২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

রমজানে বাজার স্থিতিশীল থাকুক

পবিত্র রমজান মাসে নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। কিন্তু অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়া চালের দাম কমানোর বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে বললেও উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। নির্দিষ্ট ও নিম্নআয়ের মানুষের জন্য স্বস্তির কোনো খবর নেই। উপরন্তু রমজানের আগে চিনি, খেজুর, আলু, পেঁয়াজ, চাল ও ভোজ্যতেল আগের তুলনায় বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতি বছরই সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের বাজার মনিটরিং চলে। এরপরও বাজার নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয় না। যথারীতি পণ্যের দাম বেড়েছেই। দৃশ্যমান শাস্তির ব্যবস্থা না নিলে এবারো তার ব্যতিক্রম হবে না। রমজানের বাজার নিয়ে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম বলেন, নিত্যপণ্যের বাজারে যাতে কোনো ধরনের সরবরাহ ঘাটতি দেখা না দেয়, সেটি নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করছি। বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে দামও নিয়ন্ত্রণে থাকবে। রমজানে প্রয়োজনীয় চিনি, তেল, ডাল যথেষ্ট মজুত আছে। চাল মজুত আছে ১৭ লাখ টন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাজারে যে পরিমাণ পণ্য মজুত আছে তাতে রোজা সামনে রেখে জিনিসপত্রের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। তবে কারসাজি করে যদি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ানো হয়; তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি। বলেন, যত বড় গ্রুপ ও কোম্পানি হোক, দামে কারসাজি হলে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বক্তব্য, রমজানে সব পণ্যেরই চাহিদা দ্বিগুণ বেড়ে যায়। এই সুযোগে মজুতদাররা সুবিধা ভোগ করে। ভোক্তা অধিকার মজুতদারদের বিরুদ্ধে এবার কঠোর ব্যবস্থা নেবে। ভোক্তা অধিকার গোডাউনগুলোতে অভিযান চালাচ্ছে। ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান বলছেন, জরিমানা করা বাদ দিয়ে যারা সিন্ডিকেট ও বাজার কারসাজি করছেন তাদের জেলে পাঠাতে হবে। না হলে বাজারে এ অরাজকতা থামানো যাবে না। বিগত কয়েক বছরের তথ্য ঘেঁটে দেখা গেছে, প্রতি বছর রমজান এলেই জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়। এমনকি কিছু পণ্যের দাম ক্রেতার নাগালের বাইরে চলে যায়। অসাধু ব্যবসায়ীরা যেন ওঁৎ পেতে থাকেন এ মাসের জন্য। প্রশাসনও নড়েচড়ে বসে। সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া হয় নানা পদক্ষেপ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব পদক্ষেপ-প্রতিশ্রæতি থেকে যায় কাগজে-কলমে। বাস্তবে কার্যকর হয় না। বাস্তব সত্য হচ্ছে, বাজারের ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পরিপূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। তবে বাজার নিয়ন্ত্রণে টিসিবির মাধ্যমে খোলাবাজারে পণ্য বিপণন, বাজার মনিটরিং ইত্যাদি যেসব পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে এগুলো যেন যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। এর বাইরে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বাজার পরিস্থিতি তদারকি অব্যাহত রাখতে হবে। কাজেই সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাব, ক্রমাগত দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি প্রতিরোধ করে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় কীভাবে স্বস্তি ফিরিয়ে আনা যায়, সেদিকে নজর রাখুন। সর্বোপরি বর্তমান ত্রাহি পরিস্থিতি অনুকূলে না এলে এর প্রভাব অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক উভয় দিক থেকেই সমানভাবে সামনে আসার শঙ্কার কথা উড়িয়ে দেয়া যায় না।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়