২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

আক্ষরিক অর্থে সে আমার দ্বিতীয় প্রেমিক

প্রতিদিনের ডেস্ক:
[প্রেমে পড়ার মুহূর্তই মনে হয় সব থেকে সুন্দর। এক বিন্দু অনুভূতির রেশ ক্রমে বাড়তে থাকে। এর নানা শাখা-প্রশাখা তৈরি হয়। সূক্ষ্ম অনুভূতিগুলো প্রকাশ করতে-করতে কত-শত দৃশ্য তৈরি হয়ে যায়, তার ঠিক নেই। এসব নিয়েই সত্যিকার প্রেমের গল্প যেকোন গল্পের থেকে সুন্দর। নিজের প্রেমের কথা লিখেছেন কবি সাকিরা পারভীন। এই লেখা, অক্ষরমালা আর শব্দগুচ্ছ প্রেমিক মুম রহমানকে ঘিরে।] তখন আমার অনেক নাম ছিল। মায়া, নন্দিনী, অনন্যা, দোয়েল, চড়ুই, বুলবুলি, গান, ফুল, কবিতা আরো কতকি। বাপরে বাপ! আক্ষরিক অর্থে সেটা আমার দ্বিতীয় প্রেম। সে আমার দ্বিতীয় প্রেমিক। প্রথমটি প্লেটনিক। দ্বিতীয়টি সমর্পনের। তখন লুকিয়ে লুকিয়ে রাতের অন্ধকারে জোনাকিরা গান করে। তখন কখনও কখনও মাঝ-দুপুরেও তক্ষক ডেকে ওঠে। আবার ফাল্গুন মাসের নাজেহাল দশা। জাহাঙ্গীরনগর চৌরঙ্গীতে ফোটা পলাশের পাপড়ি উড়ে যাচ্ছে ঢাকাস্থ আনন্দ ভূবনের দিকে, কারওয়ান বাজার। সেখানে খোলা কাগজের বুকে লিখে চলেছে তুমুল শব্দঝড়। তখন সে গল্প লিখত। সমস্ত প্রতিদিনের- সমস্ত গল্পে, কবিতায়, কলামে ,নিবন্ধে , চিঠিতে, সংলাপে একটাই ফর্দ- প্রেমোন্মাদ ভালোবাসা । তখন অনিবার্য তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধকে রুখে দিতে পারার মতন দুরন্ত সেই বালক তীরন্দাজ। কী নরম স্মিত সরল সুন্দর স্বপ্নবাজ সেই কালো পাখি। ভাবতেই পারবেনা তোমরা। আমার সেটা খারাপ লাগতোনা। স্বয়ং ঈশ্বরও তো চান বান্দা সবকিছু ছেড়ে তার জিকিরে মগ্ন থাকুক। আমিতো মানুষ। অমানুষও যথেষ্ট। চিম্বুক পাহাড় থেকে চিলমারী বন্দর, তক্ষকতলা থেকে চারুকলা-অন্দর; সর্বত্র আমার চলাচল। তখন সে গল্প লিখত। আর আমাকে লিখত, আমাকে চাইত। তখনও আমি হাল ছেড়া মাঝি- পাল তোলা পাখি। তখন সে একটা শান্ত সবুজ দেবদারু। কেবল ভেতরে একটা গর্ত। সেই গর্তের কাদা, মাটি, জল সব আমি। আমি ছাড়া অচল, অপর, অখাদ্য সমস্ত পৃথিবী। শিকলের সম্মোহনের সমপর্ণের সেই সোনার খাঁচায় থেকেও আমিটা হুটহাট উড়ে যাই। আমাকে ডাকে পৃথিবীর আলো-হাওয়া-সমুদ্র-পাহাড় পাখোয়াজ। একবার পাহাড়ে গিয়েছি। ফিরে এসে দেখা হলো টিএসসি চত্বরে। একি! দেখি তার টাক মাথা। কি হয়েছিল!!? জিজ্ঞেস করি। সে নিরুত্তর। বুঝি তার অপার অভিমান। আরেক দিন ছায়ানটের সারগাম শেষ করে সকলেই যে যার বাড়িতে যাত্রা করেছে। দরজাগুলা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। দেখি আমি নেই। আমি তো যাই নাই। পাব কোথায়? সে হয়ত বিষন্ন চোখের জল শুকিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ফিরে গেছে বাসাবো কারাগারে। অদূর ভবিষ্যতে হয়ত সেখানেই বাসা বাঁধার প্রস্তুতি নিচ্ছিল একটি রঙিন প্রজাপতি। ঐতো কিছুটা ওরকম। আমি স্মৃতিভ্রষ্ট মানুষ। বেশিরভাগ ভুলে যাই। অসীম মমতায় আমার সব অত্যাচার অনাচার সয়ে নিত সে। সে বলত, পাখি তুমি থাকো। কোথাও যেওনা। আমি দু’ হাত ভরে লিখব। একবার সাতশো টাকা জোর করে গুঁজে দিয়েছিল হাতে। লেখার বিল। নীল শাড়ির কুঁচিতে অপচয় করতে হবে টাকা। এসবের কোনো মানে হয় না। কোনো কিছুর কোনো মানে হয় না। তবু অর্থহীন অপচয়ের দিকেই তো ঝোঁক বেশি আমাদের। কী আর করা বলো…

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়