২০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ৫ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

নষ্ট হওয়ার পথে ২৮০০ পুঁথি, সংরক্ষণে উদ্যোগ বাংলা একাডেমির

প্রতিদিনের ডেস্ক
বাতাস প্রবেশ রোধে লাল সালুতে বাঁধা থাকলেও পুরোপুরি নষ্ট হওয়ার পথে বাংলা একাডেমির সংগ্রহে থাকা প্রায় দুই হাজার ৮শ পুঁথি। এ সংগ্রহশালায় থাকা পুঁথিগুলোর মধ্যে অধিকাংশের অবস্থাই নাজুক। যদিও পুঁথিগুলো আধুনিক পদ্ধতিতে সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলা একাডেমি। ফলে পাঠক চাইলে কম্পিউটার, ল্যাপটপ ও মোবাইলে নিয়ে পড়তে পারবে।
পুঁথি মূলত হস্তলিখিত প্রাচীন গ্রন্থ বা পুস্তিকা। বাংলা মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কারের আগে সব কিছুই হাতে লেখা হতো। কাগজ আবিষ্কার হওয়ার আগে পুঁথি লেখার জন্য ব্যবহৃত হতো চামড়া, ভুজপাতা, তেরেটপত্র, গাছের বাকল, কলাপাতা ও তালপাতা। সময়ের পরিক্রমায় এগুলো আজ ধ্বংসের পথে।
পুঁথি সাধারণ আরবি, উর্দু, ফারসি ও হিন্দি ভাষার মিশ্রণে লেখা। বর্তমানে বাংলা একাডেমির পুঁথি পড়ার মতো অবস্থায় নেই, শুধু দেখা যায়। এগুলো পাঠকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে বই আকারে প্রকাশের পাশাপাশি ডিজিটালাইজেশন করা হবে বলে জানিয়েছেন বাংলা একাডেমির সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. মো. হাসান কবীর।
এ প্রসঙ্গে ড. মো. হাসান কবীর বলেন, বাংলা একাডেমির সংগ্রহে রয়েছে ২ হাজার ৮শ পুঁথি। এগুলোর অধিকাংশের অবস্থাই নাজুক, পড়ার মতো অবস্থায় নেই। সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছি। ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণের পাশাপাশি বিদেশিদের সহায়তায় বই আকারে প্রকাশ করা হবে। যাতে সবাই পড়তে ও বুঝতে পারে। বিভিন্ন ভাষায় লেখা পুঁথিগুলো বাংলায় রূপান্তর করা হবে। আর এমনভাবে সংরক্ষণ করা হবে, যাতে শত বছর টেকসই হয়।’
বাংলা একাডেমি জানায়, বিভিন্ন লিপির বাংলা ও অন্যান্য লিপির পুঁথিগুলো পাঠোদ্ধার করা হবে। পুঁথির লিপ্যন্তর ও সম্পাদনা করে বাংলায় বই প্রকাশ করবে বাংলা একাডেমি। তবে আধুনিক পদ্ধতি সংরক্ষণের অভাবে এগুলোর অবস্থা নাজুক। সব পুঁথির ভৌত সংরক্ষণ ও ডিজিটাল মহাফেজ (দলিলপত্র সংরক্ষিত করে রাখার কক্ষ) করা এবং জাতীয় পর্যায়ে বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির ঐতিহ্য রক্ষায় প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। ‘পুঁথির লিপ্যন্তর ও বইয়ের ভাষান্তর করে বাংলায় বই প্রকাশ এবং পুঁথি সামগ্রীর ভৌত সংরক্ষণ ও ডিজিটাল মহাফেজকরণ পাইলট প্রকল্পের আওতায় এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। অনুমোদনের পর প্রকল্পটি দেড় বছরে বাস্তবায়ন করা হবে।
প্রকল্প গ্রহণের যৌক্তিকতা প্রসঙ্গে বাংলা একাডেমি জানায়, মহান ভাষা আন্দোলনের প্রত্যক্ষ অর্জন বাংলা একাডেমি। ১৯৫৫ সালের ৩ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির বুদ্ধিবৃত্তিক এবং মননশীল চর্চা ও গবেষণায় কাজ করে আসছে। বাংলা সাহিত্যের উৎসাধার চর্যাপদ, লোককাহিনি ও সংস্কৃতির উৎসস্থল পুঁথি সাহিত্য। প্রাচীন, মধ্যযুগ ও পরবর্তীকালে বাংলাদেশ ভূখণ্ডের গ্রামগঞ্জে পুঁথি সাহিত্যের রচনা ও উপস্থাপনা তথা পুঁথিপাঠ আসরের আয়োজনের ইতিহাস সবার জানা। বাংলাসাহিত্যের আদিকাল থেকে আধুনিককাল পর্যন্ত বাংলা লিপির ধরন ও ব্যবহারে নানামাত্রিক পরিবর্তন ঘটেছে। ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন ভাষার বিভিন্ন ধরনের লিপি সংবলিত পুঁথি-সাহিত্যের চর্চা ও জনপ্রিয়তা বাংলাসাহিত্যের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য বিষয়।
বাংলা সাহিত্যের উৎস অনুসন্ধানের পর্যবেক্ষণে পুঁথিগুলো সংস্কৃত, নাগরী, বাংলা, আরবি, ফারসি প্রভৃতি লিপি ও ভাষায় রচিত। এ ধরনের প্রায় দুই হাজার ৮০০টি পুঁথি বাংলা একাডেমির সংগ্রহশালায় রয়েছে। পুঁথিগুলো মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন লিপিতে হাতে লিখিত পুঁথিগুলো লিপ্যন্তর করার মাধ্যমে পাঠোদ্ধার করা এবং প্রয়োজনীয় সম্পাদনা করে বাংলা ভাষায় বই প্রকাশ করা অত্যন্ত জরুরি। বাংলা একাডেমির পুঁথিগুলো আধুনিক পদ্ধতিতে সংরক্ষিত না থাকায় সেগুলো প্রায় ধ্বংসের পথে।
বাংলা একাডেমি জানায়, দীর্ঘদিনের সংরক্ষিত প্রাচীন ও মধ্যযুগের সাহিত্যভিত্তিক ঐতিহ্যবাহী পুঁথি-পাণ্ডুলিপিগুলো নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে ভৌত সংরক্ষণ ও ডিজিটাল পদ্ধতিতে মহাফেজ করা হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য টেকসইভাবে সংরক্ষণ, পাঠযোগ্য ও ব্যবহারোপযোগী করার লক্ষ্যে প্রকল্পটি সম্পূর্ণ সরকারি অর্থে বাস্তবায়ন করা হবে।
প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমগুলো
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সরঞ্জামাদি ক্রয়, গবেষণা ও উন্নয়ন, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম কেনা, ভবন ও স্থাপনার কাজ করা হবে। এছাড়া ১৩ জন পরামর্শক, ২০টি আসবাবপত্র, পাঁচটি প্রকাশনা ও একটি গাড়ি কেনা হবে। প্রকল্পের আওতায় আপ্যায়ন ব্যয়, শ্রমিকের মজুরি, সেমিনার/কনফারেন্স ব্যয়, বিদ্যুৎ, প্রচার ও বিজ্ঞাপন, বইপত্র ও সাময়িকী, কম্পিউটার সামগ্রী, মুদ্রণ ও বাঁধাই, অন্যান্য মনিহারি ও ব্যবহার্য দ্রব্যাদি কেনা হবে।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়