কয়রা সংবাদদাতা
কলিম ঢালী। বয়োবৃদ্ধ অসহায় ব্যক্তি। সারাজীবন কেটেছে দিনমজুরীর কাজ করে। ছোট থাকতে পিতা মারা যায়। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছোট। তার মা পরের বাড়ি কাজ কর্ম করে তাদেরকে লালন পালন করেন। বড় ভাই কয়েকবছর পূর্বে মৃত্যুবরণ করেছেন। মেঝ ভাইয়ের বয়স ৭৯ বছর। কলিম ঢালীর আট সন্তান। বড় ছেলের বয়স ৪৯ বছর। অথচ জাতীয় পরিচয়পত্রে কলিম ঢালীর জন্ম তারিখ দেখানো হয়েছে ১৯৮৪ সাল। সে হিসেবে বড় ছেলের চেয়ে তার বয়স ৯ বছর কম। জানা যায়, খুলনা জেলার কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের জয়পুর গ্রামের মৃত আত্তাপ ঢালীর ছোট ছেলে কলিম ঢালী। তার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ৪৭১৫৩৭২৬৫৪৫৮৩। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ি জন্ম তারিখ ২ মে, ১৯৮৪। তার পাঁচ ছেলে ও তিন মেয়ে। প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পরে দ্বিতীয় বিয়ে করেন তিনি। প্রথম স্ত্রীর পাঁচ ছেলে আর দ্বিতীয় স্ত্রীর তিন মেয়ে। সন্তানেরাও তেমন স্বচ্ছল নয়। সকলেই বিয়ের পরে পৃথক। তারা যে টাকা দেন তাতে কলিম ঢালীর সংসার খরচ চলে না। বৃদ্ধ বয়সে স্বামী-স্ত্রী দু’জনে অন্যের বাড়ি দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন। ভিটে বাড়ি ছাড়া তেমন কোন জমি নেই তাদের। সরকারের মহতী উদ্যোগ বয়স্ক ভাতা পেতে আবেদনও করতে পারছেন না। কলিম ঢালী জানান, বেশ কয়েক বছর পূর্বে এলাকার একজন ব্যক্তি এনআইডি’র তথ্য সংগ্রহে বাড়িতে বাড়িতে আসেন। তখন তিনি দিনমজুরীর কাজে বাইরে ছিলেন। কিভাবে কি তথ্য লিখে নেন, সেটা তিনি জানেন না। পরবর্তীতে আইডি কার্ড পাওয়ার পরে এলাকার গণ্যমাণ্য ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি, উপজেলা নির্বাচন অফিসে যেয়েও সমাধান করতে পারেন নি। লেখাপড়া না জানায় সংশোধনের জন্য কিভাবে কি করতে হবে সেটাও তিনি জানেন না। তিনি বলেন, দিনমজুরীর কাজে এখন আগের মত টাকা পাই না। বয়সের ভারে ভালোভাবে কাজ করতে পারিনা। দিনে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা পাই। তাও প্রতিদিন কাজ হয় না, অসুস্থ থাকি। খাওয়া খরচের পাশাপাশি ওষুধ কেনা লাগে। আমার স্ত্রীও দিনমজুরের কাজ করেন। দু’জনের আয় দিয়েও ভালোভাবে সংসার চলে না। মহারাজপুর ইউয়িন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, ভোটার তালিকা যারা করেছেন তারা অদক্ষ। গুরুত্বপূর্ণ এনআইডি কার্ড অদক্ষ লোকদের দিয়ে তৈরি করার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। ১৮ কোটি জনসংখ্যার দেশে দক্ষ জনসংখ্যার অভাব এটা ভাবতে কষ্ট লাগে। তিনি বলেন, এনআইডি কার্ডের ভুলে যাদের বয়স হয়নি এমন লোকও ভাতা পাচ্ছে, আবার বয়স্করাও বঞ্চিত হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে আমরা সমাধানের চেষ্টা করছি। উনার বিষয় জেনেছি। উনাকে প্রথমে নির্বাচন অফিসের মাধ্যমে এনআইডি কার্ড সংশোধন করতে হবে, পরে বয়স্ক ভাতার ব্যবস্থা করা যাবে। নিয়মানুযায়ি তার সার্বিক সহায়তার আশ্বাস দেন তিনি। কয়রা উপজেলা সহকারী নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ আসাদুর রহমান বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক। এনআইডি সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদন করতে হবে। নিয়মানুযায়ি আবেদন করলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব।