প্রতিদিনের ডেস্ক
ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশে দেখা যায়, পর্যটকরা ছাদখোলা ট্যুরিস্ট বাসে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। মনোমুগ্ধকর ভ্রমণের এ ব্যবস্থা পর্যটক আকর্ষণ করতে বেশ কাজে দেয়। আকর্ষণীয় এ ব্যবস্থা আছে তুরস্ক, প্যারিস ও পর্তুগালের মতো বিভিন্ন দেশে। এতদিন আমাদের দেশে সরকারিভাবে আধুনিক সেই ব্যবস্থা ছিল না। কক্সবাজার ছাড়া বেসরকারিভাবে কোথাও এমন সার্ভিস চালু হয়নি। ফলে সম্ভাবনাময় অনেক গন্তব্যে পাওয়া যাচ্ছিল না কাঙ্ক্ষিত পর্যটক।
এবার ছয়টি আধুনিক ট্যুরিস্ট কোচ কেনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কম খরচে একাধিক ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ভ্রমণের লক্ষ্যে আধুনিক ট্যুরিস্ট বাসের সেবা চালু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন।
‘দেশের অভ্যন্তরে পর্যটন আকর্ষণীয় এলাকায় ট্যুর পরিচালনার লক্ষ্যে ট্যুরিস্ট কোচ সংগ্রহ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এমন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় ছয়টি আধুনিক ট্যুরিস্ট কোচ সংগ্রহ করা ছাড়াও ১ হাজার ৪ বর্গমিটার সেড নির্মাণ, নিরাপত্তাসামগ্রী ও অন্য সরঞ্জামাদি কেনা হবে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭ কোটি ১৮ লাখ টাকা। ট্যুরিস্ট কোচগুলোতে টয়লেটসহ নানান সুবিধা থাকবে। ২০২৫ সালেই বাসগুলো বহরে যুক্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাসে থাকবে যেসব সুবিধা
আধুনিক ট্যুরিস্ট কোচগুলোতে অর্ধেক ছাদখোলা ও অর্ধেক এসির ব্যবস্থা থাকবে। যাতে সবাই কাঙ্ক্ষিত সুবিধা পেতে পারেন। অনেক যাত্রী এসি পছন্দ করেন, তারা বসবেন নিচের ডেকে। যারা খোলা ছাদে হইহুল্লোড় পছন্দ করেন, তারা বসবেন উপরের ডেকে। এমন চিন্তা থেকেই কেনা হবে ট্যুরিস্ট কোচগুলো। নিচের ডেকে ১২ জন এবং ওপরের ডেকে ২৮ জনের বসার ব্যবস্থা থাকবে।
প্যান্ট্রি সুবিধা
মূলত একটি ক্যানটিনে যত ধরনের সুবিধা থাকে, এখানেও তা থাকবে। বিশেষ করে টয়লেট ফ্যাসিলিটিজ ও গরম খাবারের ব্যবস্থা থাকবে। বয়স্ক ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন যাত্রীদের জন্য থাকবে হুইল চেয়ার নিয়ে বাসে ওঠার ব্যবস্থা।
বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন জানায়, প্রাথমিকভাবে ছয়টি কোচ কেনা হবে। প্রতিটি আধুনিক কোচের দাম পড়বে ৪ কোটি টাকার ওপরে। সেই হিসাবে ছয়টির দাম পড়বে ২৪ কোটি টাকা। ইউরোপীয় স্ট্যান্ডার্ডের বাসগুলো জার্মানি বা সুইডেন থেকে কেনা হবে। ভলভো, স্ক্যানিয়া বা মার্সিটিজ ব্র্যান্ডের বাসগুলো দেশি-বিদেশি সব ধরনের যাত্রীরাই ব্যবহার করতে পারবেন।
প্রাথমিকভাবে এ বিষয়গুলো ঠিক হলেও বাসের ভাড়া এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। ২০২৪ সালের মধ্যে ওয়ার্ক অর্ডার এবং ২০২৫ সালে বাসগুলো দেশে এসে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। বাস যখন চালু হবে তখন জ্বালানির দাম কেমন থাকবে, তার ওপর নির্ভর করে নির্ধারণ করা হবে ভাড়া।
বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ এহসানুল কবীর বলেন, দেশের পর্যটকদের আধুনিক সুবিধা দিতে প্রাথমিকভাবে প্রকল্পের আওতায় ছয়টি আধুনিক ট্যুরিস্ট কোচ কেনা হবে। কোচগুলো সব ইউরোপীয় মান বজায় রেখে কেনা হবে। ছাদখোলা ডাবল ডেকার এসি বাসে ক্যান্টিনের সব সুবিধা থাকবে। প্রথমে আমরা কক্সবাজার, সিলেট ও টুঙ্গিপাড়া রুটে বাসগুলো চালু করবো। তবে ভাড়া কত হবে এখন বলা যাবে না। ২০২৫ সালে যখন বাসগুলো হাতে পাওয়া যাবে তখন জ্বালানি তেলের দাম কত থাকবে, সেটি দেখার বিষয়। জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে এক ধরনের ভাড়া হবে, কমলে আরেক ধরনের। জ্বালানি তেলের দাম ও স্থান ভেদে ভাড়া নির্ধারণ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত সব জেলায় আধুনিক ট্যুরিস্ট কোচগুলো চলাচল করবে। তবে ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জের মিঠামইন, টুঙ্গিপাড়া থেকে বাগেরহাট পর্যন্ত ট্যুর পরিচালনাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। কক্সবাজার জেলার পর্যটন আকর্ষণীয় স্থানসমূহ এবং সিলেট জেলার পর্যটন আকর্ষণীয় স্থানসমূহে কোচগুলো চলাচল করবে।
প্রকল্পের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যমাত্রা
ট্যুরিস্ট কোচের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের বিনোদনের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ হবে। বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহাসিক, দর্শনীয় স্থানসমূহ শিক্ষার্থীদের মাঝে পরিচিত করে তোলার লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ দিনসমূহে স্বল্প খরচে ট্যুর পরিচালনা করা হবে। পর্যটন কর্মকাণ্ডে স্থানীয় পণ্যের পরিচিতি ও বিপণনের মাধ্যমে স্থানীয় জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন তথা দারিদ্র্য দূরীকরণ হবে। শুধু বিদেশি নয়, দেশীয় পর্যটকদেরও দেওয়া হবে অগ্রাধিকার।
প্রকল্পটি প্রথমে অনুমোদন দেওয়া হয় ২০২০ সালের নভেম্বরে। তখন ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। প্রকল্পটি ২০২১ সালের জুনের মধ্যে শেষ করার কথা ছিল। পরে ব্যয় না বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয় এক বছর। তবে তাতেও প্রকল্প শেষ না হওয়ায় সময় আরও দুই বছর বাড়ানো হয়। এ দফায় ব্যয় বাড়ে ৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা। ২৮ কোটি ১৮ লাখ টাকার প্রকল্পটি ২০২৩ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। ফলে সময় বাড়ানো হয়েছে আরও এক বছর। যদিও এ দফায় ব্যয় বাড়েনি।
সর্বশেষ সংশোধন অনুযায়ী, প্রকল্পটি আগামী জুনে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এখন দেখার বিষয়, পঞ্চম দফায় আবারও সময় বাড়ে কি না।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এ প্রকল্পের পুরো টাকাই দেবে বাংলাদেশ সরকার।