বাড়ছেই। আমরা শুরু থেকেই এ বিষয়ে শঙ্কার কথা জানিয়ে আসছি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন না হলে স্বাভাবিকভাবেই সন্ত্রাসবাদের উত্থান হবে। খুন, ধর্ষণ, মাদক পাচার, শিশু পাচার, ডাকাতি, অপহরণ, পতিতাবৃত্তিসহ সব ভয়ংকর অপরাধের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে রোহিঙ্গারা। এটা আমাদের জন্য উদ্বেগের বিষয়। জাতিগত নির্মূল অভিযানের ফলে ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে মিয়ানমারের ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এর আগেও এখানে অবস্থান করছিল ৩ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। যা ক্রমান্বয়ে বাড়তে বাড়তে বর্তমানে ১১ লাখ ছাড়িয়েছে। অবৈধ অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের কারণে আমাদের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোয় আর্থসামাজিক ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত চারটি কারণেই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ঝুলে আছে। মিয়ানমার নিজেরাই রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে চায় না, রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা এনজিওগুলো চায় না, ইসলামি মৌলবাদী গোষ্ঠী চায় না এবং রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার বিষয়টি মিয়ানমার যেভাবে এড়িয়ে যাচ্ছে, তাতে গোপনে সমর্থন জানাচ্ছে চীন-রাশিয়ার মতো বৃহৎ শক্তি। এমনকি বিশ্বব্যাংকের মতো বৈশ্বিক সংস্থাও রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের মূল জনগোষ্ঠীর সঙ্গে আত্তীকরণের উদ্ভট প্রস্তাব দিয়েছে। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়েছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। দুই দফা সময় দিয়েও তারা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়নি। বিশেষ করে করোনা মহামারি পর থেকে রোহিঙ্গাদের ওপর থেকে ঢিল পড়ে যায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ। এরপর দেশের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কাছেও বারবার চাপা পড়ে যাচ্ছিল প্রত্যাবাসনের বিষয়টি। ২০২৩ সালে এসে ত্রিপক্ষীয় ওই উদ্যোগের আওতায় প্রত্যাবাসন শুরুর কাজ কিছুটা এগোলেও আবার থমকে যায়; এর মধ্যে রাখাইনসহ বহু এলাকায় বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধ চলছে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর। মিয়ানমার এরই মধ্যে চীনের মধ্যস্থতায় দেশটির তিনটি স্থানে অস্ত্র বিরতিতে রাজি হয়েছে। রাখাইনে অস্ত্র বিরতি হলেই প্রত্যাবাসন শুরু করতে চায় চীন। মূলত রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ভারত, চীন, রাশিয়াকে জোরালো উদ্যোগ নিতে হবে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ নিয়মিত কূটনীতির অংশ হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন ফোরামে রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি জোরালোভাবে উত্থাপন করলেও সবাই চুপচাপ, কোনো প্রতিক্রিয়া বা পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। মানবিক কারণেই প্রতিবেশী মিয়ানমারের নাগরিকদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। এই বিপুলসংখ্যক মানুষের বাড়তি দায়িত্ব বাংলাদেশের জন্য অবশ্যই বড় বোঝা। এ অঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি, স্থিতি এবং নিরাপত্তার জন্য রোহিঙ্গা ইস্যুর রাজনৈতিক সমাধান অপরিহার্য মনে করছি।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে এবার জট খুলুক
Previous article
Next article
আরো দেখুন
দুদক টালমাটাল
সবাই একবাক্যে স্বীকার করেন যে বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রধান অন্তরায় দুর্নীতি। কিন্তু স্বাধীনতার পাঁচ দশক পার করে এসেও আমরা সেই দুর্নীতির লাগাম টানতে পারিনি, বরং...
ভিক্ষুকের সংখ্যা বাড়ছে
আমরা অনেকেই হয়তো লক্ষ করছি না, কিন্তু রাজধানীতে ভিক্ষুকের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। হয়তো সারা দেশেই বাড়ছে। রাজধানী ঢাকার ফুটপাত, রাস্তা, ট্রাফিক সিগন্যাল, যানজটের স্থান,...