‘ক্লোজ দ্য কেয়ার গ্যাপ’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বিশ্ব ক্যান্সার দিবস পালিত হয়েছে। ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি এই ঘাতক ব্যাধির প্রতিকারে ব্যবস্থা নিতে সরকার ও ব্যক্তিবিশেষের উদ্যোগে বিশ্ব ক্যান্সার দিবস পালিত হয়ে আসছে। গবেষণা বলছে, দেশে প্রতি বছর প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন। বিশ্বেও ক্যান্সার আক্রান্তের হার বেড়েই চলেছে। উন্নত পুঁজিবাদী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের মতো দেশে ক্যান্সারে মৃত্যুর হার বেশি। এর জন্য খাদ্যাভ্যাস আর অনিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন, খাদ্যে ভেজাল আর বায়ুদূষণকে দায়ী করছেন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা। তবে উদ্বেগের কথা হচ্ছে, আক্রান্তদের বেশির ভাগই চিকিৎসার আওতার বাইরে থাকছে। জানা গেছে, গত দুই দশকে দেশে সরকারি খাতে ক্যান্সার চিকিৎসার আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি এসেছে। তারপরও এখনো পর্যন্ত দেশের ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসা পুরোপুরি ঢাকাকেন্দ্রিক। ঢাকার মহাখালীতে ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল একমাত্র বিশেষায়িত সরকারি হাসপাতাল হিসেবে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে। তবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ মোট আটটি প্রতিষ্ঠানে এখন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিলেও নেই প্রয়োজনীয় রেডিওথেরাপির আধুনিক যন্ত্রপাতি। ঢাকার বাইরে জেলা বা উপজেলা পর্যায়ে নেই ক্যান্সার নির্ণয় ও চিকিৎসার কোনো সুযোগ। ব্যয়বহুল চিকিৎসা আর ঢাকাকেন্দ্রিক সেবার কারণে অনেকেই বঞ্চিত হচ্ছেন চিকিৎসাসেবা থেকে। ক্যান্সার চিকিৎসার সবচেয়ে বড় বাধা হলো সঠিক সময়ে রোগটি নির্ণয় না হওয়া। ক্যান্সারের চিকিৎসা মূলত সার্জারি, কেমোথেরাপি, ইমিউনোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি। প্রায় সব ধরনের ক্যান্সারেই ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে এই চিকিৎসাগুলো দেয়া হয়। কখনো একটি, কখনো একাধিক চিকিৎসা পালা করে চলে। এসব চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তুলনামূলক বেশি। এ রোগে আক্রান্ত বেশির ভাগ রোগীকেই বিভিন্ন মেয়াদে রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপি, টেলিথেরাপি দিতে হয়। এসব থেরাপি দেয়ার মেশিনগুলোর বেশির ভাগই অকেজো ও ব্যবহার অনুপযোগী। গতকাল প্রকাশিত ভোরের কাগজের প্রতিবেদনে জানা যায়, খরচের চেয়েও দেশে চিকিৎসা করানোর প্রতিটি ক্ষেত্রে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন রোগী ও তার স্বজনরা। সরকারি হাসপাতালে বিভিন্ন টেস্ট করাতে গেলে দেখা যাচ্ছে মেশিন নষ্ট। আবার মেশিন সচল থাকলেও সেখানে দীর্ঘ সিরিয়াল। এমনো হচ্ছে, সিরিয়াল দিচ্ছে ৩ মাস পর। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ সরকারি হাসপাতালে টেস্টের সিরিয়াল পাওয়া যায় না সহজে। বাধ্য হয়ে বেসরকারি হাসপাতালে অধিক ব্যয়ে নিতে হচ্ছে সেবা। এসবের মধ্যে ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীরাই সবচেয়ে বেশি বৈষম্যের শিকার দেশে। ক্যান্সারের মতো দুরারোগ্য ব্যাধির চিকিৎসায় দেশের স্বাস্থ্যসেবার এই করুণ বাস্তবতা পীড়াদায়ক। আমরা আশা করি, ক্যান্সার চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিদ্যমান দৈন্যদশার অবসান ঘটাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে স্বাস্থ্য বিভাগ জরুরি ভিত্তিতে এগিয়ে আসবে। ক্যান্সার চিকিৎসা ব্যয়বহুল ও দীর্ঘমেয়াদি একটি প্রক্রিয়া। অজ্ঞতা, অসচেতনতা এবং ক্যান্সার নির্ণয় ও চিকিৎসা সুবিধা সুলভ না হওয়ায় রোগ ধরা পড়ে দেরিতে। যার কারণে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আশানুরূপ কোনো ফল পান না রোগীরা। এ অবস্থার পরিবর্তনে অবশ্যই রাষ্ট্রকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
ক্যান্সার রোগীর চিকিৎসা নিশ্চিত হোক
Previous article
আরো দেখুন
দুদক টালমাটাল
সবাই একবাক্যে স্বীকার করেন যে বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রধান অন্তরায় দুর্নীতি। কিন্তু স্বাধীনতার পাঁচ দশক পার করে এসেও আমরা সেই দুর্নীতির লাগাম টানতে পারিনি, বরং...
ভিক্ষুকের সংখ্যা বাড়ছে
আমরা অনেকেই হয়তো লক্ষ করছি না, কিন্তু রাজধানীতে ভিক্ষুকের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। হয়তো সারা দেশেই বাড়ছে। রাজধানী ঢাকার ফুটপাত, রাস্তা, ট্রাফিক সিগন্যাল, যানজটের স্থান,...