প্রতিদিনের ডেস্ক
রমজান মাস ঘিরে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করার পরিকল্পনা করছে বিএনপি। ইফতার কূটনীতি থাকবে গুরুত্বে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিকে ইস্যু বানিয়ে সরকারবিরোধী কার্যক্রমও জোরদার করতে চায় দলটি। মাসজুড়ে দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোও নানান কর্মসূচিতে তৎপর থাকবে।
দলীয় সূত্র জানায়, চলমান আন্দোলন বেগবান করতে রমজান সাংগঠনিক মাস হিসেবে গুরুত্ব পাচ্ছে বিএনপির হাইকমান্ডের কাছে। বিশেষ করে কেন্দ্র থেকে মাঠ পর্যায়ের কোন্দল নিরসন করে দলকে আরও ঐক্যবদ্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি থেকে শুরু করে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর বিভিন্ন পর্যায়ে রদবদল বা ক্ষেত্রবিশেষ নতুন কমিটিরও চিন্তা রয়েছে।
সূত্র জানায়, রমজান মাসে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সাধারণ মানুষকে আরও ক্ষুব্ধ করবে। সরকারের আরও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বাজার। এ অবস্থায় এসব ইস্যুতে সরব থাকবে দলটি।
দফায় দফায় বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিসহ জনদুর্ভোগ সামনে রেখে সভা, সেমিনার, সমাবেশ, ভুখা মিছিল, মানববন্ধন, লিফলেট বিতরণের মতো কর্মসূচির পরিকল্পনা রয়েছে দলটির। রোজার কর্মসূচির কারণে যেন সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে না হয় এবং নেতাকর্মীদের খুব কষ্ট না হয় সে বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে কর্মসূচির কথা ভাবা হচ্ছে। নেতাকর্মীদের চাঙা রেখে সংগঠন গোছানো ও আন্দোলনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে বিএনপির। রোজার মধ্যে আবার দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভার তাগিদও রয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, রোজার প্রথম দিনে রাজধানীর লেডিস ক্লাবে আলেম-ওলামাদের সঙ্গে, এরপর বিভিন্ন পেশাজীবী, রাজনৈতিক দল এবং ওয়েস্টিন হোটেলে বিদেশি কূটনীতিকদের সম্মানে বিএনপির পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে ইফতারের আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে। এর বাইরে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি, প্রতিটি থানাভিত্তিক এবং বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের পক্ষ থেকে ঢাকায় ইফতার মাহফিলের আয়োজন থাকবে।
এছাড়া দেশের সাংগঠনিক ১০ বিভাগ, জেলা, থানা পর্যায়েও বিএনপির পক্ষ থেকে ইফতার মাহফিলের আয়োজন থাকবে। দলের অধিকাংশ ইফতার মাহফিলে লন্ডন থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকবেন, কেন্দ্রীয় নেতারাও সেখানে যাবেন। এসবের পাশাপাশি মিত্র দলগুলোর ইফতার মাহফিলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা অংশ নেবেন। সার্বিক ইফতার কর্মসূচি নির্বিঘ্ন করতে পুলিশের কাছে সহযোগিতা চাওয়া হবে দলের পক্ষ থেকে।
কেন্দ্রের আয়োজনের কর্মসূচিগুলোতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠান মঞ্চের একটি চেয়ার ফাঁকা রাখারও একটা প্রচলন রয়েছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীদের উপহার সামগ্রী ও পাঠানো হয়।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, ‘প্রতিবছর রমজানে দলের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে চারটি ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এর বাইরে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন এবং ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপি ইফতারের আয়োজন করে। এবার পরিস্থিতি কী হয় এখনই বলতে পারছি না।’
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবে রমজানে আমাদের দলের কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের সব পর্যায়ে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়। আমরা কর্মীসভা করি। ইফতারের আগে আমরা সবাই মিলে দোয়া-মোনাজাতে অংশ নেই। আমরা সবাই মিলে ইফতার করি।’
এদিকে রোজার মধ্যে দলের সব পর্যায়ে পুনর্গঠনের আলোচনা থাকলেও কয়েকটি অঙ্গ সংগঠনের শীর্ষ পদগুলো ঘিরে এ আলোচনা বেশি শোনা যাচ্ছে।
ছাত্রদল
ছাত্রদলের আলোচনায় আছেন ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি তানজিল হাসান, সহ-সভাপতি নাছির উদ্দিন নাছির, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিব, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমানুল্লাহ আমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেহেনা আক্তার শিরিন, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আফসান ইয়াহিয়া, ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক মানসুরা আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি খোরশেদ আলম সোহেল এবং সিনিয়র সহ-সভাপতি এ বি এম ইজাজুল কবির রুহেল।
