১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

৭টি সহজ অভ্যাস যা আপনাকে পজিটিভ থাকতে সাহায্য করবে

সাইফুল হোসেন
উইলিয়াম জেমসের একটা কথা খুব ইম্পর্টেন্ট, মানুষ যে তার জীবনকে বদলে ফেলতে পারে দৃষ্টিভঙ্গি বদলে ফেলার মাধ্যমে। এই আবিষ্কারই হচ্ছে, গেল শতকের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ একটা আবিষ্কার। আমাদের সমাজে মূলত দুই ধরনের মানুষ বসবাস করে। এক ধরনের মানুষ হচ্ছে, সবকিছুর মধ্যে নেগেটিভিটি খুঁজেন। আরেক ধরনের মানুষ হচ্ছে যে সবকিছুর মধ্যে সুন্দর বিষয় দেখেন। নিরাশার মধ্যে আসার খোঁজ করেন। অন্ধকারের মধ্যে আলো দেখেন। আর যারা নেগেটিভিটি বাইয়েজড মানুষ তারা শুধু সবকিছুর মধ্যে নেগেটিভিটি খুঁজেন। যে তরকারি খুব ভালো হয়েছে কিন্তু লবণটা একটু বেশি। তরকারি খুব ভালো হয়েছে, কিন্তু ঝালটা আরেকটু কম দিলে ভালো। আবার অনেক মানুষ আছে যে, একটু যদি খারাপও কিছু থাকে তবে তাঁর ভালো গুণটা দেখে সে বলে না খুব চমৎকার হয়েছে।
তাই পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গিকে কিন্তু বলা হয় যে সফলতা প্রথম সোপান। আপনি সফল হবেন কি বিফল হবেন কোনো একটা কাজে। এটা আপনার দৃষ্টিভঙ্গি ঠিক করে দেবে। আপনি যদি positive attitude এর মানুষ হন তাহলে দেখবেন, আপনি নেগেটিভিটিকে জয় করে, দুঃসাধ্য কোনো বিষয়কে জয় করে অনেক বাধা বিঘ্নকে অতিক্রম করে আপনি সামনে গিয়ে সফল হতে পারবেন। আর যদি আপনি শুধু খুঁত ধরতে থাকেন। একটা জিনিসের মধ্যে শুধু দোষ খুঁজতে থাকেন। একটা জিনিসের মধ্যে সব নেগেটিভিটি খুঁজতে থাকেন। তাহলে দেখবেন, আপনি সফল হতে পারছেন না। আপনি বিফল হচ্ছেন। আপনি তার মধ্যে অসুখ খুঁজে পাচ্ছেন। আপনি তার মধ্যে দোষ খুঁজে পাচ্ছেন। ত্রুটি খুঁজে পাচ্ছেন। আমরা কয়েকটা টিপস শেয়ার করছি, যে টিপসগুলা আপনি যদি নেগেটিভ দৃষ্টিভঙ্গির মানুষ হয়ে থাকেন তাহলে আপনাকে পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গির মানুষ হতে সহায়তা করবে।
টিপস নাম্বার ওয়ান, সিদ্ধান্ত নিন। যখন আমরা কোনো একটা সিদ্ধান্ত নিই, যে আমরা এই কাজটি করবো। তখন পুরো ইউনিভার্স আপনার লক্ষ্য পূরণে আপনাকে সহায়তা করে। সুতরাং, আপনি যদি সিদ্ধান্ত নেন, যে আপনি পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গির মানুষ হবেন। আজ থেকে, এখন থেকে আপনি মনে সেটা লালন করুন। দেখবেন আপনার মধ্যে পজিটিভিটি আসা শুরু হয়েছে। আপনি যে কোনো জিনিস দেখবেন, তখনই আপনার মনে হবে যে না এটা নিয়ে আমি নেগেটিভ চিন্তা করবো না। আমি পজিটিভ চিন্তা করবো। যখন কেউ আপনাকে কিছু বলবে যে, আপনি এটা পারবেন না। তখনই আপনার ভিতরে এক শক্তি জেগে উঠবে যে, না আমি এটা পারবো। কে বলেছে আমি পারবো না। আমি পারবো কি না পারবো তুমি বলার কে? কেউ যদি আপনাকে বলে যে, না আপনি দুঃখী হবেন। বলবেন না আমি সুখী হব। আমি দুঃখের মাঝেও সুখ খুঁজে নিব। সুখ দুঃখতে পাশাপাশি হাঁটে। কিন্তু আমি খুঁজবো সুখ। আমি দুঃখের পেছনে কেন যাব? আমি অন্ধকারকে খুঁজি না। আমি আলো খুঁজবো। তবেই না আলো আসবে আমার অন্তরে।
