অনিন্দ্য নূর
ডানাহীন কালো বর্ণ
বিদীর্ণ হৃদয়ে ডানাহীন পাখিদের ভিড়
দু’চোখে ঝাপসা আলোয় নীল মৃত্যুর প্রতিচ্ছবি—
জীবনের ভারে—বুক থেকে জ্যোৎস্না খসে যায়
শুধুই নিস্ফল পার্থিব ভুলের এই সমীকরণ।
সন্ধ্যাতারার ক্যাফেইনের পথ ভোলা পথে
উন্মাদ বাউল পথিক বাড়ছে ক্রমাগত—
শিরে শিরে সেজদাহর অকৃত্রিম তিলক
অন্তঃসারশূন্য অন্তরে আরেক মহাজীবনের ডাক।
অলৌকিক আরাধ্য আলোর স্নানে ভাঙবে
পৃথিবীর কোটি বছরের নির্মম ধ্যান।
এই স্পর্শহীন শর্তে বড় হচ্ছে মানুষ—
বাড়ছে জীবনের সহস্র মহাকাব্য, উপন্যাস আর
গদ্যের কালো বর্ণের পুঞ্জীভূত অন্ধকার—
মানুষ কি পারবে এত প্রাণের মূল্য দেবার?
****
ধ্রুপদী প্রার্থনা
তোমায় কাব্য করে লেখি কী করে—
এই স্বপ্ন পোড়া চোখ—প্রশান্ত উৎকলিকার বুক
একমুঠো জ্যোৎস্নার দামে বিকিয়ে দিয়েছি
অমোঘ দ্বাদশী শুক্লপক্ষের নিলামে।
পরিশ্রান্ত রাজাধিরাজ আমার আয়নাঘরে
মহাকাব্যিক ডানাহীন পাখিদের ছন্দহীন শবযাত্রা।
পারিজাত অব্যক্ত সুরের ব্যঞ্জনায় দিগভ্রান্ত
আমাদের পার্থিব বোধহীন কর্ণকুহর।
আকাশ থেয়ে চুইয়ে চুইয়ে পড়া অলৌকিক
খাদ্যের ঘ্রাণে দ্বিগুণ প্লাবিত পাঁজরের অগ্নিচুল্লী।
উন্মাদ আলিঙ্গনে নিষ্প্রাণ ঠোঁটে লেগে আছে
নীলাম্বরের ঠিকানায় স্বাক্ষরিত মৃত্যুর দলিল।
ধকধক করে হৃৎপিণ্ড জানান দিচ্ছে অবিরত
তাবৎ পৃথিবীসুদ্ধ গিলে খাওয়ার পরোয়ানা।
বাতাসে-নিঃশ্বাসে দ্রোহের বীণা বাজে
কঙ্কালে কঙ্কালে প্রতিরোধের মহা দূর্গ।
তবুও—সহস্র গরল প্রাণের আরক্ত প্রার্থনায়
এই দানবীয় কাব্যিক শহর হয়ে উঠুক—
‘জরা আর দারিদ্র্যমুক্ত সভ্য উপাখ্যান’
****
অবেলায়
তোমাকে আপন নক্ষত্রের মতো মনে পড়ে
কত আলো নিঃশেষ করে খেলেছি কত খেলা
আজ অনাড়ম্বর দিনে অতীত পৃষ্ঠাজুড়ে
কত গান আছড়ে পড়ে—হায় কত অবেলা।