সোহাগ আলী, কালীগঞ্জ
বিশ্ব ভালোবাসা দিবস,বসন্ত উৎসবসহ চার দিবস কে লক্ষ করে ফুলের বাজার সরগরম হয়ে উঠেছে। সোমবার থেকেই ফুল বিক্রির ধুম পড়েছে। ফুলের দোকান গুলো সেজেছে অপরূপ সাজে। ফুল ক্ষেত ও ব্যবসায়িরা আশা করছে এবার কালীগঞ্জ,ঝিনাইদহ, মহেশপুরসহ বিভিন্ন এলঅকায় ৪ উৎসবকে কেন্দ্র করে দেড়,শ কোটি টাকার ফুল বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে ঘিরে বাজার ধরতে ফুল পরিচর্যায় ব্যস্ত এলাকার চাষীরা। গাদা, গোলাপ, জারবেরাসহ অন্যান্য ফুলের জমিতে সেচ দেওয়া থেকে শুরু করে মান ভালো রাখতে পোকা দমনে নানা ধরনের ছত্রাক নাশকও স্প্রে করা হচ্ছে। অনেকে আবার ক্ষেতেই রেখে দিচ্ছেন ফুল। তবে পরিচর্যার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়ার কথা জানান কৃষি বিভাগ। এর মধ্যে গাদা ফুলের পরিমানই শতকরা ৬৫ ভাগ। দেশের মোট গাদা ফুলের চাহিদার সিংহ ভাগই পুরণ হয় ঝিনাইদহ, কালীগঞ্জ ও মহেশপুর ঐলাকার ফুলের মাধ্যমে। ফুটে আছে লাল, হলুদ,কমলা রঙের জারবেরা,কোথাও গাদা ফুল গাছে এসেছে কুড়ি,কোথাও বা ফুটেছে ফুল। এমনই চিত্র বিভিন্ন এলাকার ফুল ক্ষেতের। এই ক্ষেত গুলোতে চাষীরা দিনান্ত পরিশ্রম করে চলেছে পরিচর্যায়। ফুল চাষীরা বলছেন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, বসন্ত বরন, ২৬ শে মার্চ ও আন্তর্জাতিক মার্তৃভাষা দিবস। এই উৎসব ঘিরে ফুলের চাহিদা বেড়ে যায় কয়েক গুন। দামও হয় অনেক বেশী। তাই শেষ মুহূর্তের পরিচর্যা চলছে। সামনের বাজার পেতে অনেক ফুলই ক্ষেতে রেখে দেওয়া হয়েছে। প্রধান কয়েকটি দিবস সামনে রেখে ফুল চাষি ও ফুল ব্যবসায়ীরা ব্যস্ততম সময় পার করছেন। তাদের যেন কোন ফুরসত নেই। তাই বসন্ত বরণ, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, ২১শে ফেব্রয়ারি মাতৃভাষা দিবস ও ২৬ শে মার্চ উপলক্ষ্যে ফুলের রাজ্যে লেগেছে ফাগুনের হাওয়া। ফুল চাষিরা শেষ মহুর্তে নিজের বাগান পরিচর্চা ও বাজার নিয়ে নানা পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন। দিবস গুলো সামনে আসার আগেই মাঠে মাঠে ছড়িয়ে পড়েছে অনিন্দ্য শোভা আর ফুলের স্নিগ্ধ সুবাস। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক এই চারটি দিবসকে ঘিরে শত কোটিরও বেশি টাকার ফুল বাণিজ্য হবে বলে ব্যবসায়ী ও চাষিরা মনে করছেন। চাষিরা বলছেন, বসন্তবরণ, ভালোবাসা দিবস ও ২১শে ফেব্রুয়ারীর বাজার ধরতেই এখন তাদের প্রস্তুতি চলছে। বাংলাদেশ ফ্লোয়ার সোসাইটির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ও গান্না বাজার ফুল চাষি সমবায় সমিতির সভাপতি জমির উদ্দীন জানান, ঝিনাইদহ সদর, কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর ও মহেশপুর উপজেলায় বিভিন্ন গ্রামে বাণিজ্যিক ভাবে ফুল চাষ হচ্ছে। গ্রামে গ্রামে শোভা পাচ্ছে চায়না গোলাপ, থাই গোলাপ, জারবেরা, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, মাম ফুল, বোতাম ফুল, গাঁদা, লিলিয়াম, জিপসি ও চন্দ্রমল্লিকা ফুলের ক্ষেত। গান্না বাজারের ফুলচাষি নজরুল ইসলাম ও আদম আলী জানান, এক বিঘা জমিতে গোলাপ ফুল চাষ করতে তাদের সাকুল্যে ৫ লাখ টাকা খরচ হয়। কিন্তু বছর শেষে তাদের লাভ হয় বিঘা প্রতি জমিতে ২০ লাখ টাকা। ওই এলাকার ফুল চাষি মারুফ ও হাসান জানান, এক বিঘা জমিতে জারবেরা ফুল চাষ করতে ১৪ লাখ টাকা খরচ হয়। আবহাওয়া ভালো থাকলে বছর শেষে লাভ হয়, ২৫ লাখ টাকা। দিবসের বাজার ধরতে প্রস্তুত ফুল ব্যবসায়ি ও ক্ষেত মালিকরা। এই ৪ দিবস উপলক্ষে জেলার সদর,কালীগঞ্জ,কোটচাঁদপুর ও মহেশপুর উপজেলার মাঠ গুলোতে শোভা পাচ্ছে গোলাপ, জারবেরা, গাডিওলাস, টিউলিপ, রজনীগন্ধা, গাঁদা, লিলিয়াম, জিপসি, চন্দ্রমল্লিকাসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল।