প্রতিদিনের ডেস্ক
আগামী ৯ মার্চ ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচন। শহরজুড়ে ব্যানার-ফেস্টুনে নির্বাচনী আমেজ থাকলেও ভোটারদের মধ্যে নেই আগ্রহ। জাতীয় পার্টি নামকাওয়াস্তে প্রার্থী দিলেও মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন আওয়ামী লীগের পাঁচজন। শহরের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের অন্তঃকোন্দল দৃশ্যমান। প্রত্যাশার তুলনায় প্রাপ্তির অমিলে বর্তমান মেয়রবিরোধী মনোভাব সক্রিয়। এসবের বিবেচনায় এবারের ভোটে ফ্যাক্টর অ্যান্টি আওয়ামী লীগ বা বিএনপির ভোট।
স্থানীয়রা বলছেন, ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতি দুই ভাগে বিভক্ত। মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ইকরামুল হক টিটু এবং সাধারণ সম্পাদক মোহিতুর রহমান শান্ত’র পৃথক বলয় রয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে দূরত্ব আরও বেড়েছে এবং প্রকাশ্যে এসেছে। শান্ত’র বিরুদ্ধে গিয়ে বড় ভাই শামীম হকের জন্য নির্বাচন করেছেন নগর সভাপতি ও মেয়র টিটু। এবার আসন্ন সিটি নির্বাচনে শান্তও মেয়র টিটুর বিরোধিতা করবেন, এমন আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
এরই মধ্যে নির্বাচনে আওয়ামী লীগেরই পাঁচজন প্রার্থী হয়েছেন। তারা হলেন বর্তমান মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ইকরামুল হক টিটু, ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামূল আলম, ময়মনসিংহ শহর আওয়ামী লীগের সাবেক আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাদেক খান মিল্কি টজু, ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অধ্যাপক গোলাম ফেরদৌস জিলু, প্রয়াত পৌর মেয়রের ছেলে ও ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য ফারমার্জ আল নূর রাজীব। চার প্রার্থী শহরের নানান সমস্যা ও বর্তমান মেয়রের ভূমিকা নিয়ে প্রকাশ্যে সমালোচনা করছেন। শোনা যাচ্ছে, এ চারজনের কোনো একজনকে সমর্থন দেবেন এমপি ও নগর আওয়ামী লীগের সম্পাদক শান্ত।
অন্যদিকে, ভোটাররা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের দ্বিধাবিভক্তির ফলে ভোটের মাঠে জয় পরাজয়ে ফ্যাক্টর হবে বিরোধী ভোট। তবে দ্বিধাবিভক্ত বিরোধিতা থাকলেও বর্তমান প্রার্থীদের মধ্যে ভোটের মাঠে এগিয়ে মেয়র ইকরামুল হক টিটু।
এ নিয়ে ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান মেয়র ইকরামুল হক টিটো বলেন, এ নির্বাচনটি অত্যন্ত সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক হবে। আমাদের সম্মানিত নাগরিকরা তাদের সঠিক রায়ের প্রতিফলন ঘটাবেন। এটি মাথায় নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। শুরু থেকে আজ পর্যন্ত যে কোনো সংকট, দুর্যোগ দুর্বিপাকে মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। পাঁচটি বছরের উন্নয়ন প্রত্যাশার পাশাপাশি দৈনন্দিন যে প্রত্যাশা, সেটিও সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দিয়ে পূরণের চেষ্টা করেছি। মানুষের পাশে থাকাটাই ইবাদত মনে করি। আমার বিগত দিনের কর্মমূল্যায়ন করে তারা আমাকে ফের সুযোগ দেবেন বলে প্রত্যাশা করি।
ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামূল আলম বলেন, নির্বাচন ঘিরে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। মানুষ পরিবর্তন চায়। এটাই মানুষের মধ্যে আলোচনা। কারণ নগরের দীর্ঘদিনের যানজট প্রতিকারের চেষ্টা নেই। বর্ষায় জলাবদ্ধতা চরম হয়, সমাধানে উদ্যোগ নেই। নগরের কাজে আগে ঠিকাদার ছিল দুই-আড়াইশ। এখন নামে বেনামে তিন-চারজন, উনারাই। আমি দুর্নীতিমুক্ত সিটি করপোরেশন চাই। আমি নির্বাচিত হতে পারলে মাদক, দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও যানজটমুক্ত করবো।
