২৬শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ১১ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

ভর্তিতে জিপিএ শর্তের জালে বেসরকারি অনার্স কলেজ

প্রতিদিনের ডেস্ক
উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর গন্তব্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলো। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের উচ্চশিক্ষায় ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের একমাত্র ভরসা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু গ্রেড পয়েন্ট এভারেজ (জিপিএ) শর্তে ভর্তি হতে পারবে না অনেক শিক্ষার্থী। আর এ কারণে কলেজে কর্মরত অনার্স স্তরের নন-এমপিও শিক্ষকদের যৎসামান্য আয়ও কমে আসবে। এই পরিস্থিতিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ভর্তিতে জিপিএ শর্ত শিথিল করার দাবি জানিয়েছেন অনার্স-মাস্টার্স স্তরের শিক্ষকরা।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সের ভর্তিতে পরীক্ষার নিয়ম না থাকলেও, নতুন করে শর্ত দেওয়া হয়েছে— এসএসসি ও সমমান এবং এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ন্যূনতম জিপিএ ৩ পয়েন্টসহ দুই পরীক্ষায় ৬.৫ পয়েন্ট থাকতে হবে। ফলে অনেক শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারবেন না। আবার দুই পরীক্ষা মিলে ৬.৫ থাকলেও একটি পরীক্ষায় ন্যূনতম ৩ পয়েন্টের কম হলে সে আর ভর্তি হতে পারবে না।
এর আগে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সে ভর্তি আবেদনের যোগ্যতা ছিল এসএসসি ও এইচএসসিতে ন্যূনতম ২ করে ৪ পয়েন্ট। কিন্তু কয়েক বছর আগে পয়েন্ট বৃদ্ধি করে দুটি পরীক্ষায় ন্যূনতম ৩ করে মানবিক বিভাগের বিষয়গুলোয় মোট ৬.৫ এবং বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ৭ করা হয়। ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ থেকে ভর্তি পরীক্ষার নিয়ম পরিবর্তন করা হয়। এর বিরুদ্ধে তখন আন্দোলন করে শিক্ষার্থীরা। গত বছর (২০২৩) শিক্ষার্থীরা ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা শহরে আন্দোলন, মানববন্ধন ও উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। তবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এই শর্ত শিথিলের ব্যাপারে কোনও আগ্রহ দেখায়নি।
গত ২২ জানুয়ারি থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কলেজগুলোতে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তির আবেদন শুরু হয়েছে। এ অবস্থায় জিপিএ শর্ত শিথিল করার দাবি জানিয়েছেন অনার্স-মাস্টার্স স্তরের শিক্ষকরা।

অনার্স স্তরের শিক্ষকরা বলছেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অনার্সে ভর্তি কমিয়ে পাস কোর্সে ভর্তির ব্যাপারে উৎসাহিত করলেও শিক্ষার্থীদের এ ব্যাপারে আগ্রহ কম।
তাদের এই দাবির বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. মশিউর রহমান বলেন, ‘আমাদের আগের রেকর্ড অনুযায়ী এই পয়েন্টের নিচে যারা তারা এমনিতেই চান্স পায় না। একদিকে মানসম্মত উচ্চশিক্ষা চাইবো আবার ভর্তিতে পয়েন্ট শিথিল করবো, তা তো হয় না। ছাত্র ভর্তি করালে আমাদের লাভ, কিন্তু আমরা সেটা দেখছি না। আমরা দেখছি স্ট্যান্ডার্ড।’
বাংলাদেশ নিগৃহীত অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক পরিষদের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নয়ন কান্তি দাশ বলেন, আগে অনার্সের ভর্তি পয়েন্ট ছিল এসএসসি ও এইচএসসিতে ন্যূনতম ২, বর্তমানে তা বাড়িয়ে ন্যূনতম ৩ করা হয়। আর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় মোট পয়েন্ট মানবিকে ৬.৫, বিজ্ঞান ও ব্যবসা শিক্ষায় ৭ করা হয়; যা বিগত বছরে শর্ট সিলেবাসের কারণে সমস্যা না হলেও, এই বছরে তা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, এই বছরে পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষার জন্য পাসের হার ও জিপিএ আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। তাই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে চাইলে ভর্তি পয়েন্ট ন্যূনতম ২.৫ এবং মোট ৫.৫ বা ৬ করতে পারে। বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় পয়েন্ট বেশি হওয়ায় এসব শাখার শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা লক্ষ করা যাচ্ছে।
সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রসেনজিৎ রায় বলেন, যেখানে গুচ্ছ পদ্ধতিতে যেসব কলেজ ভর্তি পরীক্ষা নেয়, তাদের আবেদন পয়েন্ট ন্যূনতম ৬, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সের ভর্তিতে মোট ৫ পয়েন্ট প্রয়োজন, সেখানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যূনতম ৬.৫ এবং ৭, যা অযৌক্তিক। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত গ্রামের শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে পয়েন্ট কমানো।
প্রসঙ্গত, বেসরকারি কলেজে পাঠদানরত অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকরা এমপিও বঞ্চিত। ২০২০ সালে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি আশ্বাস দিলেও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অসম্মতির কারণে তারা এমপিওভুক্ত হতে পারেননি। শিক্ষার্থীদের টিউশন ফির সামান্য অর্থ কলেজ থেকে যা দেওয়া হয়, তা-ই শিক্ষকদের আয়ের একমাত্র পথ।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়