যুবদল
জাতীয়তাবাদী যুবদলের শীর্ষ পদগুলোতে আলোচনায় রয়েছেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য কে এম মোরতাজুল করিম বাদরু, আকরামুল হাসান মিন্টু, মামুনুর রশিদ মামুন, যুবদলের বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্না, সহ-সভাপতি সম্পাদক জাকির হোসেন সিদ্দিকী, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদমর্যাদার সাঈদ ইকবাল টিটু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা শাহীন এবং মহানগর দক্ষিণ যুবদলের আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম।
স্বেচ্ছাসেবক দল
জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের শীর্ষ পদগুলোর আলোচনায় রয়েছেন বিএনপির সহ-পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ, সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, নির্বাহী কমিটির সদস্য হাবিবুর রশিদ হাবিব, ফজলুর রহমান খোকন এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের বর্তমান কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান।
মহিলা দল
মহিলা দলের শীর্ষ পদগুলোর আলোচনায় রয়েছেন বিএনপির স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, সহ-প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক রেহানা আক্তার রানু এবং মহিলা দলের বর্তমান কমিটির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জারিন খান।
মিডিয়া সেল
মিডিয়া সেল ঘিরে সম্প্রতি বেশ কয়েকটি নাম উচ্চারিত হচ্ছে। যার মধ্যে রয়েছেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, সহ-সভাপতি আমিরুল ইসলাম কাগজী, সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সাবেক সভাপতি এলাহী নেওয়াজ খান সাজু, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সাংগঠনিক সম্পাদক এম সাইদ খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডাক্তার রফিকুল ইসলাম, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, সহ-স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক নিলোফার চৌধুরী মনি, নির্বাহী কমিটির সদস্য রফিক সিকদার, ওমর ফারুক শাফিন, ওবায়দুল হক নাসির, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য নাদিয়া পাঠান পাপন এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে পরিচিত মেহেদুল ইসলাম মেহেদী।
শ্রমিক দল
জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের শীর্ষ পদগুলো ঘিরে আলোচনায় রয়েছেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান সরোয়ার, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বর্তমান শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুল করিম মজুমদার, কৃষক দলের সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. শাজাহান মিয়া সম্রাট এবং বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন সরকার।
জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা জাসাস
জাসাস শীর্ষ পদগুলোর আলোচনায় সঙ্গীত এবং অভিনয় জগতের কয়েকটি নাম যার মধ্যে রয়েছেন -কনক চাঁপা, ইথুন বাবু, মনির খান, আসিফ আলতাফ, আসিফ আকবর, শিবা শানু, জামাল উদ্দিন নাসির এবং নাজমুন মুনিরা ন্যান্সি।
দলের পুনর্গঠন আলোচনা সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক রেহেনা আক্তার রানু জাগো নিউজকে বলেন, ‘পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে দেখতে পাচ্ছি বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। পুনর্গঠন চলমান প্রক্রিয়া। তবে এ বিষয়ে নীতিনীর্ধারক ফোরামের যারা আছেন তারা বলতে পারবেন, আমার জানা নেই।’
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই মাঠের মূল্যায়নের ভিত্তিতে পুনর্গঠন করে যোগ্যদের মূল্যায়ন করা হোক। কোনো হাইব্রিড দিয়ে যেন দল পুনর্গঠন না হয় এবং আশা করবো আগামীতে দলের সব পর্যায়ের নেতৃত্বে নারীদের আরও মূল্যায়ন করা হয়।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘কমিটি পুনর্বিন্যাস হবে কি না তা এখনই বলা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার কেবলই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘বর্তমান সরকার বিরোধী দল ও বিরোধী দলের সংগঠনকে নিশ্চিহ্ন করতে সাংগঠনিক প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ বাধাগ্রস্ত করছে। এই পরিস্থিতির মধ্যেই যতদূর সম্ভব আমাদের দল পুনর্গঠনের চেষ্টা করছি। কমিটি গঠন, পুনর্গঠন একটা চলমান প্রক্রিয়া, এটা চলতেই থাকবে।’
রমজানকে সাংগঠনিক মাস ধরে সংগঠন পুনর্গঠনের দলের কোনো পরিকল্পনা রয়েছে কি না জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, ‘না এ ধরনের পরিকল্পনার কথা আমার জানা নেই।’