দেশে ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর ঘটনা নতুন নয়। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ইউএস বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগে তুলকালাম ঘটেছে। নিহতের স্বজনের ওপর হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হামলায় নারীসহ ৯ জন আহত হয়েছেন। এ সময় ভিডিওচিত্র ধারণ করতে গেলে স্থানীয় এক গণমাধ্যমকর্র্মীকে বেধড়ক মারধর ও লাঞ্ছিত করা হয়। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এমন খবর প্রায় দেখি। ভুল চিকিৎসায় কতজনের মৃত্যু ঘটছে, এর সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বৈশ্বিক মৃত্যু ও প্রতিবন্ধিতার প্রধান ১০টি কারণের অন্যতম অনিরাপদ চিকিৎসাসেবা। প্রতি বছর নি¤œ ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে ভুল চিকিৎসায় ১ কোটি ৩৪ লাখ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ২৬ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এই পরিসংখ্যান উদ্বেগজনক। জানা গেছে, ইউএস বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রায় ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এছাড়া চিকিৎসকদের অবহেলা ও গাফিলতির অভিযোগও রয়েছে। মৃত শিশুটির পিতা শাহীন মিয়া জানান, তার স্ত্রী মাহফুজা আক্তার অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় ইউএস বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিয়ে আসছিলেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে প্রসবের সময় হলে হাসপাতালের এক চিকিৎসক ইনজেকশন দেন। এরপর এ হাসপাতালে চিকিৎসা হবে না বলে জানিয়ে দেন। পরে ঢাকার মগবাজারে আদ্্-দ্বীন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, শিশুটি মারা গেছে। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত জরুরি বলে মনে করি। আমাদের দেশে কাঠামোগত ক্ষেত্রে বেশ পরিবর্তন হচ্ছে। খুব দ্রুত নগরায়ণ হচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবার ব্যাপ্তি যেমন বেড়েছে, তেমনি চিকিৎসায় জনগণের খরচ বেড়েছে। মানুষের মৌলিক অধিকারের মধ্যে অন্যতম একটি হলো স্বাস্থ্যসেবা। দেশের মোট জনসংখ্যার বড় অংশই গ্রামে বসবাস করে। গ্রামের কৃষক ও হতদরিদ্র মানুষ তাদের চিকিৎসার জন্য নির্ভর করেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোর ওপর। কিন্তু এগুলো চিকিৎসকসহ নানা রকম সংকট ও অনিয়ম-অব্যবস্থাপনায় আক্রান্ত। তাই গ্রামীণ দরিদ্র মানুষগুলো প্রতিনিয়তই বঞ্চিত হচ্ছেন কাক্সিক্ষত চিকিৎসাসেবা থেকে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে বড় সংকট হলো লোকবল ও চিকিৎসা সরঞ্জামাদির। আবার যে সরঞ্জামাদি আছে তারও সদ্ব্যবহার হয় না, যে লোকবল নিয়োজিত আছে তাদেরও কর্মস্থলে যথাযথ দায়িত্ব পালন নিশ্চিত হচ্ছে না। ভুল চিকিৎসা বা চিকিৎসায় অবহেলার শিকার ব্যক্তির স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখা এবং বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) কাছে অভিযোগ জানানোর সুযোগ রয়েছে। তবে এ বিষয়টি জানা নেই অনেকের, নেই সচেতনতা। দুঃখজনক বাস্তবতা হলো- যারা অভিযোগ করেন, বিচারের আশায় তাদের কেটে যায় দীর্ঘ সময়। বিএমডিসিতে এ বিষয়ে অভিযোগের তালিকা দীর্ঘ হলেও নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে দেখা যায় ধীর গতি। চিকিৎসকের অবহেলায় মৃত্যুর অভিযোগেও সর্বোচ্চ শাস্তির নজির নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, সঠিক রোগ নির্ণয় ও দক্ষতার অভাবেই সাধারণত ভুল চিকিৎসা হয়ে থাকে। কখনো কখনো ভুল ওষুধ সেবন, ক্ষতিকর ওষুধের মাত্রাতিরিক্ত ও দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহার, নিম্নমানের ওষুধ, ভুল অস্ত্রোপচার এবং প্রতারকের খপ্পরে পড়ার ঘটনাও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়ে আসছে। স্বাস্থ্য খাতে অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা রোধ করতে ঊর্ধ্বতন মহলের নজরদারি দরকার। আর অবহেলা বা ভুল চিকিৎসায় কোনো মৃত্যু দেখতে চাই না।
প্রসঙ্গ: ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যু
Previous article
Next article
আরো দেখুন
দুদক টালমাটাল
সবাই একবাক্যে স্বীকার করেন যে বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রধান অন্তরায় দুর্নীতি। কিন্তু স্বাধীনতার পাঁচ দশক পার করে এসেও আমরা সেই দুর্নীতির লাগাম টানতে পারিনি, বরং...
ভিক্ষুকের সংখ্যা বাড়ছে
আমরা অনেকেই হয়তো লক্ষ করছি না, কিন্তু রাজধানীতে ভিক্ষুকের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। হয়তো সারা দেশেই বাড়ছে। রাজধানী ঢাকার ফুটপাত, রাস্তা, ট্রাফিক সিগন্যাল, যানজটের স্থান,...