পয়েন্ট নাম্বার দুই, নেতিবাচক মানুষ এড়িয়ে চলুন। আপনি যদি একটু আন্তরিকভাবে খেয়াল করেন, যে আপনি যাদের সাথে চলেন বা আপনার পরিবারের অনেক সদস্য আছে। দেখবেন যে নেগেটিভিটি মানুষের মধ্যে খুব পরিপূর্ণ। বেশিরভাগ লোকই নেগেটিভ। আপনি চেষ্টা করবেন, নেগেটিভ দৃষ্টিভঙ্গির যারা মানুষ তাদের থেকে মূলত একটু দূরে থাকতে। এবং যারা পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গি চর্চা করেন, যারা পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গিকে লালন করেন তাদের সাথে মিশতে। কারণ আপনি যার সাথে মিশছেন, আপনার আচার আচরণ আস্তে আস্তে তার মতো হয়ে যায়। দেখবেন, যদি একজন ভালো মানুষের সাথে মিশেন, আপনি আস্তে আস্তে ভালো মানুষে রুপান্তরিত হচ্ছেন। আবার যদি কোনো খারাপ মানুষের সাথে মিশেন, আপনি আস্তে আস্তে খারাপ মানুষে রুপান্তরিত হচ্ছেন। তার চরিত্র, তার বৈশিষ্ট্য, তার চালচলন, কথা বলার ধরন নিবেন। তার কাজের ধরন, দেখবেন যে আপনার মধ্যে আস্তে আস্তে ঢুকে যাচ্ছে। এই জন্য সঙ্গী নির্বাচনে খুব সচেতন হবেন। তাহলে আপনি নেগেটিভিটি থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারবেন। আপনি পজিটিভিটির চর্চা চালিয়ে যেতে পারবেন।
তিন, প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে জেগে এবং রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে আপনি নিজেকে বলুন। আপনি পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গির চর্চা করবেন। একটু আগে যেটা বলেছি, আপনি দুঃখের মধ্যে সুখ খুঁজবেন। আপনি সব কিছুর মধ্যে সম্ভাবনা খুঁজবেন। আপনি ধ্বংসের মধ্যে উত্থান দেখবেন। যে নগরী আগুনে পুড়ে গেছে, তার মধ্যে আপনি নতুন শহরের স্বপ্ন দেখবেন। আপনি ব্যর্থতার মধ্যে সফলতা খুঁজবেন। তাহলে আপনি গ্রাজুয়েলি পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গির মানুষ হিসেবে রূপান্তরিত হবেন। এবং আপনিও উপকৃত হবেন। আপনার আশেপাশের সমস্ত মানুষ উপকৃত হবে।
চার, নিজেকে পরিস্থিতির শিকার বলে মনে করবেন না। দেখবেন যে কিছু মানুষ আছে, তারা যেকোনো পরিস্থিতির জন্য সবসময় অন্যকে দায়ী করবে। আমি সুখী হতে পারিনি, কারণ তুমি আমাকে সুখী হতে দাওনি। আমি এত কষ্টে আছি কারণ তুমি আমার কষ্টের কারণ। আমি জীবনে চাকরি করতে পারিনি কারণ তুমি আমাকে চাকরি পেতে সাহায্য করোনি। আমার জীবনকে দোজখ বানিয়ে দিয়েছো। তোমার জন্যে আমি জীবনে একটু শান্তি পাইনি। এই যে অভিযোগ, এই অভিযোগ অনেক মানুষের। এবং এরকম নেগেটিভিটির চর্চা করেন কিছু মানুষ। দেখবেন এদের মধ্যে, কোনো পজিটিভ কিছু আপনি খুঁজে পাচ্ছেন না। এবং এরা হচ্ছে তারা, যারা মনে করে যে, সারা পৃথিবী তার বিপরীতে। আর সে পৃথিবীর বিরুদ্ধে লড়ছে। একপাশে সারা পৃথিবী আর একপাশে সে একা। এইরকম মানুষ থেকে খুব হুঁশিয়ার। এরা প্রচন্ড বিষাক্ত মানুষ। এরা আপনাকে এক বিন্দু সুখে থাকতে দিবে না। যদি আপনি পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গি চর্চা না করেন, আপনি যদি পজিটিভ না হন। সুতরাং যারা মনে করে যে, তারা পরিস্থিতির শিকার, এরা কিন্তু খুব ডেঞ্জারাস। মনে করবেন, আপনার যে পরিস্থিতি এর জন্য রেস্পন্সিবেল আপনি। তাই নিজেকে কখনো পরিস্থিতির শিকার মনে করবেন না।
