প্রতিদিনের ডেস্ক
ফেব্রুয়ারি ও মার্চে পরপর কয়েকটি দিবসকে কেন্দ্র করে প্রতি বছরই নারায়ণগঞ্জের ফুলচাষিরা বেশ লাভবান হচ্ছেন। তবে এবার তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। দিবসগুলো চলে আসলেও এখনও তাদের ক্ষেতের ফুল কুঁড়িতেই রয়েছে। বিক্রির উপযুক্ত হয়ে ওঠেনি।
ফেব্রুয়ারিতে বসন্তবরণ, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এবং মার্চে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও মহান স্বাধীনতা দিবস ঘিরে গোটা দেশেই অঢেল ফুলের চাহিদা থাকে। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে তাদের ফুল ফোটার সম্ভাবনা খুবই কম। ফলে এবার হয়তো তারা কাঙ্ক্ষিত লাভবান হতে পারবেন না।
ফুলচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বছরজুড়েই নারায়ণগঞ্জ বন্দর উপজেলার দিঘলদি ও সাবদীসহ কয়েকটি এলাকায় ফুলের চাষ হয়ে থাকে। তবে শীত মৌসুমে প্রায় সবাই ফুলের চাষ করে থাকেন। জন্মদিন পালন, বিয়ে, মৃতের আত্মার প্রতি সম্মান প্রদর্শন, গৃহসজ্জায় এ ফুল ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
সেইসঙ্গে প্রতিবছর বসন্তবরণ, ভালোবাসা দিবস, বাংলা ও ইংরেজি নববর্ষ, স্বাধীনতা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মতো দিনগুলোতে ফুলের অতিরিক্ত চাহিদা থাকে। নারায়ণগঞ্জে এ চাহিদার অনেকটাই পূরণ করে থাকে বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের সাবদী, দিঘলদী ও মুকুলদী এলাকার ফুল। যার কারণে দিন দিন বন্দরে ফুলচাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বন্দর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার প্রায় ৮০ হেক্টর জমিতে এখন চাষ হচ্ছে গাঁদা, গ্লাডিওলাস, চেরি, চন্দ্রমল্লিকাসহ নানা জাতের ফুল। মাঠের পর মাঠ গাঁদা ও গ্লাডিওলাস ফুলের দৃশ্য দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়।
তবে এবার নভেম্বর ও ডিসেম্বর পরপর দুই বৃষ্টির কারণে ফুলচাষিরা তেমন সুবিধা করতে পারেননি। বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় অনেক ফুলগাছ ছোট থাকতেই পঁচে গিয়েছিল। পানি কমে গেলে পরে আবার নতুন করে ফুলের চারা রোপণ করতে হয়েছে।
আর সেগুলোতে এখন ফুল আসতে শুরু করেছে। তবে যারা উঁচু জমিতে ফুলের চাষ করেছেন তারা কিছুটা লাভজনক অবস্থানে রয়েছেন।
বন্দরের মাধবপাশা এলাকার ফুলচাষি খোকন বলেন, আমরা বিগত ছয় বছর ধরে ফুল চাষ করে আসছি। আমার পরিবারের সকল সদস্যরাই এই ফুলচাষের সঙ্গে জড়িত। প্রত্যেক দিন ক্ষেত থেকেই বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা এসে ফুল কিনে নিয়ে যান। এই ফুলচাষের মাধ্যমেই আমাদের জীবীকা নির্বাহ হয়ে থাকে।
তিনি বলেন, আমাদের জমিটি বেশ উঁচু। তারপরও এবার বৃষ্টির কারণে সুবিধা করতে পারবো না। যখন ফুল বিক্রির মৌসুম সেসময় ফুল ফুটছে না। সামনে কয়েকটি দিবস রয়েছে। সেসব দিবসকে কেন্দ্র করে আগে থেকেই ফুল স্টক করে রাখতে হয়। কিন্তু গাছে ফুল না ফোটার কারণে স্টক করে রাখা যাচ্ছে না।
ফুলচাষি ইউনুস বলেন, এবার ফুলের চারা রোপণের পরই টানা কয়েকদিন বৃষ্টি হয়। ফলে অনেক চাষিই বিপাকে পড়ে যান। তাদেরকে আবার নতুন করে চারা রোপণ করতে হয়েছে। ফলে এ বছর অনেক চাষি তেমন সুবিধা করতে পারবে না। নতুন করে চারা রোপণ করেছি। সেগুলোতে এখন কেবল ফুল ধরতে শুরু করছে।
বন্দর উপজেলা সহকারী কৃষি অফিসার মোহাম্মদ ইয়াসিন আরাফাত বলেন, বন্দরের প্রায় ৮০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন রকমের ফুলের চাষ হয়ে থাকে। বৃষ্টির কারণে এবছর তাদের ফুলের উৎপাদন কিছুটা কম। তারপরও এ বছর প্রায় ৪ কোটি টাকার ব্যবসা হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মুহাম্মদ শাহ আলম বলেন, বন্দরের ফুলচাষিরা মৌসুমী ফুল চাষ করে থাকেন। প্রতিবছরই প্রায় দেড় থেকে দুইশ লোক এই মৌসুমী ফুল চাষ করে থাকেন। সেইসঙ্গে প্রতি বছর ৫ থেকে ৬ কোটি টাকার ব্যবসা হয়ে থাকে। কিন্তু এবার নভেম্বর ও ডিসেম্বরে দুইবার বৃষ্টি হওয়ার কারণে এক তৃতীয়াংশ জমি তলিয়ে গিয়েছিল। যার কারণে তারা সময়মতো ফুল পাচ্ছেন না। তবে আমরা তাদেরকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে থাকি।