প্রতিদিনের ডেস্ক
বাংলাদেশের নার্সিং খাতকে বিশ্বমানের করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার লিলি নিকোলস তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দপ্তরে এ সৌজন্য সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের সচিব আজিজুর রহমান এসময় উপস্থিত ছিলেন।
সাক্ষাৎ শেষে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সাক্ষাৎকালে কানাডার হাইকমিশনার কানাডা সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক ও উচ্চতর মানের নার্স টিচার্স ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন করাসহ স্বাস্থ্যখাত সংক্রান্ত নানান বিষয়ে আলোচনা করেন।
কানাডায় বেশি বয়স্ক মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, যাদের ভালো চিকিৎসার জন্য দেশটিতে দক্ষ নার্স, চিকিৎসক ও টেকনোলজিস্ট দরকার। হাইকমিশনার ভবিষ্যতে বাংলাদেশ থেকে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
তবে এক্ষেত্রে নার্স বা স্বাস্থ্যকর্মীদের আন্তর্জাতিক মানের দক্ষ হতে হবে। এজন্য কানাডা সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে একটি উন্নত ও বিশ্বমানের নার্স টিচার্স ট্রেনিং সেন্টার স্থাপনের আগ্রহ প্রকাশ করেন লিলি নিকোলস।
এর পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বাংলাদেশে পর্যাপ্ত সংখ্যক দক্ষ নার্স, চিকিৎসক রয়েছে বলে হাইকমিশনারকে আশ্বস্ত করেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসময় হাইকমিশনারের উদ্দেশে বলেন, বাংলাদেশে এ মুহূর্তে ৯৫ হাজার শিক্ষিত নার্স আছেন, যারা বিশ্বের যে কোনো দেশের স্বাস্থ্যসেবায় ভূমিকা রাখতে পারবেন। তাদের আরও বেশি দক্ষ ও বিশ্বমানের করতে সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত করতে হবে। এজন্য দক্ষ প্রশিক্ষকও দরকার হবে আমাদের।
তিনি বলেন, এক্ষেত্রে কানাডা সরকার বাংলাদেশে যে উন্নতমানের টিচার্স ট্রেনিং সেন্টার করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তা প্রশংসনীয়। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকেও নার্সিং পেশাকে যুগোপযোগী করতে বেশ কিছু পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের উদ্যোগের পাশাপাশি কানাডা সরকারের সহায়তা পেলে বাংলাদেশের নার্সিং খাতকে আন্তর্জাতিক মানের করা হবে।
কানাডীয় হাইকমিশনার বাংলাদেশে চিকিৎসা ব্যবস্থায় বিশেষ করে প্রাইভেট মেডিকেলে অধিক সংখ্যক সিজারিয়ান বেবি জন্ম নেয় বলে উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে তিনি বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ ও গ্রামের মেয়েদের জন্য স্যানিটারি ন্যাপকিন সহজলভ্য করার প্রসঙ্গেও কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে বর্তমানে ১৪ হাজারের বেশি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছেন বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
একই সঙ্গে দেশের প্রায় চার হাজার ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে গ্রামে থাকা মেয়েদের বিনামূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন প্রদানসহ গ্রামীণ মায়েদের জন্য ইনস্টিটিউশনাল ডেলিভারি সিস্টেম সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোকে ২৪ ঘন্টা সার্ভিসের আওতায় নিয়ে আসতে কাজ করা হচ্ছে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।
বাংলাদেশে স্বাস্থ্যখাতে বাজেট মাত্র ১ শতাংশ আর কানাডার স্বাস্থ্যখাতে বাজেট ১২ শতাংশ। বাংলাদেশ এত কম বাজেটে এত বিরাট সংখ্যক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পারবে কি না এবং ভবিষ্যতে কানাডা সরকারের কোনো ধরনের সহায়তা লাগবে কি না, সে ব্যাপারে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে কানাডীয় হাইকমিশনার জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে আরও কিছু পরিকল্পনা হাতে নিয়ে আরেক দফা বৈঠকে বসার আমন্ত্রণ জানান।
এসময় উভয়ে পরবর্তী সময়ে আরও এক দফা সাক্ষাতের ব্যাপারে একমত পোষণ করেন।

