রমজানের আগেই আবারও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলো। বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাসের দামও বাড়ানো হয়েছে। পাইকারিতে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ৫ দশমিক ০৭৪ শতাংশ। এতে প্রতি ইউনিটের গড় দর স্থির হয়েছে ৭ টাকা ০৪ পয়সায়। আগে যা ছিল ৬ টাকা ৭০ পয়সা। পাশাপাশি খুচরা পর্যায়ে মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ। তাতে ইউনিট প্রতি বিদ্যুতের গড় দাম নিষ্পত্তি হয়েছে ৮ টাকা ৯৫ পয়সা। আগে তা ছিল ৮ টাকা ২৫ পয়সা। বিদ্যুতের নতুন দাম মার্চ মাস থেকে কার্যকর হবে। মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়ের কথা জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের যে দাম তাতে দেশের বাজারে দাম আরো কমার কথা বলে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। তবে সরকারের তরফে বলা হচ্ছে, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশের বাজারে তেলের দাম আরো বেশি হওয়ার কথা। এদিকে বাসাবাড়ির গ্রাহক ও শিল্প পর্যায়ে গ্যাসের দাম এখন বাড়বে না বলে সরকার জানিয়েছে। প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ভর্তুকি তুলে দিতে চায় সরকার। এ কারণে পর্যায়ক্রমে আগামী তিন বছর ধরে মূল্য সমন্বয় করা হবে। গত ১৫ বছরে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ১১ বার। এখন খুচরা পর্যায়ে ১২তম বারের মতো দাম বাড়ছে মার্চ মাসে। এ খাতের সিস্টেম লস এবং দুর্নীতি রোধ করতে পারলেই বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হয় না, বরং কমানো যায়। কিন্তু নিয়ন্ত্রক কিংবা সেবাদানকারী সংস্থা-কোম্পানিগুলো তাতে আগ্রহী না হয়ে সবসময় দাম বৃদ্ধির পথে হাঁটতেই পছন্দ করে। এত কম সময়ে বারবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো নাগরিকদের জীবনযাত্রায় বাড়তি চাপ যোগ করবে- এটাই স্বাভাবিক। এখন দাম বাড়ানোর পর আগামী গ্রীষ্ম মৌসুমে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের নিশ্চয়তা দিতে পারবে কিনা সেটা দেখার বিষয়। দেশের সরকারি-বেসরকারি সব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে চুক্তি অনুসারে নির্ধারিত দামে বিদ্যুৎ কিনে নেয় পিডিবি। এরপর তারা উৎপাদন খরচের চেয়ে কিছুটা কম দামে ছয়টি বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থার কাছে বিক্রি করে। ঘাটতি মেটাতে পিডিবি সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি নেয়। তবে বিতরণ সংস্থাগুলো কোনো ভর্তুকি পায় না। তারা নিয়মিত মুনাফা করছে। গ্যাসের মতো বিদ্যুৎ খাতেও সিস্টেম লসের কারণে অপচয় হচ্ছে কয়েক হাজার কোটি টাকা। ১ শতাংশ সিস্টেম লসেই অন্তত ৭০০ কোটি টাকার ক্ষতি গুনতে হয় বিদ্যুৎ খাতে। এসবের দায় চাপে গ্রাহকের ওপর। আদর্শিকভাবে এ খাতে কোনো উন্নয়ন হয়নি। সারাদেশে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে ব্যর্থ বিদ্যুৎ বিভাগ। কুইক রেন্টালের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা নষ্ট হয়েছে। এসব প্রকল্পে সীমাহীন দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে বিদ্যুতের ইউনিটপ্রতি উৎপাদন খরচ। আর এসবের দায় সাধারণ মানুষের ঘাড়ে চাপানোর জন্য বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করছে। বিদ্যুতের দাম বাড়লে সবরকম দ্রব্যমূল্য ও সেবামূল্যের ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। আর শেষ পর্যন্ত তা বহন করতে হয় ভোক্তা সাধারণকে। তাই সাধারণ ভোক্তাদের সামর্থ্য তথা জনস্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে বিদ্যুতের দাম কীভাবে সহনীয় পর্যায়ে রাখা যায় তা নিয়ে সরকারকে ভাবতে হবে। একটি গণতান্ত্রিক সরকার বিদ্যুতের মতো জরুরি প্রয়োজনীয় সেবা খাতের ব্যাপারে জনবান্ধব নীতি নিয়ে এগোবে- এটাই সবার প্রত্যাশা।
বিদ্যুতের দাম সহনীয় করা হোক
Next article
আরো দেখুন
গোপালগঞ্জেহ সহিংসতা পুনরাবৃত্তি যেন না হয়
গোপালগঞ্জ শহরে এখনো থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রা ও সমাবেশকে কেন্দ্র করে গত বুধবারের হামলা-সংঘর্ষের পর থেকে কিছু সময়ের বিরতি...
গোপালগঞ্জে ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করুন
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পূর্বনির্ধারিত পদযাত্রা ও সমাবেশে হামলার ঘটনা আবারও প্রমাণ করেছে পতিত হলেও স্বৈরাচারের চরিত্র পাল্টায়নি। তাদের হামলায় বুধবার গোপালগঞ্জ শহর...