উত্তম চক্রবর্তী, রাজগঞ্জ
যশোরের মনিরামপুরে রেইনট্রি গাছের ‘ভাইরাস পোকা’ এখন শতশত মানুষের উপার্জনের একমাত্র মাধ্যম হয়েছে। খবর পাওয়া গেছে, উপজেলার ৫/৬ টি ইউনিয়নে এই রেইনট্রি গাছের ‘ভাইরাস পোকা’ সংগ্রহ চলছে। বয়স্ক লোক ও কিশোররা প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই ‘ভাইরাস পোকা’ সংগ্রহের কাজে রয়েছে। সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার চালুয়াহাটি ইউনিয়নের কয়েকজন, ভ্যানগাড়ী সাথে নিয়ে রেইনট্রি গাছের ‘ভাইরাস পোকা’ সংগ্রহ করতে বেরিয়ে পড়েছে। এছাড়া এ কাজে রয়েছে মনোহরপুর, নেহালপুর, দূর্বাডাঙ্গা ও কুলটিয়া ইউনিয়নের লোকজন। এই কাজে জড়িতরা সকাল বেলা বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন। এরপর সাদা বর্ণের ভেতর লালচে রঙের ভাইরাসযুক্ত ডালের সন্ধান করেন। যে গাছের ডাল সংক্রমিত বেশী, সেই ডাল ততো বেশি দামে গাছের মালিকের কাছ থেকে কেনেন তারা। ভাইরাসযুক্ত গাছের ডাল স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে প্রতি কেজি ৪৮০ টাকা থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়। প্রথমে সংক্রমিত গাছের ডাল দর কষাকষির মাধ্যমে গাছের মালিকের সাথে দাম ঠিক করে নেয়া হয়। পরে গাছ থেকে ডাল কেটে নারী শ্রমিকদের দিয়ে ভাইরাস ছাড়ানো হয়। পরে ভাইরাস বিক্রির উপযোগী হলে বস্তায় করে স্থানীয় কেশবপুর সহ কয়েকটি বাজারের আড়তে বিক্রি করা হয়। এই ব্যবসার সাথে জড়িত হাসান, আহম্মদ, বাবুল ও রনিসহ অনেকেই জানান- চালুয়াহাটি, মনোহরপুর, কুমারঘাটা, দাশেরহাট, কুলটিয়া, মশিয়াহাটী, নেহালপুরসহ এলাকার বিভিন্ন স্থানের শিশু (রেইনট্রি) গাছ দেখে আসি। যেসব গাছে ভাইরাস হয়েছে সেগুলো থেকে তিন থেকে চার জন শ্রমিক নিয়ে সংক্রমিত ডাল কেটে ভ্যানে করে বাড়িতে এনে ভাইরাস ছাড়িয়ে বিক্রির জন্য বাজারে নিয়ে যাই। শুরুর দিকে এই ভাইরাসের দাম বেশি ছিলো। কিন্তু এখন দাম কমে গেছে। পাইকারি ব্যবসায়ী মুসা, সুমন, সবুজসহ আরো অনেকেই জানান, গাছ থেকে সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে কিনে আমরা অন্য জায়গায় বিক্রি করি। এগুলো সাড়ে ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকা প্রতিকেজি দরে কিনে সাড়ে ৫শ’ টাকা দরে বিক্রি করি। মনোহরপুর বাজারের মোঃ সুমন জানান, আমার মূলত ধানের আড়তের ব্যবসা। এখন ‘ভাইরাসের’ ব্যবসাটা করছি। ভালো লাভও পাচ্ছি। এই ভাইরাস কী কাজে ব্যবহার হয় এমন প্রশ্নে আড়ত ব্যবসায়ীরা বলেন, আমরাও সঠিক জানি না। তবে লোকমুখে শুনেছি এটা দিয়ে আসবাবপত্রে রং করার কাজে উন্নতমানের আঠা বা গালা তৈরি করা হয়ে থাকে। চালুয়াহাটি গ্রামের কয়েকজন জানান, দিন দিন এই ভাইরাস সংগ্রহের কাজে লোক ঝুঁকছে বেশি। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, গোটা উপজেলার শতশত নারী, পুরুষ, শিশু, কিশোররা এই পেশায় জড়িত হয়ে পড়েছে। বেকার যুবকরাও এ ভাইরাসের ব্যবসা শুরু করেছে। ভাইরাস ব্যবসায়ীদের চোখ এখন রেইনট্রি গাছের দিকে। সরেজমিনে দেখা গেছে, চালুয়াহাটি গ্রামের একটি বাড়িতে বসে ৫/৭ জন নারী ও ২ জন পুরুষ বটির সাহায্যে খুব যত্নসহকারে ডাল থেকে ভাইরাস পোকা আলাদা করছে। তারা বলেন- এইগুলো আলাদা করে পাইকারী ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করি। এভাবে এক সপ্তাহ পর পর বিক্রি করে থাকি। তারা আরো বলেন, ইতোমধ্যে এই ভাইরাস পোকার কারবার করে বহু মানুষের কর্মসংস্থান হলেও, ঠিক কতদিন চলবে এ পোকার ব্যবসা তা জানা নেই।
এই ভাইরাস পোকার ব্যবসার সাথে জড়িতরা জানান, আমরা প্রথমে রেইনট্রি গাছে ভাইরাস দেখি। তারপর গাছের মালিকের সাথে দরাদাম করে শ্রমিক দিয়ে গাছ থেকে সংক্রমিত ডাল কেটে ভ্যানগাড়ী করে বাড়িতে এনে ভাইরাস ছাড়িয়ে বিক্রির উপযোগী করা হয়। তারা জানান, প্রথমে এই ভাইরাস পোকার দাম ছিল ১০০০ টাকা পর্যন্ত প্রতিকেজি। এখন দাম কমে গেছে। স্থানীয় আরাফাত হোসেন বলেন, দেখছি এই ভাইরাস পোকার ব্যবসার মাধ্যমে এলাকার কিছু মানুষ অর্থ উপার্জন করছে। কিছু মানুষের কর্মসংস্থানও হয়েছে। এটা নিশ্চিত ভালোর দিক। এলাকার মানুষ কাজ করে জীবন-যাপন করছে এটা ভালো।