দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা উন্নত হলেও চিকিৎসা ব্যয় বৃদ্ধি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইতোমধ্যে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও নানা কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে। এ পরিস্থিতির মধ্যে চিকিৎসা ব্যয়ও ঊর্ধ্বমুখী। এতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে চিকিৎসায় রোগীর নিজস্ব ব্যয় বেড়েছে। হৃদরোগে আক্রান্তদের জরুরি চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় হার্টের রিংয়ের (স্টেন্ট) দাম নিয়ে চলছে অস্থিরতা। সরকার কয়েক দফা স্টেন্টের দাম বেঁধে দিলেও ব্যবসায়ীদের একটি গ্রুপ তা মানেনি। উল্টো দাম কমানোর প্রতিবাদে ওই সময় স্টেন্ট সরবরাহ বন্ধ রাখে। বিপাকে পড়ে রোগীরা। বিষয়টি গড়ায় উচ্চ আদালত পর্যন্ত। গত বছরের জুন মাস থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দুই দফায় স্টেন্টের দাম কমানো হয়। কিন্তু ব্যবসায়ীরা দাম বাড়াতে চাইছে। ২০২৩ সালের ১২ ডিসেম্বর দেশে ব্যবহৃত ২৭টি কোম্পানির ৪৪ ব্র্যান্ডের স্টেন্টের দাম কমিয়েছিল ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর (ডিজিডিএ)। ওই সময় স্টেন্টের খুচরা দাম সর্বোচ্চ ১ লাখ ৪০ হাজার ৫০০ টাকা আর সর্বনিম্ন দাম ১৪ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। ১৬ ডিসেম্বর থেকে নির্ধারিত দাম কার্যকর হবে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়। বৈষম্যমূলক দাম অবৈধ ঘোষণা করতে ঔষধ প্রশাসনের বিরুদ্ধে ১১ জন ব্যবসায়ী রিট করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯ ডিসেম্বর রুল জারি করেন হাইকোর্ট। যার কোনো সুরাহা হয়নি এখনো। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ২০৩২ সালের মধ্যে রোগীর নিজস্ব ব্যয় ৩২ শতাংশ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। তবে দীর্ঘ এক যুগ পার হলেও এ ব্যবস্থার উন্নতি হয়নি। চিকিৎসায় ব্যক্তির ব্যয় বেড়েই চলেছে। চিকিৎসা মানুষের মৌলিক অধিকার। কাজেই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া অত্যন্ত জরুরি। সম্প্রতি স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের প্রকাশিত এক গবেষণার তথ্য অনুযায়ী- ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২০ সালে চিকিৎসা ব্যয়ে সরকারের অংশ ছিল যথাক্রমে মোট ব্যয়ের ২৮, ২৬ ও ২৩ শতাংশ। আর ওই বছরগুলোতে ব্যক্তির নিজস্ব ব্যয় ছিল ৬৪, ৬৬ ও ৬৯ শতাংশ। এক্ষেত্রে দেখা যায় চিকিৎসা ব্যয়ে সরকারের অংশ ক্রমান্বয়ে কমছে আর ব্যক্তির নিজস্ব ব্যয় বাড়ছে। এ ব্যয় করতে গিয়ে বছরে ৮৬ লাখের বেশি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাচ্ছে। চিকিৎসার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যয় হচ্ছে ওষুধ কিনতে। এতে ব্যয় ৬৪ দশমিক ৬ শতাংশ। এছাড়া রোগ শনাক্তের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ১১ দশমিক ৭ শতাংশ, বিকল্প চিকিৎসাসেবায় ১৩ দশমিক ২ শতাংশ এবং হাসপাতালে খরচ ১০ দশমিক ১ শতাংশ। আগের বছরগুলোর তুলনায় চলতি বছর হাসপাতাল ও বিকল্প চিকিৎসাসেবা নেয়ায় ব্যয় বেড়েছে। এসব ব্যয়ের মধ্যে সরকার ও দাতা সংস্থা থেকে আসে ৩১ শতাংশ। শুধু সরকার বহন করে ২৩ দশমিক ১ শতাংশ। আমরা মনে করি, চিকিৎসা খাতে মানুষের ব্যয় না কমলে দেশে দক্ষ জনশক্তি তৈরি হুমকির মুখে পড়বে, যা দেশের টেকসই উন্নয়নেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। মুনাফালোভী এক শ্রেণির হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার আর কিছু অনৈতিক মানসিকতার চিকিৎসক ও ওষুধ কোম্পানির কারণে চিকিৎসা ব্যয় বাড়ছে। স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়ানো, দুর্নীতি কমানো ও নজরদারি বাড়ানো দরকার। শুধু ওষুধ নয়, রোগ শনাক্তের খরচের পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষাও বন্ধ করতে হবে। বিভিন্ন জায়গায় সরকারি হাসপাতালের যন্ত্রপাতির সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ জরুরি। চিকিৎসা খাতে জনগণের খরচ কমাতে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ ও বরাদ্দকৃত অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার দাবি সব মানুষের।
চিকিৎসা ব্যয় বৃদ্ধিতে উদ্বেগ
Previous article
Next article
আরো দেখুন
বিডিআর হত্যাকাণ্ড নিয়ে কমিশনের প্রতিবেদন
আজ থেকে ১৬ বছর আগে ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহের নামে ইতিহাসের বর্বরতম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ঢাকার পিলখানায় সদর দপ্তরে...

