নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরের কেশবপুর উপজেলা থেকে নিখোঁজ ইদ্রিস আলী মোল্লাকে (২৩) পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ৬ বছর পর উদ্ধার করেছে। ইদ্রিস আলী কেশবপুর উপজেলার সারুটিয়া গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে। পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন জানান, ২০১৮ সালে এস এস সি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে অকৃতকার্য হলে তার বাবা তাকে বকাঝকা করে। তখন ইদ্রিস আলী মোল্যা তার বাবা-মা উপর রাগ করে কাউকে কিছু না জানিয়ে বাড়ি থেকে চলে যায়। অনুমান ২০১৯ সালে ভিকটিম তার পরিবারের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করে। সে নারায়নগঞ্জ থাকে বলে জানান। ইদ্রিস বছরে ২/১ বার বিভিন্ন নম্বর থেকে তার বাবা-মাকে ফোন করতো। দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও ভিকটিম তার বাবা-মা, ভাই-বোন বা আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সাক্ষাত না করায় তারা সবাই উদ্বিগ্ন উৎকন্ঠায় থাকতো। এ অবস্থায় ২৩ সালের ৩০ জুন সকাল ১০.৪৬ মিনিটে ইদ্রিস আলী তার ছোট ভাইয়ের মোবাইল নম্বরে ফোন করে জানায় সে নারায়ণগঞ্জ থেকে বাড়ি আসছে। ইদ্রিসের পরিবারের সদস্যরা তাকে রিসিভ করার জন্য মোহনপুর, কেশবপুর বাসস্টান্ডে অপেক্ষা করতে থাকে। কিন্তু দুপুর পার হয়ে বিকাল হলেও ভিকটিম আর আসে না। এরপর ২৩ সালের ৪ জুলাই অজ্ঞাত মোবাইল নম্বর থেকে ভিকটিমের ভাইয়ের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে ফোন করে অজ্ঞাত ব্যক্তি জানায় ইদ্রিস আলীকে খোঁজাখুজির দরকার নাই। সে ভালো আছে। তার সাথে কথা বলতে হলে ২ লাক্ষ টাকা দিতে হবে। পরবর্তীতে একই বছরের ১৩ জুলাই অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি ইদ্রিস আলীর ব্যবহৃত ‘‘স্পন্দিত চাদর’’ নামের ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে পুনরায় জানায় ২ দুই লাক্ষ টাকা দিলে ইদ্রিস আলীকে ছেড়ে দেয়া হবে। তখন পরিবারের লোকজন তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তার সব মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। এঅবস্থায় ভিকটিমের পরিবারের লোকজন সন্তানকে উদ্ধারের জন্য পিবিআই পুলিশ সুপারের কাছে আবেদন করে। পিবিআই বিষয়টি আমলে নিয়ে ছায়া তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে। ভিকটিমকে উদ্ধারের জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে আদালতে মামলা করা হয়। আদালত মামলাটি পিবিআইকে তদন্ত করার নির্দেশ দেয়। পিবিআইয়ের এসআই (নিঃ) সৈয়দ রবিউল আলম পলাশকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। এস আই পলাশ মামলাটি তদন্দ শুরু করে। ভিকটিম ইদ্রিসের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটি নারায়নগঞ্জে ৩০ জুন তারিখেই ব্যবহার হয়েছিল এরপর আর ব্যবহার হয়নি। মামলাটির তদন্তকারি অফিসার নারায়নগঞ্জে ভিকটিম যাদের সাথে চলাফেরা করত তাদের সনাক্ত করে। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে ভিকটিম ইদ্রিস আলী মোল্লার অবস্থান সনাক্ত করে। চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলার রুপগঞ্জ থানাধীন প্রিমিয়ার ষ্টীল মিল থেকে ভিকটিমকে উদ্ধার করে। ইদ্রিসের জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করার জন্য ৭ ফেব্রুয়ারি আদালতে উপস্থাপন করা হয়। ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১৬৪ ধারা মোতাবেক ইদ্রিস জবানবন্দি প্রদান করে। মামলাটি তদন্তকালে তদন্তকারি কর্মকর্তা জানতে পারেন, ভিকটিম ইদ্রিস আলী এসএসসি পরীক্ষায় আশানুরুপ ফলাফল না করায় তার বাবা-মা ও পরিবারের অন্য সদস্যরা তার বকাঝকা করে। রাগে ক্ষোভে মনোকষ্টে ইদ্রিস আলী নিজে থেকেই বাড়ি থেকে চলে যায়। সে নিজে নারায়ণগঞ্জে আত্মগোপনে ছিল। সেখানে তার পরিচয় গোপন করার জন্য তার প্রকৃত নাম ঠিকানা গোপন করে হুসাইন নামে পরিচয় দেয়। তাকে কেউ অপহরণ করেনি বা মুক্তিপণ চাইনি। পরিবারের প্রতি রাগে ক্ষোভে ইদ্রিস আলী নিজেই তার ভাইকে ফোন করে বাড়ি আসার নাটক সাজিয়েছিল। তবে বর্তমানে ইদ্রিস আলী তার বাবা-মা অর্থাৎ পরিবারের সাথে থাকার ইচ্ছা পোষন করে।সে এখন তার পিতা-মাতার সাথে নিজ বাড়িতে অবস্থান করছে।