রাজধানীর গণপরিবহনে ই-টিকেটিং পদ্ধতি ছিল এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। ভাড়া প্রদানের পর কন্ডাক্টর পজ মেশিন থেকে সমপরিমাণ মূল্যের টিকেট দিচ্ছিলেন বাসের যাত্রীদের। ভাড়া নৈরাজ্যের একটা বিহিত হয়েছে ভেবে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন যাত্রীরা। কিন্তু স্বস্তির দিনগুলো বেশিদিন রইল না। রাজধানীর গণপরিবহন থেকে উধাও হয়ে গেল ই-টিকেটিং পদ্ধতি। যাত্রীর কাছ থেকে আগের নিয়মে ভাড়া আদায় করছে কন্ডাক্টর। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জাপানের মতো উন্নত দেশগুলোয় গণপরিবহনে ই-টিকেটিং ব্যবস্থা সফলতার সঙ্গেই পরিচালিত হচ্ছে। এসব দেশে ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্যের কথা শোনা যায় না। এমন সফল উদাহরণ দেখেই বাংলাদেশেও ই-টিকেটিং চালু করার উদ্যোগ নেয়া হয়। অথচ পরিবহন মালিক সমিতি নিজ উদ্যোগে ই-টিকেটের মাধ্যমে ভাড়া আদায়ের পদ্ধতি চালু করলেও এখন সরজমিন নগরীর বিভিন্ন রুটের বাসে উঠে দেখা গেছে, ই-টিকেট ব্যবহারের নাম-নিশানাও কোথাও নেই। এ বিষয়ে পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা বলছেন, আপাতত বাসে পজ মেশিন ব্যবহার করে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে না। তবে অচিরেই আবার সব বাসে ই-টিকেটিং পদ্ধতি চালু হবে। সব কন্ডাক্টরের হাতে আবারো পজ মেশিন তুলে দেয়া হবে। গতকাল প্রকাশিত ভোরের কাগজের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, কন্ডাক্টররা পজ মেশিন ব্যবহারে আগ্রহী নয়। তারা বলছে এই মেশিন ব্যবহার করাও ঝামেলার। মেশিনের জন্য সময় নষ্ট হয়। সব সময় গলায় ঝুলিয়ে রাখাও কষ্টকর। সড়ক যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়মনীতি অনেক আছে। সব নিয়মের আংশিক যদি সবাই মানত; তাহলে সড়কের বিশৃঙ্খলা অনেক কমে যেত। মূলত ভাড়া নৈরাজ্য ঠেকাতেই পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতারা বিআরটিএর সঙ্গে আলোচনার পর ই-টিকেটিং পদ্ধতি চালু করে। কিছুদিন চলার পর আবার ই-টিকেটিং পদ্ধতি হাওয়া হয়ে গেছে। পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা নিজেদের ইচ্ছামতো পরিবহন খাতের নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা সরকারি আইন পর্যন্ত মানছে না। যাত্রীরা প্রতিবাদ করতে করতে এখন ধৈর্য হারিয়ে ফেলেছে। আইন মানানোর ব্যাপারে পুলিশের ভূমিকা সব সময় একপক্ষীয়। তারা সড়কে কঠোর অবস্থান নিলে ই-টিকেটিং পদ্ধতি, সড়ক নিরাপত্তা আইন-২০১৮ বাস্তবায়ন, ট্রাফিক আইন অনুসরণ করতে পরিবহন চালকদের বাধ্য করতে পারে। বিআরটিএর উদাসীনতার বিষয়টি নতুন করে বলার প্রয়োজন পড়ে না। এই দুই সংস্থার কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে অভিযোগের শেষ নেই। ডিজিটাল বাংলাদেশের পথ ধরে দেশ এখন স্মার্ট বাংলাদেশের পথে হাঁটছে, ঠিক এমন সময় ই-টিকেটিং ব্যবস্থা সফল না হওয়া অপ্রত্যাশিত একটি বিষয়। বস্তুত আমাদের দেশে গণপরিবহনে কোনো সিস্টেমই বেশি দিন টিকে থাকতে পারে না। সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ট্যাক্সি ক্যাবে মিটার চালু হলো, বেশিদিন টিকল না। ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য হয় বলে বাসগুলোয় ভাড়ার চার্ট টানিয়ে দেয়া হলো, সমাধান হলো না। বেসরকারি খাতে অ্যাপভিত্তিক মোটরসাইকেল রাইডিং শুরু হলো, প্রথমদিকে ভালোভাবে চললেও স্বস্তির দিন বেশিদিন রইল না। এরই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ ই-টিকেটিংও সফলতার মুখ দেখছে না। আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত মানসিকতাই কি এজন্য দায়ী? মূলত একটি পদ্ধতি চালু করার পর তা মনিটরিংয়ের বিকল্প নেই। কিন্তু আমাদের দেশে কেউ তাদের নিজ নিজ সেক্টরের বিষয়গুলো আর মনিটরিং করে না। মনিটরিং থাকলে কোনো নিয়মই উধাও হয়ে যেত না।
ভাড়া নৈরাজ্য দমনে ই-টিকেটিং প্রয়োজন
Previous article
Next article
আরো দেখুন
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ইতিবাচক হোক
বাংলাদেশের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব পর্যায়ে আলোচনায় অংশ নিতে গত সোমবার সকালে ঢাকায় আসেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি। সন্ধ্যায় তিনি নয়াদিল্লি ফিরে যান। ঢাকা...
দুদক টালমাটাল
সবাই একবাক্যে স্বীকার করেন যে বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রধান অন্তরায় দুর্নীতি। কিন্তু স্বাধীনতার পাঁচ দশক পার করে এসেও আমরা সেই দুর্নীতির লাগাম টানতে পারিনি, বরং...