শামিম হোসেন, কুয়াদা
যশোরের সতীঘাটায় তোলাগোলদার পাড়া গ্রামের জালাল উদ্দিনের ছেলে ফয়জুল (২৭) কে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদে ও ফাসির দাবিতে এলাকাবাসী মানবন্ধনের আয়োজন করেছে। মঙ্গলবার বিকাল তিনটার সময় যশোরের কানাইতলায় জর্দা ফ্যাক্টরির পাশে আব্দুল্লাহ ওয়ার্কসোপে’র সামনে প্রায় এক থেকে দেড় হাজার মানুষের উপস্থিতিতে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। গত ১১ই ফেব্রুয়ারী দিবাগত রাতে আব্দুল্লাহ ওয়ার্কসোপের ভিতরে চোর সন্দেহে ধরে নিয়ে গিয়ে পিতা- পুত্র মিলে রাতভর হাতুড়ি, রড়, শাবল দিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করেন। এতে ফয়জুল গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেও তারা ক্ষ্যান্ত হননি। বর্বরতার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌছে গিয়ে তারা ফয়জুলের হাত, পা ভেঙ্গে ফেলে এবং একটি চোখ উপড়ে ফেলে। নিহত ফয়জুলের পিতা, ছোটভাই, স্ত্রী -সন্তান বারংবার আব্দুল্লাহ ও তার পুত্রদের হাতে পায়ে ধরে আকুতি মিনতি করেন। কিন্তু তাদের কোন কথার কর্ণপাত না করে উল্টো তাদেরকে হুমকি ধামকি দিয়ে বের করে দেন। ঘটনা এখানেই ক্ষ্যান্ত সমাপ্ত হয়নি। রাতভর নির্যাতন করে ফয়জুলকে বস্তা দিয়ে ধরে ওয়ার্কসোপের ভিতরে ফেলে রাখেন। সকালে খবর পেয়ে কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশ ফয়জুলক উদ্ধারপূর্বক যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃতঃ ঘোষণা করেন। পরদিন ময়নাতদন্ত শেষে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মৃত ফয়জুলের স্বজনসহ ১১ নং রামনগর ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদ হাসান লাইফ ও ইউপি সদস্যবৃন্দদের উপস্থিতিতে লাশ হস্তান্তর করেন। গ্রামবাসী লাশ নিয়ে ওইদিনই সন্ধ্যায় আব্দুল্লাহ ওয়ার্কসোপের সামনে রাস্তার উপর লাশ রেখে প্রতিবাদ মিছিল করেন ও দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাসির দাবি করেন। পরে এশার নামাজের পর পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। নিহত ফয়জুলের পরিবার ৫জনকে আসামী করে কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশের নিকট একটি অভিযোগ দায়ের করেন। কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশ ঘটনার দিনই আব্দুল্লাহ ওয়ার্কসোপের ৪জনকে পুলিশী হেফাজতে নেয়। মঙ্গলবার ০৬ নং কামালপুর ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম, তোলাগোলদার পাড়া গ্রামের যুবলীগ নেতা ইব্রাহিম হোসেন, বাচ্চু মিয়া, ফিরোজ আহম্মেদ, জাহাঙ্গীর হোসেন,তেহসিন হাসান বাদল, মুজিবুর রহমান, কামরুল ইসলাম, রেজাউল ইসলাম, হাবিবুর রহামন, মাহবুর রহমান, দেলোয়ার হোসেন হিমু, শাওন হোসেন, আজিম হোসেন, তপু, মুরাদ হোসেন এর নেতৃত্বে এলাকাবাসী স্বতস্ফুর্তভাবে মানবন্ধনে অংশগ্রহণ করেন। মানববন্ধন শেষে এলাকাবাসী কানাইতলা থেকে সতীঘাটা পুরাতন বাজার পর্যন্ত নিহত ফয়জুরের হত্যাকারীদের ফাসির দাবিতে মিছিল করেন। মানবন্ধনে নিহত ফয়জুরের পিতা, ছোট ভাই ও স্ত্রী -সন্তান কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ফয়জুরকে অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে। সারারাত তারা তাকে হাতুড়ি, লোহার রড, শাবল দিয়ে বেড়ধক পিটিয়ে তাকে হত্যা করেছে। আমরা তাদের হাতে পায়ে ধরেও তাকে বাঁচাতেপারিনি। আমরা ফয়জুরের হত্যাকারীদের ফাসির দাবি জানাই। নিহত ফয়জুরের স্ত্রী প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নিকট তার স্বামীর হত্যার সঠিক বিচারের দাবি জানান।