১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

মণিরামপুরের মেধাবী অপু দাসের সাফল্য

জি এম ফারুক আলম, মণিরামপুর
যশোরের মণিরামপুরের অপু দাস শতবাধা-বিপত্তিকে পেরিয়ে জয় করেছে সাফল্য। তিনি চলতি ২০২৩-২০২৪ শিক্ষা-বর্ষে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় ৭৫ নম্বর পেয়ে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। অদম্য ইচ্ছাশক্তি কঠোর অধ্যবসায়ের কাছে হার মেনেছে দ্বারিদ্রতা। শতবাধা বিপত্তিকে পেরিয়ে ছিনিয়ে এনেছেন সাফল্য। অপু দাস উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা খানপুর গ্রামের ঋষি পল্লীর অসিৎ দাস ও সাধনা দাসের ছেলে। দ্ইু ভাইয়ের মধ্যে অপু বড়। অপু দাস ছোট বেলা থেকেই খুব মেধাবী। পড়া-লেখার প্রতি প্রচন্ড আগ্রহ তার। ছেলের আগ্রহ দেখে পিতা-মাতা কষ্ট ক্লেশ করে দুই ছেলেকে লেখাপড়া শিখাচ্ছেন। অপুর পিতা অসিত দাস ছোট বেলা থেকেই জুতা সেলাই- ও কালি করার কাজ করে থাকেন। তিনি বর্তমানে মণিরামপুর বাজারের রাজগঞ্জ মোড়ে রাস্তার পাশে চটের উপর বসে জুতা সেলাই ও কালি করার কাজ করছেন। জমি- জমা বলতে নিজের পৈতৃক ভিটেটুকুও নেই তাদের। সহায় সম্বলহীন অপুর পিতা অসিৎ দাস কাজের খোঁজে এক আত্মীয়ের মাধ্যমে প্রায় ৪০ বছর আগে খুলনার ডুমুরিয়া থেকে মণিরামপুরে এসেছিলেন। কাজ করতে করতে ওই গ্রামের সাধনা দাসকে বিয়ে করে এখানেই থেকে বসবাস শুরু করেন অসিৎ দাস। শ্বাশুড়ীর দেওয়া তিন শতক জমির উপর ঘর বেঁধে বসবাস করছেন অপুরা। অপুর বড় ভাই তিতাস দাসও খুব মেধাবী । তিনি মণিরামপুর বাজারের একটি ইলেকট্রনিক্সের দোকানে কর্মচারীর কাজ করেন এবং একি সাথে তিনি কেশবপুর সরকারী কলেজে রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়া-লেখা করছেন। অপু দাস ছোট বেলা থেকেই কৃতিত্বেও স্বাক্ষর রেখেছেন সবখানে। স্থানীয় খানপুর ঋষি পল্লীর ব্রাক সেন্টার থেকে ৫ম শ্রেনি পাশ করে মণিরামপুর সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখান থেকে ২০২০ সালে এসএসসি ও মণিরামপুর সরকারী কলেজ থেকে ২০২২ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫.০০ পেয়ে উত্তীর্ন হন। এরপর চলতি ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৭৫ নম্বর পেয়ে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। অপু দাস জানায়, আমার জীবনের বড় আশা ছিল আমি একজন চিকিৎসক হবো। দুঃখী ও অসহায় মানুষের পাশে দাড়াবো। সেই লক্ষ্য নিয়ে আমি চেষ্টা করে গেছি। হয়তো ভর্তির সুযোগ পেয়েছি কিন্তু সামনে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। জানি না আমি কিভাবে মোকাবেলা করবো। আমার অসহায় পিতা-মাতা কিভাবে কি করবেন সেটি আমাকে ভাবিয়ে তুলছে। পিতা-মাতা ভাই শিক্ষক, বন্ধু-বান্ধবসহ সকলের কাছে ঋনী। আমি সকলের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমার পিতা-মাতা খুব কষ্ট করে থাকেন আমি তাদের মুখে হাসি ফোটাতে চাই। মা সাধনা রানী বলেন, আমি অন্য দশ জনের মত আমার ছেলেকে ভালো কাপড় চোপড়, বই-খাতা কিনে দিতে পারিনি। আমাদেও কোন জমি-জমা নেই। ওর বাবা রাস্তায় বসে জুতা সেলাই কালির কাজ করেন। আমার অপু আজ ডাক্তার হবে এই কথা শুনে ভালো লাগছে কিন্তু ওকে যে কিভাবে আমরা পড়াবো তাই ভাবছি। অপুর পিতা অসিৎ দাস বলেন, আমি লেখা পড়া জানিনে, জীবনের সাথে যুদ্ধ করে বড় হয়েছি। ক্ষেত খুলা নেই, জুতার কাজ করে সংসার চালাই। ওরা অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করছে বাবা হয়ে বলতে লজ্জা পাচ্ছি। শুনিছি অপুরি পড়াতি পারলি নাকি সরকারী হাসপাতালের অনেক বড় ডাক্তার হবে। কিন্তু আিমি কিভাবে পড়াবানে। প্রতিবেশি মিলন দাস বলেন, অপু পড়ালেখায় খুব ভালো। পড়া লেখো ছাড়া ও অন্য কিছু বোঝে না। তার ভালো ফলাফলে আমরা এলাকা বাসী খুব খুশী। আমদের পাড়ায় একজন বড় ডাক্তার হবে। প্রতিবেশী গঙ্গা রাণী দাস বলেন, অপু খুব শান্ত স্বভাবের। পড়া লেখার জন্যিই ওর মা-বাবা খুব কষ্ট করে। ওর মা টায়ার টিউব-কাটার কাজ করে। ওর বাবা বাজারে জুতা সেলাই কালির কাজ করে। ওরা খুব অভাবী। অপুর শিক্ষক অধ্যাপক বাবুল আকতার বলেন, কঠোর অধ্যবসায় ও ইচ্ছা শক্তি দিয়ে যেসব কিছু অর্জন করা যায় তার উজ্বজল দৃষ্টান্ত হলো অপু দাস। দারিদ্রতা হার মেনেছে তার ইচ্ছা শক্তির কাছে। আমি তার সর্বাঙ্গীন সাফল্য ও মঙ্গল কামনা করি। আমি তার সামনে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য বিত্তবানদের দৃষ্টি আকর্ষন করছি।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়