প্রতিদিনের ডেস্ক
‘আমাদের ঐতিহ্যবাহী স্বর্ণালঙ্কার সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। এগুলো বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, সমন্বয়ের মাধ্যমে একত্রিত করতে প্রয়োজন স্বর্ণালঙ্কার ইনস্টিটিউট। পাশাপাশি ঐতিহ্য ধরে রাখতে নিজস্ব ডিজাইনের স্বর্ণালঙ্কারগুলো সংরক্ষণ রেখে সেসব ডিজাইনগুলো দিয়ে জিআই সনদ নিতে হবে।’
বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার (আইসিসিবি) নবরাত্রি হলে বাজুস জুয়েলারি সামিট-২০২৪ উপলক্ষে ‘আমাদের অলংকার আমাদের ঐতিহ্য’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা।
তারা বলেন, বর্তমানে দেশে বিনিয়োগের নিরাপদ জায়গা হলো স্বর্ণ খাত। জুয়েলারি শিল্পে বিনিয়োগ করা মানে ভবিষ্যতে জন্য বিনিয়োগ। দিন দিন এ শিল্পে বিনিয়োগ বাড়ছে। তাই নারীদেরও এ শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে। ভবিষ্যতে আমাদের দেশটা হবে সোনার একটি বড় জায়গা। যেখান থেকে স্বর্ণালঙ্কার রপ্তানি হবে।
বক্তারা আরও বলেন, বাংলাদেশে উৎপাদিত স্বর্ণালঙ্কার বিদেশে রপ্তানি করতে হলে আইনি বা নীতিতে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। সরকার এ বিষয়ে পদক্ষেপ দেবে। একই সঙ্গে এ শিল্পে সরকার যদি ভ্যাট-ট্যাক্স কমায় তাহলে সরকারের রাজস্ব আয়ও বাড়বে।
এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদ প্রফেসর এমেরিটাস চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী, ইউনেস্কো আর্টিস্ট ফর পিস ও বিশ্ববরেণ্য ফ্যাশন ডিজাইনার বিবি রাসেলসহ অতিথিদের নিয়ে ফিতা কেটে তিনদিনের এ ফেয়ার উদ্বোধন করেন বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ জুয়েলার্স এসোসিয়েশনের (বাজুস) প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীর।
বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ জুয়েলার্স এসোসিয়েশনের (বাজুস) প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীর সভাপতিত্বে সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদ প্রফেসর এমেরিটাস চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী, ইউনেস্কো আর্টিস্ট ফর পীস ও বিশ্ববরেণ্য ফ্যাশন ডিজাইনার বিবি রাসেল।
অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি, বাজুসের ব্রান্ড অ্যাম্বাসেডর মমতাজ বেগম, বসুন্ধরা গ্রুপের পরিচালক আহমেদ ইব্রাহিম সোবহান, খ্যাতিমান অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী, উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স (উই) সভাপতি নাসিমা আক্তার নিশা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এসময় অতিথিদের সম্মাননা স্মারক তুলেদেন বাজুস প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীর।
রফিকুন নবী বলেন, নারীদের সাথে স্বর্ণের সম্পর্ক বেশি। আমাদের সংস্কৃতির উপকরণ গুলো বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এগুলো সমন্বয়ের মাধ্যমে একত্রিত করতে হবে। আমরা ঐতিহ্য থেকে সরে যাওয়াতে অন্যান্য দেশ সে সুযোগটা নিচ্ছে। এ জন্য আজকে কথা হচ্ছে স্বর্ণালঙ্কার ইনস্টিটিউটের। এটা করতে পারলে আমাদের নিজস্ব যে সংস্কৃতি পশ্চিমা সংস্কৃতির কাছে হারিয়ে যাচ্ছে সেটা সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে। তাহলে আমাদের ঐতিহ্য সংরক্ষিত হবে।
তিনি বলেন, আমাদের দেশটা হবে সোনার একটি বড় জায়গা। যেখান থেকে স্বর্ণালঙ্কার রপ্তানি হবে। এজন্য একটি ইনস্টিটিউট প্রয়োজন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের এ শিল্প নিয়ে অনেক কাজ আছে। যদি ইনস্টিটিউট হয় তাহলে সকলে সেখানে যেতে পারবে। তবে ডিজাইনের দিকে বেশি জোড় দিতে হবে। অলংকার বলতে অলংকরণ সেটা মূলত ডিজাইন।
