মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের মুখে নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা। তারা মিয়ানমারের বিদ্রোহী সশস্ত্র দল আরাকান আর্মির সঙ্গে সংঘর্ষের মধ্যেই পালিয়ে আসে। এমন অবস্থায় আমাদের সতর্কতা জরুরি। সীমান্তে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরো জোরদারের বিষয় সামনে আসছে। মিয়ানমারের ভেতরে কী হচ্ছে, সেখানকার পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে, তা নজর রাখতে হবে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চীন, ভারত, আশিয়ান বা থাইল্যান্ডের মতো দুই দেশের অভিন্ন বন্ধুদের কাজে লাগানোর উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। জানা গেছে, গত অক্টোবরে আরাকান আর্মি সামরিক বাহিনীবিরোধী সশস্ত্র জোট ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের অংশ হিসেবে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধের ঘোষণা দেয়। আরাকান আর্মি ইতোমধ্যেই দেশজুড়ে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর চাপে থাকা সেনাবাহিনীর ওপর একের পর এক আক্রমণ শুরু করে। গত ১১ সপ্তাহে চীনের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন অংশে ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের আক্রমণে পিছু হটে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। সর্বশেষ গত শনিবার মিয়ানমারের ভারতঘেঁষা পালেতোয়া শহরের মিওয়া ঘাঁটির শেষ সেনা চৌকিটি দখলে নেয় আরাকান আর্মি। ২০২০ সালে এ ঘাঁটিই ৪২ দিনের টানা লড়াইয়ের পর দখল করতে ব্যর্থ হয় বিদ্রোহীরা। ইতোমধ্যে এসব এলাকা থেকে কয়েকশ মিয়ানমারের সৈনিক পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। তবে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্য পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের ঘটনা এটাই প্রথম, যা উদ্বেগেরও বিষয়। বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী প্রদেশ রাখাইনসহ মিয়ানমারের বিভিন্ন অঞ্চলে দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির তুমুল লড়াই চলছে। গণতন্ত্রপন্থিদের আক্রমণে দেশটির সামরিক বাহিনী এখন বেশ নাজুক অবস্থায় আছে। অর্থনৈতিক পরিস্থিতিও বেশ শোচনীয়। রাজনৈতিকভাবে হতবিহ্বল হয়ে সামরিক বাহিনী গায়ের জোরেই ক্ষমতা ধরে রেখেছে। এদিকে মিয়ানমারে গোলাগুলির শব্দে সীমান্তে বাংলাদেশ অংশে জনমনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। অনেকে সীমান্ত এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। এ অবস্থায় সীমান্ত এলাকায় সতর্কতা বৃদ্ধি করেছে বাংলাদেশ। উদ্বেগের বিষয়, রাখাইন রাজ্যে উত্তেজনা বিরাজ করলে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করলেও বিষয়টিকে মিয়ানমার সব সময় এড়িয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে বারবার বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে বাংলাদেশের অবস্থান এবং সমাধানের জন্য বক্তব্য তুলে ধরেছেন। অনেক দেশ রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নিলেও ভূরাজনীতির কারণে অনেক দেশ এ ব্যাপারে বিরত থেকেছে। এর আগে আমরা দেখেছি, বাংলাদেশের ভূখণ্ডে মর্টারশেল নিক্ষেপের ঘটনায় সীমান্তরেখায় জড়ো হয়েছিল লাখো রোহিঙ্গা। সীমান্তে মিয়ানমারের মর্টারশেল নিক্ষেপ, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে প্রবেশের চেষ্টা, যুদ্ধাবস্থার সৃষ্টি- এটাকে আগ্রাসন হিসেবেই দেখেছে বাংলাদেশ। নতুন করে সীমান্ত দিয়ে আর একটি রোহিঙ্গাও যেন বাংলাদেশে প্রবেশ না করতে পারে তার জন্য নজরদারি বাড়াতে হবে। সে জন্য সীমান্তরক্ষীদের সতর্ক থাকতে হবে। মিয়ানমারের রাখাইনে চলমান উত্তেজনার দ্রুত প্রশমন হওয়া প্রয়োজন মনে করছি। পাশাপাশি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে শান্তিপূর্ণ তথা কূটনৈতিক পন্থায় সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আন্তরিক ভূমিকাও জরুরি। বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতায় এখন চীন ও ভারতকে গুরুত্বের মধ্যে নিতে হবে।
কৌশলী কূটনৈতিক পদক্ষেপ জরুরি
Previous article
Next article
আরো দেখুন
অর্থনীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ
গত ১৫ বছরে দেশে অনেক উন্নয়নকাজ হয়েছে। কিন্তু সেসবের কত শতাংশ নিয়ম মেনে হয়েছে, কতটা টেকসই, তা নিয়ে রয়েছে অনেক প্রশ্ন। বিগত সরকারের অর্থে...
প্রবাসীদের অবৈধ হওয়ার শঙ্কা
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবাস আয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম উৎস জনশক্তি রপ্তানি। একসময় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার ছিল সৌদি আরব। এর পাশাপাশি...