ময়মনসিংহ শহর আওয়ামী লীগের সাবেক আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাদেক খান মিল্কি টজু বলেন, আমি দীর্ঘদিন আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে আছি। জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে আমার প্রতি সহানুভূতি আছে। ভোটারদের মাঝে প্রথম বার্তাটি পৌঁছে দেয় দলের নেতাকর্মীরাই। সেই প্রেক্ষাপটে আমি নিজেকে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছি।
তিনি বলেন, গত ১৫ বছর ময়মনসিংহে অপরিকল্পিতভাবে অনেক কাজ হয়েছে। আমি নতুন পরিকল্পনা জনগণের মাঝে পৌঁছে দেবো। নতুন ভাবনা নিয়ে আসবো। আশা করি, জনগণ আমাকে ভোট দেবে।
ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অধ্যাপক গোলাম ফেরদৌস জিলু বলেন, ছোটবেলা থেকে রাজনীতি করি। ছাত্রজীবনে আনন্দ মোহন কলেজে ছাত্র সংসদে ভিপি নির্বাচিত হয়েছি। সে থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যাত্রা শুরু। আওয়ামী লীগের সাধারণ নেতাকর্মীদের মাঝে আমার অবস্থান সুদৃঢ়। বিভিন্ন বিষয়ে আমাকে কাছে পেয়েছে সবাই। এ কারণে আমি মনে করি, তারা আমাকে সাদরে গ্রহণ করবে। হাইব্রিডদের অত্যাচারে তৃণমূলের কর্মীরা নিজেদের গুটিয়ে ফেলছে। তারা রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন থেকে মুক্তি চায়। তারা আমাদের মতো পোড়খাওয়াদের চায়। আর আমারও এ দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে আমার গায়ে কোনো কাদা নেই।
তিনি বলেন, এ শহরে আমার জন্ম। এখান থেকে বেড়ে ওঠা। এই পরিধি আমার অনেক পরিচিত। এখানকার মানুষ কী চায় আমি বুঝি। বর্তমানে মানুষ নতুন মুখ চায়। তাই আমি আশাবাদী মানুষ আমাকে হতাশ করবে না।
ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য ফারমার্জ আল নূর রাজীব বলেন, এ এলাকায় আমার পরিবারের ছয় পুরুষের ৩০০ বছরের ইতিহাস। আমার পিতা ময়মনসিংহের পরীক্ষিত নেতা। পর পর দুবারের চেয়ারম্যান এবং ময়মনসিংহ পৌরসভার প্রথম মেয়র। তিনি চারদলীয় জোটের সময় আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়েছেন। দুঃসময় পার করে গেছেন। আমার পিতার সঙ্গে শহরবাসীর আত্মিক সম্পর্ক ছিল। সে সুবাদে আমার পিতার প্রতি এবং পরিবারের প্রতি আস্থা ছিল। আশা করি, আমার প্রতিও শহরবাসী আস্থা রাখতে পারবেন। কারণ আমরা কোনো দুর্বৃত্তায়নের সঙ্গে ছিলাম না।
এদিকে, জাতীয় পার্টির প্রার্থী শহীদুল ইসলাম (স্বপন মণ্ডল) বলেন, আমি এর আগেও দুবার নির্বাচন করেছি। জাতীয় পার্টি থেকে আমাকে নমিনেশন দিয়েছে। আমি মনে করি, বর্তমান প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগের পাঁচজন প্রার্থী। বিরোধী দল থেকে আমি একক প্রার্থী। সেহেতু আমার একটা প্লাস পয়েন্ট হতে পারে। এখন তো রাজনীতিতে এমপি-মন্ত্রী গোপালের কপালের মতো। কে কখন কী হয়ে যায়! এজন্য আল্লাহর ওপর ভরসা করে নামছি। পাশাপাশি নেতাকর্মীরাও আমাকে সাপোর্ট দিচ্ছে। আমি চেষ্টা করবো, বিপুল ভোটে জয়যুক্ত হওয়ার জন্য।
তিনি বলেন, জয়ী হলে নগরের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে পরামর্শ করে কাজ করবো। সমস্যাগুলো প্রাধান্য দিয়ে সমাধান করবো। রাজশাহীর মতো নদীর ওপারে উপশহর করে নিয়ে যাবো। তাতে রাজশাহীর মতো ডিজিটাল ও সুন্দর শহর হবে।