১৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

ফেরি ও ঘাট সংকটে দৌলতদিয়ায় ভোগান্তির শঙ্কা

প্রতিদিনের ডেস্ক
পদ্মা সেতু চালুর পর পাল্টে যায় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত দৌলতদিয়া ঘাটের চিত্র। নেই আগের মতো যানবাহনের লম্বা সারি ও যাত্রী। নেই হকারদের হাঁকডাক। আগে ২৪ ঘণ্টায় দৌলতদিয়া প্রান্ত দিয়ে ৪ থেকে ৫ হাজার যানবাহন পদ্মা নদী পারাপার হলেও সেই সংখ্যা এখন দুই হাজারের নিচে।
তবে পোস্তগোলা সেতুর (বুড়িগঙ্গা-১) সংস্কার কাজ শুরু হওয়ায় ঢাকাসহ ২১ জেলার যানবাহন চলাচলে বিকল্প সড়ক হিসেবে আলোচনায় রয়েছে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট। ফলে আবারও যানবাহন ও যাত্রীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠবে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ঘাট। তবে এ রুটে ফেরি ও দৌলতদিয়া প্রান্তে ঘাট সংকটে চিরচেনা রূপে ফেরার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে পূর্বের চেয়ে ভয়াবাহ অবস্থার আশঙ্কা করছেন যাত্রী ও যানবাহনের চালকরা।
দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম নৌপথ। বর্তমানে এ নৌপথে ছোট বড় ৮ থেকে ১২টি ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে এবং দৌলতদিয়া প্রান্তের ৭টি ফেরি ঘাটের মধ্যে সচল রয়েছে মাত্র ৩টি ঘাট। ফলে যাত্রী ভোগান্তি কমানোর পাশাপাশি ২১ জেলার যানবাহন সামাল দিতে ফেরি ও ঘাট বৃদ্ধির বিকল্প নেই।
এদিকে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পোস্তগোলা সেতুর (বুডড়িগঙ্গা সেতু-১) সংস্কারকাজ ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে ৮ মার্চ পর্যন্ত চলমান থাকবে। এ অবস্থায় সাময়িকভাবে যান চলাচল বন্ধ থাকায় ওই সড়কে চলাচলকারী যানবাহনের বিকল্প সড়ক ব্যবহারের সাধারণ নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে।
বরিশাল বিভাগের ছয় জেলা (বরিশাল, ভোলা, বরগুনা, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, পিরোজপুর), খুলনা বিভাগের ১০ জেলা (খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, যশোর, কুষ্টিয়া, নড়াইল, মাগুরা, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর) ও বৃহত্তর ফরিদপুর অংশের পাঁচ জেলা (ফরিদপুর, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, রাজবাড়ী) থেকে যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে (২২ ফেব্রুয়ারি থেকে) যে নির্দেশনা মেনে চলতে হবে তা হলো- ঢাকা মহানগরে যানবাহন ঢুকতে ও বের হতে দৌলতদিয়া, পাটুরিয়া, নবীনগর, আমিনবাজার, গাবতলী রুট অনুসরণ করতে হবে। সায়েদাবাদের পরিবর্তে গাবতলীতে যাত্রীবাহী বাস থামবে।
ঢাকা বিভাগের অন্য জেলা (ঢাকা-আংশিক), মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইলে (আংশিক) যানবাহন যাতায়াতে দৌলতদিয়া, পাটুরিয়া, নবীনগর, বাইপাইল, চন্দ্রা, ভোগড়া চৌরাস্তা হয়ে এশিয়ান হাইওয়ে ব্যবহার করতে হবে।
রাজশাহী, রংপুর বিভাগমুখী যানবাহনকে লালন শাহ সেতু (কুষ্টিয়া, পাবনা) ব্যবহার করে চলাচল করতে হবে। ময়মনসিংহ বিভাগ ও টাঙ্গাইল জেলায় (আংশিক) যাতায়াতে লালন শাহ সেতু (কুষ্টিয়া, পাবনা) ও বঙ্গবন্ধু সেতু ব্যবহার করতে হবে।
সিলেট বিভাগ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যানবাহন চলাচলে দৌলতদিয়া, পাটুরিয়াা, নবীনগর, বাইপাইল, চন্দ্রা, ভোগড়া চৌরাস্তা হয়ে এশিয়ান হাইওয়ে ব্যবহার করতে হবে। চট্টগ্রাম বিভাগে যাতায়াতে পদ্মা সেতু হয়ে শ্রীনগর, মুন্সীগঞ্জ, মুক্তারপুর সেতু, তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু, মদনপুর রুট ব্যবহার করতে হবে। অথবা শরীয়তপুর, চাঁদপুর রুটের ফেরি ব্যবহার করতে হবে।
স্থানীয় তোফাজ্জেল, মেজেক আলী শেখ ও যাত্রী সোহেল রানা, শাহদত হোসেন, রিয়াজুল ইসলাম বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটে কোনো যানজট নেই। সবাই ভালোভাবে যাওয়া আসা করতে পারছেন। বর্তমানে দৌলতদিয়ায় ৩টি ফেরিঘাট চালু ও ৮ থেকে ১২টি ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার চলছে। পদ্মা সেতুর ওই রাস্তা বন্ধ থাকলে দৌলতদিয়ায় আগের মতো গাড়ির চাপ বাড়বে। ফলে ভোগান্তি কমাতে এরুটে ফেরি বাড়ানোসহ রোড ক্লিয়ার রাখতে হবে। আর যদি ফেরি কম থাকে বা রোডের শৃঙ্খলা না থাকে তাহলে ভোগান্তি হবে।
যানবাহনের চালক দুলাল হোসেন, মামুন, সুপারভাইজার আজিম বলেন, পদ্মা সেতু চালুর আগে এই ঘাটে তাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা বা কখনো ২৪ ঘণ্টাও সিরিয়ালে থাকতে হয়েছে। পোস্তগোলা ব্রিজের কাজের কারণে সব গাড়ি যদি আবার এই ঘাট দিয়ে যায় তাহলে আগের মতো ৭-৮ ঘণ্টা জ্যাম থাকবে। সেক্ষেত্রে এখানে ফেরি বাড়ানো, নিয়ম-কানুন ও আইন শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে হবে। শৃঙ্খলা থাকলে ভোগান্তি কিছুটা কমবে। সর্বপরি ফেরি সংখ্যা বাড়ানো ও ঘাট ভালো রাখতে হবে।
তারা আরও বলেন, দৌলতদিয়া দিয়ে এখন আগের মতো গাড়ি যায় না। ফলে ঘাটে গাড়ির চাপ কম থাকার কারণে ঘাটের অবস্থা বেশি ভালো না। তারপর আবার ঘাট চালু মাত্র ৩টি। সব কিছু ঠিক না থাকলে পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভয়াবহ হবে।
বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ঘাট কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মো. সালাউদ্দিন বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আর যানবাহন আসলে সমস্যা নেই, এ বিষয়ে তারা প্রস্তুত রয়েছেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বর্তমানে ১২টি ফেরি দিয়ে যানাবাহন পারাপার করা হচ্ছে। চাপ সামাল দেওয়া সম্ভব, প্রয়োজনে ফেরি ও ঘাট বাড়বে। সবকিছু পরিবেশ পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে।
তিনি আরও বলেন, পোস্তগোলা ব্রিজ বুড়িগঙ্গার ওপর একমাত্র ব্রিজ না, ওখানে বাবু বাজার ও ব্রথেলা ব্রিজও রয়েছে। তারপরও গাড়ি পারাপারে তারা সর্বচ্চো ব্যবস্থা নেবেন।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়