১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

টার্গেট পূরণে কর্মপরিকল্পনা করুন

তৈরি পোশাকশিল্পের হাত ধরেই দেশের অর্থনীতিতে ঈর্ষণীয় সাফল্য এসেছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। আর ডেনিমে বাংলাদেশ ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের সব দেশকে পেছনে ফেলে প্রথম অবস্থানে। বলা যায়, আগামীতে উজ্জ্বল দিনের সম্ভাবনা রয়েছে এ খাতে। রপ্তানিকারকরা ২০২৪ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকের শুরু থেকে পোশাকের ক্রয়াদেশ বাড়বে বলে আশা করছেন। বহির্বিশ্বের কাছে আমাদের জাতীয় নির্বাচন একটি বড় বিষয় ছিল। সেটি কাটিয়ে উঠেছে। সরকার পোশাক খাতে সমস্যাগুলো সমাধানে আরো উদ্যোগী হলে অতি শিগগির ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশ শীর্ষস্থান অধিকার করবে বলে আমরা আশাবাদী। মাঝে বৈশ্বিক সংকটে রপ্তানিমুখী কারখানায় কমছিল ক্রয়াদেশ। গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট, বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে খরচ বৃদ্ধি- নানা কারণে তৈরি পোশাক খাতে অস্থিরতা ছিল। বৈশ্বিক মহামারিতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় পোশাক খাত। এরপর সংক্রমণ পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে প্রচুর ক্রয়াদেশ আসতে শুরু করে। ফলে পোশাক খাত ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা অর্জন করে। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মূল্যস্ফীতি প্রচুর বেড়ে যায়। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলো। সেখানে বিক্রি কমলে তার প্রভাবও এ দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের ওপর পড়ে। নতুন করে আশার আলো দেখা যাচ্ছে। বিজিএমইএ ও লাইটক্যাসলের যৌথভাবে প্রকাশিত গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, আগামী ২০২৭ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও আফ্রিকার অনলাইন বাজারে তৈরি পোশাক বিক্রি করে বাংলাদেশের বাড়তি ৪৮ কোটি ৯০ লাখ ডলার আয়ের সম্ভাবনা আছে। তবে উল্লেখ করা সময়ের মধ্যে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের জন্য ফ্রেমওয়ার্ক বাস্তবায়ন করতে হবে। ‘ইস্টাবলিশিং এ ভার্চুয়াল মার্কেটপ্লেস ফর বাংলাদেশি অ্যাপারেলস’ শীর্ষক গবেষণায় আরো বলা হয়েছে, ২০২৬ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আফ্রিকার অনলাইন পোশাকের বাজার দাঁড়াবে ৩০৮ বিলিয়ন ডলারে। আগামী কয়েকটি বছর দেশের পোশাকশিল্পের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সময়ের প্রয়োজনে অত্যন্ত দ্রুত পরিবর্তনশীল ভোক্তা চাহিদা অনুযায়ী পণ্যের বহুমুখীকরণ বা বৈচিত্র্যসাধন, কারখানায় আধুনিক প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার ও দক্ষ জনবল তৈরির মাধ্যমে নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব হলে পোশাকশিল্প দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে। সেই প্রস্তুতি এখন থেকে নিতে হবে। অনেক চড়াই-উতরাই অতিক্রম করে গত কয়েক দশকের পথপরিক্রমায় দেশের তৈরি পোশাকশিল্প আজকের এ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। অনেক প্রতিকূলতা এবং দেশি ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প এগিয়ে যাচ্ছে অগ্রগতির পথে। দেশের অর্থনীতিকে বেগবান করতে পোশাকশিল্পের কোনো বিকল্প নেই। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিদেশ থেকে যে রেমিট্যান্স আসছে তার অন্যতম খাত হলো গার্মেন্টস শিল্প। প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিকের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ প্রচুর বৈদেশিক অর্থ আয় করছে। যে কোনো দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা নিঃসন্দেহে সে দেশের শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। আগামীর টার্গেট পূরণে প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের আন্তরিক ও বাস্তবভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা এবং তার বাস্তবায়ন।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়