নিজস্ব প্রতিবেদক
পাঁচ বছর পর আবারো ইতিহাস ঐতিহ্যের স্বারক যশোর জেলা পরিষদ ভবনটি ভেঙে ফেলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গত ৫ ফেব্রুয়ারি এক চিঠিতে শতবর্ষী এই লাল দালানকে ‘পুরাতন জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ’ উল্লেখ করে ভেঙে ফেলার অনুমতি দিয়েছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব জেসমিন প্রধান সই করা এক চিঠিতে ভবনটিকে অকেজো ঘোষণা করে তা নিলামে বিক্রি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর আগে ২০১৯ সালেও এই ভবনটি ভেঙে ফেলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তখন সচেতন যশোরবাসী এর প্রতিবাদে রাজপথে নামলে সে সময় ওই উদ্যোগ নিয়ে প্রশাসন আর অগ্রসর হয়নি। পাঁচ বছর পর আবারও প্রশাসন সক্রিয় হয়েছে ইতিহাস ঐতিহ্যের এই স্মারকটিকে বিলীন করে দিতে। এ নিয়ে সচেতন যশোরবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ব্রিটিশ ভারতের প্রথম জেলা হলো যশোর। যশোরকে জেলা করা হয় ১৭৮১ সালে। আর অবিভক্ত বাংলার সেলফ গভর্নমেন্ট অ্যাক্টের আওতায় ১৮৮৫ সালে যশোর ডিস্ট্রিক্ট বোর্ড প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকেই ১৮৮৬ সালে যশোর ডিস্ট্রিক্ট বোর্ড প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৫৯ সালে তা পরিবর্তন করে ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিল করা হয় এবং ১৯৭৬ সালে স্থানীয় সরকার আইনে করা হয় জেলা পরিষদ। যশোর ডিস্ট্রিক্ট বোর্ড প্রতিষ্ঠার ২৭ বছর পর ১৯১৩ সালে নিজস্ব ভবন স্থাপন করা হয়। ওই বছর ১৩ মার্চ এর উদ্বোধন করেন ডিস্ট্রিক্ট বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যান। এখনো অবিকৃত অবস্থায় সেই ভবনটি দাঁড়িয়ে আছে। এটি এখন কালের সাক্ষী গর্বিত ঐতিহ্যের স্মারক। সূত্র আরও জানিয়েছে, যশোরে যে ক’টি পুরনো ভবন ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে মাথা উঁচু করে আছে তার মধ্যে জেলা পরিষদ ভবন অন্যতম। তবে জেলা পরিষদের বর্তমানে দাপ্তরিক কার্যক্রম চালানো এই প্রাচীন ভবনটি ২০১৯ সালের ১৫ জানুয়ারি জেলা পরিষদের জেলা কনডেমনেশন কমিটির সভায় পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। মুজিব সড়কে জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে ঐতিহ্যবাহী এই ভবনটি ভেঙে সেখানে একটি বহুতল ভবন নির্মাণের সুপারিশ করেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল আওয়াল। এদিকে, জেলা পরিষদ ভবন ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় সচেতন মহলে। তারা এই প্রাচীন ভবনটি রক্ষার দাবিতে রাজপথে নামেন। আন্দোলনের মধ্যে ভেঙে ফেলার প্রক্রিয়া থেমে যায়। কিন্তু এখন আবার এই ভবনটি ভেঙে ফেলার প্রক্রিয়া নতুন করে শুরু হয়েছে। ভবনটি ভেঙে ফেলার জন্য ২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর জেলা প্রশাসক ও জেলা পরিষদ যশোর যৌথভাবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আবারও চিঠি দেয়। সেই চিঠির প্রেক্ষিতে চলতি বছরের গত ৫ ফেব্রুয়ারি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব জেসমিন প্রধানের সই করা এক চিঠিতে ভবনটিকে অকেজো ঘোষণা করে তা নিলামে বিক্রি করার নির্দেশ দেয়। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, জেলা কনডেমনেশন কমিটির সুপারিশ এবং জেলা পরিষদ যশোরের প্রস্তাবে পেক্ষিতে যশোর জেলা পরিষদের ১৯১৩ সালের নির্মিত অতীব পুরাতন জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ জেলা পরিষদের অফিস ভবন’ পরিত্যক্ত ঘোষণা এবং ২৩ লাখ ১৩ হাজার ৮৮৭ টাকা (ভাঙার খরচ বাদে) টাকার প্রাক্কলন অনুযায়ী নিলামে বিক্রয়ের প্রশাসনিক অনুমতি নির্দেশক্রমে প্রদান করা হলো। এদিকে, যশোরের কালের সাক্ষী গর্বিত ঐতিহ্যের স্মারক এই ভবনটি ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে যশোরের সচেতন মহল। সচেতন মহলের মতে, যশোরের রয়েছে সমৃদ্ধ ইতিহাস। এই ভবনটি যশোরের ইতিহাস ঐতিহ্যর একটি অংশ। এটা যদি ভেঙে ফেলা হয়; লোকে চিনবে কি করে যশোর শহর প্রাচীন। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে যশোরের ইতিহাস, ঐতিহ্য জানার সুযোগ দিতে এই ভবনটি রাখা উচিত। কিন্তু অদূরদর্শিতা ও স্বার্থপ্রীতির কারণে আজ আমাদের ঐতিহ্যের স্মারকগুলো একের পর এক ধ্বংস করা হচ্ছে। জেলা পরিষদের এই ভবন ভাঙার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা না হলে বৃহৎ আন্দোলনের ডাক দেওয়ারও ঘোষণা দেন জেলার ঐতিহ্য রক্ষার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলনে ভূমিকা রাখা এই নেতা। এই বিষয়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল বলেন, আমি এখনো চিঠি পাইনি। চিঠি না দেখে কিছু বলতে পারবো না। আর জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা লুৎফর রহমান বলেন, চিঠি পেয়েছি। তবে এখনো টেন্ডার আহ্বান করা হয়নি। সভা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।