ভারতের বস্ গৌতমের ডেরায় ঢাকার সুমন সিণ্ডিকেটের পাচার করা ৫ কেজি সোনাসহ একজনকে আটক করলো বিএসএফ

0
39

সুন্দর সাহা
বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাচারকালে আন্তর্জাতিক সোনাপাচারকারী বস্ গৌতম ও অপু সাহার ডেরা থেকে দুটি বড় ও ৩০টি ছোট সোনার বারসহ এক পাচারকারীকে আটক করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। জব্দ সোনার ওজন প্রায় ৪ কেজি ৪ কেজি ৮২৯ গ্রাম। উদ্ধারকৃত সোনাগুলোর যার আনুমানিক বাজার মূল্য ভারতীয় মুদ্রায় ৩ কোটি ৯ লাখ ৭০ হাজার রুপি । বিএসএফ সদস্যরা এসময় চোরাচালান চক্রের এক সদস্যকেও আটক করেছে। এই সোনার চালান আটক হয়েছে বাংলাদেশের বেনাপোল পোর্ট থানার পুটখালী সীমান্তের ওপারে আংরাইল এলাকা থেকে। এসময় এক ভারতীয় চোরাচালানকারী বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাচারের চেষ্টা করছিল। সে সোনাসহ হাতেনাতে ধরা পড়েছে। বিএসএফ সূত্রে জানা গেছে, ২১ জানুয়ারি বিকেলে তিনজন পাচারকারী ইছামতি নদী (আন্তর্জাতিক সীমানা) থেকে বন্য ঘাস এবং বাঁশের ঝোপের ঘন বনের মধ্য দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে। তারা গোপনে ভারতীয় সীমান্তের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। চোরাকারবারীদের দেখতে পেয়ে তাদের চ্যালেঞ্জ করে তাড়া করে বিএসএফ সদস্যরা। এসময় প্রসেনজিৎ মন্ডল নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া কাপড়ের বেল্ট খুলে স্কচটেপে প্যাঁচানো অবস্থায় দুটি বড় ও ৩০টি ছোট সোনাের বার জব্দ করা হয়। প্রসেনজিৎ মণ্ডলের বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনা জেলার হালদার পাড়ায়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রসেনজিৎ জানিয়েছে, আংরাইলের ঘোষপাড়া গ্রামের এক ব্যক্তি তার বাড়িতে আসেন এবং বাংলাদেশ থেকে সোনা আনার প্রস্তাব দেন। এরপর দুজনে ইছামতি নদীর তীরে পৌঁছালে অন্য দুজনের সঙ্গে দেখা হয়। তাকে একটি মোবাইল ফোন বহন করতে বলা হয়েছিল, যাতে তাকে পাচারকারীরা সহায়তা করতে পারে। এছাড়াও বিএসএফ সেন্ট্রির কার্যকলাপ ও চলাচলের উপর গভীর নজর রাখতে এবং ফোনে তাকে অবহিত করতে পারে। ইছামতি নদী সাঁতরে পার হয়ে সেখানে আসে এক বাংলাদেশি। তীরে তার হাতে সোনা তুলে দিয়ে আবার দেশে ফিরে যায়।’ ওই তিন জন সোনা নিয়ে ভারতের দিকে ফিরে যাওয়ার সময় তাকে ফোনে জানানো হয়, বিএসএফ সদস্যরা তাদের দেখে ফেলেছে। দ্রুত তাদের পালিয়ে যেতে বলা হয়। এতে দুজন পালিয়ে গেলেও সে ধরা পড়ে যায়। টাকার বিনিময়ে তাকে এ কাজ করতে বলা হয়েছে, বলেও জানায় প্রসেনজিৎ। গ্রেফতার চোরাকারবারি এবং জব্দ করা সোনা নিয়ে আইনিগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কলকাতার ডিআরআই-এর কাছে হস্তান্তর করা হয়। দক্ষিণবঙ্গ সীমান্তের জনসংযোগ কর্মকর্তা ডিআইজি এ কে আর্য বলেন, ‘চোরাকারবারিরা দরিদ্র ও নিরীহ মানুষকে সামান্য অর্থের প্রলোভন দিয়ে ফাঁদে ফেলে।’ সীমান্তের বাসিন্দাদের সোনা চোরাচালান সংক্রান্ত কোনও তথ্য পেলে, বিএসএফ-এর ‘সীমা সাথী’ হেল্পলাইন নম্বরে তথ্য দেওয়ারও অনুরোধ জানান তিনি। বাংলাদেশ থেকে ভারতে সোনা পাচারের ট্রান্সজিট হচ্ছে যশোর জেলার বিভিন্ন সীমান্ত। এরপরই ঝিনাইদহের মহেশপুর এর্ব চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন সীমান্তের অবৈধ পকেট ঘাট। ভারত সীমান্তের বহুল আলোচিত আন্তর্জাতিক সোনাপাচারকারী আংরাইলের কুখ্যাত বস্ গৌতম, শীর্ষ সোনা পাচারকারী অপু সাহা আর মাফিয়া ডন নাসির ও ডাকু, গোল্ট সম্রাট আজগার ও রবিউল হচ্ছে এই রাজ্যের ভারতের ওপারের আলোচিত কিং। এসব সিন্ডিকেটে বাংলাদেশ থেকে সোনার বারের যোগানদাতা হিসেবে সব থেকে বেশি ভূমিকা রাখে আন্তর্জাতিক সোনা পাচারকারী ঢাকার সুমন, ইমরাণ, আরিফ, সোহাগ, মিন্টু, খবির, রাম এবং চট্রগ্রামের ভোলা। এদের নেপথ্যে অনেক হুমড়া-চোমড়া রয়েছে। যাদের মধ্যে সোনার সবচেয়ে বড় যোগানদাতা শার্শার সোহেল-কুদ্দুস-বকুল-তবি-তরিকুল এবং বেনাপোলের রমজান-নাসির-রেজা-জিয়া-বারোপোতার রেজা-কামাল-জামাল-বিল্লাল-ইজাজ-ইস্রাফিল-পলাশ-মাফিয়া ডন বাদশা-তরিকুল ও মেম্বার সিন্ডিকেটসহ সংঘবদ্ধ অন্ততঃ ২০টি বড় সিন্ডিকেট। এছাড়া ছোট-ছোট শতাধিক সিণ্ডিকেট তো রয়েছেই। সীমান্তের সূত্রগুলো আরও জানায়, ভারত সীমান্তের শীর্ষ সোনা পাচারকারী সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণকর্তা বস্ গৌতম, অপু সাহা, আজগার, রবিউল আর নাসির। আলোচিত বস্ গৌতম হচ্ছে পুরাতন বনগাঁ এলাকার ডন। আংরাইল এলাকায় তার সোনা-ফেনসিডিল-মদ ও গাঁজা পাচারের ডেরা। কুখ্যাত বস্ গৌতমের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে সাতক্ষীরা থেকে দর্শনা পর্যন্ত অবৈধ সব সীমান্তঘাট। বস্ গৌতমকে হিস্যা দিয়ে তার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রতিদিন অপু সাহার মন মন সোনার বার ভারতে পাচার হচ্ছে। অপু সাহার বাড়ি ভারতের উত্তর ২৪ পরগণা জেলার বাগদা এলাকায়। শার্শার উত্তরাংশ থেকে চৌগাছা এবং এবং মহেশপুরের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে পাচার হওয়া সোনা বার যায় বাগদা সিন্ডিকেটের এক অংশের প্রধান বিতর্কিত অপু সাহার সিন্ডিকেট এবং আরেক অংশের প্রধান নাসির ও ডাকুর সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। এসব সিন্ডিকেটের সব সোনা পাচারের মাধ্যমে অপু সাহা ও নাসিরের ঘাড়ে শওয়ার হয়ে বস্ গৌতম দেদারসে ব্যবসা করে যাচ্ছে। এরা সব ঘাট ম্যানেজ করেই সোনা পাচারের ব্যবসা করে বলে সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। সীমান্তের সূত্রগুলো জানায়, গত ২১ জানুয়ারী আটক সোনার চালান আসে ঢাকার আন্তর্জাতিক সোনা পাচারকারী সুমন কুমারের সিণ্ডিকেট থেকে। বস্ গৌতমের ডেরায় পাঠানোর জন্য আলোচিত সুমনের অন্ততঃ ১০ কেজি সোনা মজা পড়ে বারোপোতার কুখ্যাত সোনা ও ফেনসিডিল সম্রাট রেজার সিণ্ডিকেটে। বারোপোতার রেজা সিণ্ডিকেটের মাধ্যমে বাংলাদেশের পুটখালী সীমান্ত দিয়ে এই সোনা পাচার করে ভারতে বস্ গৌতমের ডেরায়। সুমনের পাঠানো সোনার চালান বারোপোতার রেজার মাধ্যমে সীমান্ত পার করে ভারতে নেয়ার পর সোনার চালানটি আটক করে বিএসএফ জওয়ানরা। তবে ১০ কেজে সোনার বার কিভাবে প্রায় ৪ কেজি ৪ কেজি ৮২৯ গ্রাম হলো সেটিই বড় প্রশ্ন। সূত্রগুলো জানায়, বিজিবি এবং বিএসএফ-এর অভিযানে কখনও কখনও সোনার বার সীমান্তের দু পারেই আটক হচ্ছে। আটক হচ্ছে না কেবল পুলিশের হাতে। অদৃশ্য কারনে পুলিশি নিস্ক্রয়তায় সিন্ডিকেকেটের হোতারা থেকে যাচ্ছে অধরা। যা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সীমান্তবাসীসহ সাধারন মানুষের মাঝে নানান প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।