পাঁচ, নিজের মনের উপরে চাপ আসে এমন কোনো বিষয় বা জায়গা এড়িয়ে চলুন। দেখবেন, যে আপনার সাথে একজন মানুষের সম্পর্ক ছিল, সেই সম্পর্কটা বিচ্ছেদ হয়েছে। মাঝে মাঝে তার সাথে দেখা হয়, দেখা হলেই আপনার মন কষ্টে ভরে যায়। কোনো কোনো জায়গা আছে, যে জায়গা একসময় আপনাকে অনেক শান্তি দিয়েছে। এখন সেখানে গেলে আপনার মন অশান্তিতে ভোরে ওঠে।যখনই আপনার মধ্যে অশান্তি ভিড় করে, যখনই আপনার মধ্যে কষ্ট ভিড় করে, এগুলো হচ্ছে আসলে নেতিবাচক অনুভব। এই নেতিবাচক অনুভব গুলা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তাহলে দেখবেন, আপনি পজিটিভ feeling এর মধ্যে ঢুকতে পারবেন। পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে ঢুকতে পারবেন। তার অর্থ এই না যে, আপনার জীবনে দুঃখ আসবে না। আপনি কাঁদবেন না। আমরা দুঃখ পাবো না, কষ্ট পাবো না এটা ঠিক না। কিন্তু আমার কথা হচ্ছে আপনি কোনো কিছু নেগেটিভিটিকে আপনি লালন করবেন না। এটা লম্বা সময় ধরে রাখবেন না। আপনি দুঃখের মধ্যে আনন্দ খুঁজে নিবেন। কারণ লম্বা সময় ধরে যদি আপনি দুঃখের মধ্যে থাকেন তাহলে অবসাদ আপনাকে গ্রাস করবে। আপনি বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়বেন। আপনি কর্মহীন হয়ে পড়বেন। আপনার কর্মক্ষমতা কমে যাবে। আপনি অসুখী হয়ে পড়বেন। আপনি অসুস্থ হয়ে পড়বেন।
ছয়, অন্যদের সাথে নিজের তুলনা করবেন না। পৃথিবীতে প্রত্যেকটা মানুষ কিন্তু ইউনিক। আমার মত মানুষ এই লক্ষ কোটি বছরে পৃথিবীতে আর একজনও আসে নাই। ভবিষ্যতে একজনও আসবে না। ঠিক আপনার মত মানুষও আর কেউ নেই, কেউ আসবে না। সবাই ইউনিক, সবার গুণও আলাদা। দেখতে যেমন আলাদা, সবার ব্যবহারও আলাদা। এই জন্য অন্য একজন খুব ভালো করছে বা অন্য একজন খারাপ করছে, তার সাথে আপনি নিজেকে মিলাবেন না, নিজের তুলনা করবেন না। আপনার মধ্যে ইউনিক কিছু ক্যাপাসিটি আছে, আপনার মধ্যে ইউনিক কিছু প্রতিভা আছে, ইউনিক কিছু গুণ আছে, আপনি সেই গুণের চর্চা করুন। আপনার কি করতে ভালো লাগে? সেটাকে খুঁজে বের করুন। আপনার passion এর সাথে আপনার profession কে মেলানোর চেষ্টা করুন। দেখবেন আপনি সুখী মানুষে রুপান্তরিত হচ্ছেন। সফল মানুষে রুপান্তরিত হচ্ছেন। আপনি পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গিরহ মানুষে রুপান্তরিত হচ্ছেন।
সাত, ক্ষমা করতে শিখুন। সবচেতে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হচ্ছে মানুষকে ক্ষমা করতে শেখা। আপনি জীবনে চলার পথে, অসংখ্য মানুষ আপনার প্রতি অনেক অন্যায় করেছে। আপনার প্রতি অবিচার করেছে। আপনাকে পিছিয়ে দিতে চেয়েছে। আপনার সাথে দুর্ব্যবহার করেছে। প্রথমে যে কাজটা করুন। নিঃস্বার্থে ক্ষমা করে দিন। তার মানে আমি এইটা বলছি না যে, আপনি কারও কাছে ১০ লাখ তাকা পাবেন, এটা আপনি ক্ষমা করে দিন। আমি আচারণের কথা বলছি। আপনার প্রতি বিভিন্ন ধরনের অন্যায় বিভিন্ন মানুষ করেছে চলতি পথে। আপনি আপনার জীবনের ঘটনাগুলো মনে পরলে অনেক কিছু পাবেন। এদেরকে আপনি মাফ করে দিন। তাতে যেটা উপকার হবে আপনি নিজে ভারমুক্ত হবেন। আপনি অনেক রোগ থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারবেন। আপনি অনেক কষ্ট থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারবেন।তাই নিজেকে যদি আপনি বাঁচাতে চান, নিজেকে যদি সুখী করতে চান। তাহলে এক্ষুনি সবাইকে এক এক করে মনের মধ্যে আনুন, এবং ক্ষমা করে দিন। যারা আপনার সাথে অপরাধ করেছে। দেখবেন আপনজনেরা অপরাধ অনেক বেশি করে। দেখবেন, আপনজনেরা অনেক বেশি কাঁদায়, অনেক বেশি কষ্ট দেয়। তাদেরকে ক্ষমা করুন। ক্ষমা আপনার জীবনকে সুন্দর করতে পারে। সমাজকে সুন্দর করতে পারে। আপনার দৃষ্টিভঙ্গি পজিটিভ করতে সহায়তা করতে পারে।
লেখক: কলাম লেখক ও অর্থনীতি বিশ্লেষক ফাউন্ডার ও সিইও, ফিনপাওয়ার লিডারশিপ ইন্টারন্যাশনাল।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়