২৮শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ১১ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ 

লকবিট সাইবার অপরাধীদের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যের অভিযান

প্রতিদিনের ডেস্ক
বিশ্বের অন্যতম সাইবার অপরাধী গ্রুপ লকবিটের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছে যুক্তরাজ্য। ইউকের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) সফলভাবে রাশিয়া থেকে পরিচালিত র‍্যানসমওয়্যার গ্রুপটির সিস্টেম পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হয়েছে বলে দাবি জানিয়েছে। খবর বিবিসি।
সক্রিয় র‍্যানসমওয়্যার গ্রুপটি মূলত বহুজাতিক কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্য করে র‍্যানওয়্যার হামলা চালিয়ে আসছিল। তারা প্রতিষ্ঠানগুলোর কম্পিউটার হ্যাক করে তথ্য ও ফাইল এনক্রিপ্ট করে মুক্তিপণ বা র‍্যানসম দাবি করত। এছাড়া প্রতিষ্ঠানের তথ্য চুরি করে তা অনলাইনে ফাঁস করার হুমকিও দিত। সাম্প্রতিক মাসগুলোয় বিশ্বের বেশ কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানে লকবিট ও এর সহযোগীরা সাইবার হামলা চালিয়েছে বলে জানা গেছে।
মূলত র‍্যানসমওয়্যার এমন এক ধরনের ক্ষতিকারক সফটওয়্যার যা ডাটা এনক্রিপ্ট করার সক্ষমতা রাখে। আর সেসব ডাটা ডিক্রিপ্ট করতে একটি ডিজিটাল কি ব্যবহার করতে হয়। লকবিটের মতো গ্রুপ এ ডিজিটাল কি বিনিময়ে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিত।
২০১৯ সালের দিকে লকবিটের আবির্ভাব ঘটে। বর্তমানে এটি বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী র‍্যানসমওয়্যার গ্রুপ হিসেবে পরিচিত। ধারণা করা হয়, সাইবার অপরাধের ২০-২৫ শতাংশ বাজার লকবিটের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
২০২৩ সালের জানুয়ারিতে লকবিট রয়্যাল মেইলে হামলা চালায়. ফলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পোস্টাল পরিষেবা ব্যাহত হয়। এছাড়া গত নভেম্বরে ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড কমার্শিয়াল ব্যাংক অব চায়নাও (আইসিবিসি) তাদের হামলার শিকার হয়েছিল। গ্রুপটির হামলার শিকার হওয়া অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এনএইচএস), আইনি প্রতিষ্ঠান অ্যালেন অ্যান্ড ওভেরি এবং অ্যারোস্পেস কোম্পানি বোয়িংয়ের সরবরাহকারীরা।
যুক্তরাজ্যের নেতৃত্বে সাইবার অপরাধীদের বিরুদ্ধে এটি প্রথম বড় অভিযান। যুক্তরাজ্যের দীর্ঘ অভিযানে ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই), ইউরোপোল ও অন্যান্য দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী সহায়তা করেছে। লকবিটের সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ নেয়ার মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রুপটির কার্যক্রম সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যের মধ্যে রয়েছে হামলার শিকার হওয়া ভুক্তভোগীদের তথ্য, মুক্তিপণের অর্থের পরিমাণ ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্য। এছাড়া লকবিট বিভিন্ন সাইবার অপরাধীদের কাছে তাদের অপরাধমূলক পরিষেবা সরবরাহ করে আসছিল। তারা হ্যাকিং অপারেশনসহ ক্ষতিকারক সফটওয়্যার সরবরাহ করেছিল। কিন্তু অভিযানের পর লকবিটের ওয়েবসাইটে সাইবার অপরাধীরা লগ ইন করার চেষ্টা করলে তাদের তথ্য এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে রয়েছে এমন বার্তা দেখানো হচ্ছে।
অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল লকবিটের দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রমকে ব্যাহত করা। পাশাপাশি গ্রুপটির কার্যক্রম জনসমক্ষে প্রকাশ করার মাধ্যমে জনসচেতনতা বাড়ানো।
যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি সেন্টারের সাবেক প্রধান সিয়ারান মার্টিন বিবিসিকে জানান, অভিযানটি র‍্যানসমওয়্যার গ্রুপগুলোর বিরুদ্ধে চালানো এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ অভিযান।
তিনি আরো জানান, লকবিটের মতো গ্রুপ প্রথাগত আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নাগালের বাইরে থাকলেও, সাইবার অপরাধ কমাতে ও সাইবার প্রতিরক্ষা বাড়ানোর জন্য এ ধরনের বিশেষ অভিযান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অভিযানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, এ অভিযান লকবিটের দ্রুত পুনরুত্থান রোধ করবে। পাশাপাশি যুক্তরাজ্য এখন সাইবার হামলা থেকে নিরাপদ থাকবে।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়