বিশ্ববরেণ্য ফ্যাশন ডিজাইনার বিবি রাসেল বলেন, আমার কাজ হলো যতো কারুশিল্প আছে সেগুলো দেখা। দেশের প্রতিটি জেলায় ভিন্ন ভিন্ন ডিজাইনের গহনা রয়েছে। সেগুলোকে তুলে আনতে হবে। আমি গহনা বিক্রি করে দেশের তাঁতশিল্পকে রক্ষা করছি। সোনা শুধু নারীর নয়, একটি সংসারের সম্পদ। আমি যেহেতু ডিজাইনার সেটা নিয়েই কথা বলবো, আমাদের যেটা আছে সেটাকে তুলে ধরতে হবে। প্রতিযোগী অনেক থাকবে। আমাদের নিজস্ব কিছু ডিজাইন আছে সেগুলোকে সংরক্ষণ করতে হবে। সে সব ডিজাইনগুলো দিয়ে জিআই সনদ নিতে পারি।
মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, আমি প্রথম এ ধরনের একটি মেলায় আসলাম। আমি ব্যবসায়ী বা ভালো ক্রেতাও নই। তারপরও প্রতিবছর কিছু না কিছু স্বর্ণালঙ্কার কিনে থাকি। প্রাচীণ কালে ছেলেরা বেশি গহনা পরতো। জুয়েলারিশিল্পে বিনিয়োগ করা মানে ভবিষ্যতে জন্য বিনিয়োগ। গার্মেন্টস খাতে যে উন্নতি হয়েছে সেটা আশপাশের দেশগুলো থেকে অনেক এগিয়ে গেছি। তাহলে সোনা কেন পিছিয়ে থাকবো।
তিনি বলেন, আমাদের নারীরা এখন বিদেশে গিয়ে স্বর্ণালঙ্কার কিনে থাকেন। আবার পাচারও হয়ে যাচ্ছে। সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। নারীরা নয় পুরুষরাও এখন সুন্দর সুন্দর গহনা পরেন। সোনার গ্রহণযোগ্যতা উত্তরোত্তর বাড়বে। সবার নাগালের মধ্যে যাতে আসে সে ধরনের ডিজাইন তৈরি করতে হবে।
সাবেক সংসদ সদস্য জিন্নাতুল বাকিয়া বলেন, নারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ স্বর্ণকার হিসেবে তৈরি করতে হবে। নারীরাই নারীদের কাজ ভালো বোঝেন। তাই এ কাজে নারীদের সম্পৃক্ত করতে হবে। সোনার দাম বাড়লেও চাহিদা কমেনি। দিন দিন এ সোনার দাম বাড়ছে। তাই সোনা কিনলে লোকসান নেই। সোনা আর জমি কিনলে লোকসান হয় না। এটা বৃদ্ধ বয়সের সম্বল।
মমতাজ বেগম বলেন, এজন্য প্রচারের জায়গাটা আরও বাড়াতে হবে। আমাদের কাজের সুযোগ করে দেবেন। পুরানো গহনার ব্যবহার সম্পর্কে আরও ভালো জানতে হবে।
বাজুসের সাধারণ সম্পাদক বাদল চন্দ্র রায় বলেন, সোনায় বিনিয়োগ আসলে একটা শক্ত কথা। কারণ আমি যখন ব্যবসায় আসিনি তখন সোনার দাম ছিল ১৪৫ টাকা। এখন সেই সোনার দাম দাঁড়িয়েছে এক লাখ টাকার বেশি। সোনার দাম কখনো কমবে না বরং বাড়বে। সোনা এমন একটা ধাতু যা মানুষের মধ্যে বন্ধন সৃষ্টি করে। এটাতে ইমশন কাজ করে। সোনাই একমাত্র বিপদের সঙ্গী। রাত ২টা বাজলেও সোনা দিয়ে টাকা পাওয়া যাবে। যেটা ব্যাংক থেকে পাওয়া যাবে না।
তিনি বলেন, আমাদের মূল বক্তব্য হচ্ছে কীভাবে এ শিল্পটাকে গড়ে তুলতে পারি। আমাদের প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীরের নেতৃত্বে গত তিন বছরে আমরা যে একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে পেরেছি এটা প্রশংসার দাবিদার। আগে আমরা এ রকম প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে পারিনি। তবে সরকারের সহযোগিতা থাকলে রপ্তানি পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাচ্ছি।
বাদল চন্দ্র বলেন, চামড়া ও পোশাকশিল্প রপ্তানি করছে। অথচ সোনা শিল্প একটা পুরোনো শিল্প তারপরও আমরা পিছিয়ে আছি। এখান থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। আজকে প্রধানমন্ত্রী স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছে। আমরাও এ শিল্পটাকে বাজুস প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীর নেতৃত্বে স্মার্ট শিল্পে নিয়ে যেতে পারবো। আর এ শিল্পে সরকার যদি ভ্যাট-ট্যাক্স কমায় তাহলে সুবিধা হয়। সরকার ভাবছে এটা করলে রাজস্ব আয় কমে যাবে। তবে, আমি জোর গলায় বলতে পারি সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে।