প্রতিদিনের ডেস্ক
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, দেশে টিআইএনধারী ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়লেও সেই অনুপাতে বাড়ছে না রিটার্ন জমার সংখ্যা। বিদায়ী (২০২৩-২৪) অর্থবছর শেষে রিটার্ন জমা দিয়েছে মাত্র ২৪ হাজার ৩৮১টি প্রতিষ্ঠান, যা মোট প্রতিষ্ঠানের সাড়ে ৮ শতাংশের (৮.৪৫) কম। ৯২ শতাংশেরও বেশি প্রতিষ্ঠান কর দেয়নি।
রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসের (আরজেএসি) তথ্যমতে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নিবন্ধিত পাবলিক ও প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির সংখ্যা ২ লাখ ৮৮ হাজার ৪৬৬টি। তথ্যানুযায়ী, এরমধ্যে ২ লাখ ৬৪ হাজার ৮৫টি কোম্পানি কর দেয়নি।
এনবিআর জানায়, নিবন্ধন নেওয়ার পর লাভ-লোকসান যাই হোক, আয়কর রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক। তবে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস (জুলাই-ডিসেম্বর) পর্যন্ত আয়কর রিটার্ন জমা দেয়নি।
এনবিআর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনেক প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন নিয়ে রাখলেও ব্যবসা শুরু করেনি। আবার অনেক প্রতিষ্ঠান ছলচাতুরি করে রিটার্ন দেয় না। অনেকে ব্যবহার করছে ভুয়া ঠিকানা। ফলে সরকার হারাচ্ছে বড় অঙ্কের রাজস্ব।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের আয়কর বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রয়োজনের তুলনায় জনবল কম হওয়ায় কর ও রিটার্ন জমা না দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেরি হচ্ছে। এত বেশি প্রতিষ্ঠানকে করের আওতায় আনা চ্যালেঞ্জের। রাজস্ব আদায় বাড়ানোর স্বার্থে বিভিন্ন পদক্ষেপ দেওয়া হচ্ছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত আয়কর খাতের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬০ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে ৫১ হাজার ৮২৪ দশমিক ৪৪ কোটি টাকা। কোম্পানি করদাতাদের কাছ থেকে কর আদায় করতে পারলে সহজেই এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারতো এনবিআর।
কর আদায় ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে প্রতি বছরই মোটা অংকের টাকা বকেয়া থাকছে। রাজস্ব বোর্ডের আয়কর বিভাগে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারছে না। সূত্র জানায়, ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত বকেয়া করের পরিমাণ ছিল ৫৫ হাজার ২৬১ কোটি টাকা। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সেই বকেয়ার মধ্যে ১ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা আদায় করতে পেরেছে এনবিআর। বর্তমানে এ বকেয়া টাকার পরিমাণ ৫৩ হাজার ৩২১ কোটি টাকা।
এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিটের (এলটিইউ) কর কমিশনার মো. ইকবাল বাহার বলেন, আয়করে সম্মানজনক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার জন্য ব্যবসায়ীদের সহায়তা প্রয়োজন। এজন্য ব্যবসায়ীদের অবিতর্কিত বকেয়া পরিশোধ করতে হবে। এক্ষেত্রে রাজস্ব বিভাগ সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।
আয় কমে যাওয়া ও নথিপত্রের জটিলতার কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান রিটার্ন জমা দেয় না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, বর্তমানে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ২০ শতাংশ, তালিকাবহির্ভূত কোম্পানি ২৭ দশমিক ৫০ শতাংশ, তালিকাভুক্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ৩৭ দশমিক ৫০ শতাংশ, তালিকাবহির্ভূত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ৪০ শতাংশ, মার্চেন্ট ব্যাংক ৩৭ দশমিক ৫০ শতাংশ, সিগারেট কোম্পানি ৪৫ শতাংশ, মোবাইল অপারেটর যথাক্রমে ৪০ ও ৪৫ শতাংশ করপোরেট কর বিদ্যমান আছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলোর রিটার্ন না দেওয়ার ঘটনা দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে উদ্বেগজনক। প্রতিষ্ঠানগুলো সময়মতো রিটার্ন দাখিলে কেন ব্যর্থ হচ্ছে, তা নিয়ে এনবিআরের গবেষণা ও করণীয় ঠিক করা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে চিকিৎসা প্রযুক্তি বিক্রয় প্রতিষ্ঠান অর্কিড ডেন্টালের স্বত্বাধিকারী কামরুজ্জামান বলেন, করোনা পরবর্তী ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের অনেক ক্ষতি করেছে। ডলার সংকটে অনেকেই পণ্য আনতে পারছেন না, মুনাফাও করতে পারছেন না। ছোট ব্যবসায়ীরাই করের বাইরে থাকছেন।
করপোরেট করদাতাদের রিটার্ন দাখিলের প্রক্রিয়া আরও সহজ করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ডিজিটাল ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করা দরকার। করদাতাদের এক বছরের মধ্যে ২৬ ধরনের নথি জমা দিতে হয়। এটা অনেক জটিল ও সময়সাপেক্ষ। রিটার্ন দাখিলে অটোমেশন দরকার।