চাষিদের আশা, ফুলের চাহিদা ভালো থাকায় উৎসব এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ফুলের দামও বাড়বে এবং তারা বিগত দিনের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন।জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, ঝিনাইদহ জেলায় প্রায় ৪০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের ফুলের চাষ হয় এবং এই খাতের ওপর নির্ভর করে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে অর্ধ লক্ষাধিক মানুষের জীবন-জীবিকা নির্বাহ হয়। কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের ফুলচাষী টিপু সুলতান জানান, ২০১৭ সালে ৫৫ লাখ টাকা খরচ করে ৫ বিঘা জমিতে জারবেরা ফুলের চাষ করেছিলেন। বর্তমানে তিনি প্রায় ২০ বিঘা জমিতে ফুল চাষ করেছেন ও গোলাপ রয়েছে ৫ বিঘা।তিনি বলেন, “বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে গত কয়েক দিনে গোলাপ পাইকারি ২৮ থেকে ৩২ দরে বিক্রি করেছি। প্রতিদিন এক হাজার থেকে দেড় হাজার গোলাপ ঢাকার বাজারে পাঠাচ্ছি।” গান্না বাজার ফুল চাষি সমবায় সমিতির সভাপতি জমির উদ্দীন জানান, সারা বছর ফুল বিক্রি কিছুটা কম থাকলেও মূলত বেচাকেনা হয় উৎসবকে ঘিরে। তবে আসন্ন চার দিবসকে ঘিরে অন্তত দেড়শ টাকার ফুল বিক্রির আশা করেন তিনি। কালীগঞ্জ উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা বাজার ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান জানান, বর্তমানে ফুলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সারা বছরই ফুল বেচা কেনা হয়। তবে প্রতি বছর বাংলা ও ইংরেজি নববর্ষের দিন, স্বাধীনতা দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ভালোবাসা দিবস, ২৬ শে মার্চ ও বসন্ত বরণের দিন ফুলের অতিরিক্ত চাহিদা থাকে। এ সময় দামও ভালো পাওয়া যায়। ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আজগার আলী জানান, জেলায় রবি মৌসুমে ২১৬ হেক্টর ও খরিপ মৌসুমে ১৮৪ হেক্টর জমিতে ফুল চাষ হয়ে থাকে। চলতি বছরে এই চাষ আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন জানুয়ারি থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত ঝিনাইদহ জেলায় দু’শ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে। আর এই ফুল সেক্টরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ জীবিকা নির্বাহ করেন বলেও তিনি মনে করেন। তিনি আরও জানান, ঝিনাইদহ মাটি ও আবহাওয়া ফুল চাষের জন্য উপযোগী। ফুলচাষ এ অঞ্চলের আর্থসামাজিক উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখছে।ফুল পরিবহন ও সংরক্ষণের বিষয়ে তিনি বলেন, “পদ্মা সেতু হওয়ায় খুব সহজে ফুল ও কৃষিপণ্য ঢাকা ও চট্রগ্রামে পাঠানো যাচ্ছে। এছাড়া ফুল সংরক্ষণের জন্য কালীগঞ্জ উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা বাজারে ফুল অ্যাসেম্বলি সেডের সঙ্গে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অত্যাধুনিক রুম করা হয়েছে। যেখানে ফুল ও ফলের বীজ সংরক্ষণ করা হয়।