ফিলিস্তিনের দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরে রবিবার রাতে ভয়ংকর হামলায় নারী, শিশুসহ অন্তত ১০০ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে বহু মানুষ। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করে শুধু শরণার্থীশিবিরেই নয়, আরো একাধিক স্থানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এই আগ্রাসী হামলা ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের পরিচালিত গণহত্যামূলক যুদ্ধের ধারাবাহিকতা বলে আমরা মনে করছি। গত বছরের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের বন্দুকধারীরা ১ হাজার ২০০ জনেরও বেশি লোককে হত্যা এবং ২৫৩ জনকে জিম্মি করার পর ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজায় বিমান হামলা ও স্থল অভিযান শুরু করে। গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দাবি, এখন পর্যন্ত এই যুদ্ধে ২৮ হাজার ১০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। প্রতিদিন মৃত্যুর খাতায় যুক্ত হচ্ছে বহু অসহায় ফিলিস্তিনি মানুষের নাম। গাজা সিটি থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরের একটি শহর রাফাহ। মিসর সীমান্তসংলগ্ন এই শহরটি এখন গাজার বাস্তুচ্যুত বিপুলসংখ্যক মানুষের আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে। সেখানে এখন প্রায় ১৫ লাখ মানুষ রয়েছে। হামাস-ইসরায়েল লড়াই শুরু হওয়ার পর শহরটিতে জনসংখ্যা আগের তুলনায় পাঁচগুণ বেড়েছে। জনাকীর্ণ শহরটিতে ইসরায়েল আগ্রাসী হামলা চালালে সেখানে মারাত্মক বিপর্যয় ঘটবে বলে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের মতো পশ্চিমা দেশগুলোর পাশাপাশি আরব দেশগুলোও সাবধান করেছে। বাস্তুচ্যুত মানুষদের পরবর্তী ভবিষ্যৎ এখন একেবারেই অজানা। পানি ও খাবারের অভাবে দিন দিন এখানে আশ্রয় নেয়া মানুষদের উদ্বেগ বাড়ছে। এ সংকট থেকে উত্তোরণের কোনো পথ দেখা যাচ্ছে না। এ সংকট ১০০ বছরের পুরনো। সংকট নিরসনে বেশ কয়েকবার নেয়া হয়েছে শান্তি উদ্যোগ। কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকট সমাধানে জাতিসংঘ কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। বরং দ্ব›দ্ব বাড়ছে। মীমাংসা হচ্ছে না। নতুন নতুন সংকট তৈরি হচ্ছে। সংঘাত নেপথ্যের একদিকে ইসরায়েলের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার, অন্যদিকে ফিলিস্তিনের মানুষের নিজ বাসভূমে নিরাপদে বসবাসের স্বপ্ন। ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনিরা বেশকিছু ইস্যুতে মোটেই একমত হতে পারছে না। গত ২৫ বছর ধরেই শান্তি আলোচনা চলছে থেমে থেমে। কিন্তু সংঘাতের কোনো সমাধান এখনো মেলেনি। সাবেক ফিলিস্তিন অর্থাৎ ১৯৪৮-পূর্ববর্তী এই আরব ভূখণ্ডে দুটি পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন নিয়ে জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত থাকলেও ৫৭ সদস্যবিশিষ্ট অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনভুক্ত (ওআইসি) আরব দেশগুলোর মধ্যে অনৈক্য ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের অভাবে এই বিষয়টি কোনোভাবেই সামনে এগোতে পারছে না। ফিলিস্তিনের মুক্তি কিংবা স্বাধীনতার ব্যাপারে ২২ সদস্যবিশিষ্ট আরব লিগও তেমন কোনো অর্থবহ ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে যেমন কোনো বলিষ্ঠ ভূমিকা নিচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্র, তেমনি নিরুপায় হয়ে বসে রয়েছে জাতিসংঘও। রাজনৈতিক টানাপড়েন এবং আরব রাষ্ট্রগুলোর পারস্পরিক বিচ্ছিন্নতায় পরিস্থিতি এখন অনেকটাই বদলে গেছে। ইসরায়েলের সঙ্গে বৈরী সম্পর্ক ছিল এমন অনেক মুসলিম দেশ এখন ইসরায়েলের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক তৈরি করেছে। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকটের তাই আদৌ সমাধান হবে কিনা, তা অনিশ্চিত। আমরা মনে করি, ইসরায়েলি দখলদারিত্বের অধীনে বসবাস এবং ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে জোরপূর্বক বসতি স্থাপন এ অঞ্চলে শান্তি আনতে পারবে না। তাই বাংলাদেশ ফিলিস্তিন এবং ইসরায়েলের দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান নীতি সমর্থন করে।
এ সংকটের সমাধান কোন পথে
Previous article
Next article
আরো দেখুন
নির্বাচন ব্যাহত করতেই কি এই ষড়যন্ত্র!
জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের প্রধান শক্তি ছিল শ্রেণি-ধর্ম-বর্ণ-গোত্রসহ সারা দেশের সব মানুষের ইস্পাতকঠিন ঐক্য। সেই ঐক্যের জোরেই স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এক বছর যেতে...
রাজনৈতিক কাদা ছোড়াছুড়ি কেন
জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের প্রধান শক্তি ছিল শ্রেণি-ধর্ম-বর্ণ-গোত্রসহ সারা দেশের সব মানুষের ইস্পাতকঠিন ঐক্য। সেই ঐক্যের জোরেই স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এক বছর যেতে...