প্রতিদিনের ডেস্ক:
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে রিপাবলিকান পার্টির প্রাইমারি ভোটে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারিয়েছেন নিকি হ্যালি। ২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী বাছাইয়ে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নিকি হ্যালি প্রথমবারের মতো জয় পেলেন। খবর বিবিসির। এর আগে নিকি হ্যালি তার নিজের অঙ্গরাজ্য সাউথ ক্যারোলিনাতেও ট্রাম্পের কাছে হেরেছেন। তবে ওয়াশিংটন ডিসিতে জয়ী হয়ে সবাইকে হতবাক করে দিয়েছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে নিকি হ্যালিই প্রথম নারী যিনি রিপাবলিকান পার্টির কোনো প্রাইমারিতে জয়ী হলেন।তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত নিকি হ্যালির চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে আছেন ট্রাম্প। ধারণা করা হচ্ছে, নভেম্বরের নির্বাচনে ট্রাম্প এবং জো বাইডেন মুখোমুখি হবেন।জাতিসংঘে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি রিপাবলিকান পার্টির প্রাইমারিতে ৬২ দশমিক ৯ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। অপরদিকে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পেয়েছেন ৩৩ দশমিক ২ শতাংশ ভোট। তবে মামলা, আদালতে ছোটাছুটির পরেও এখনও রিপাবলিকানদের মধ্যে জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছেন ট্রাম্প। এর মধ্যেই তিনি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে নিজের জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী হয়ে হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন। বাইডেন, ইউ আর ফায়ারড! গেট আউট, গেট আউট! আগামী নভেম্বরে জো বাইডেনের চোখে চোখ রেখে এই কথাটা বলবেন এমন বিষয়ে চলতি মাসেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন ট্রাম্প। সপ্তাহ খানেক আগেই তাকে প্রায় সাড়ে ৩৫ কোটি ডলার জরিমানা করেছেন দেশটির একজন বিচারক। তবে সুদসহ এই অংক দাঁড়াতে পারে ৪৫ কোটি ডলারে। সম্পত্তির মূল্য সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের তহবিলে এই জরিমানা দিতে হবে তাকে।নিউইয়র্কের কোনো ব্যাংক থেকে পরবর্তী তিন বছরের জন্য ঋণ নেওয়ার বিষয়েও তার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন বিচারক আর্থার এনগোরন। পাশাপাশি ট্রাম্প তার কোম্পানির পরিচালকও থাকতে পারবেন না বলে আদেশ দেওয়া হয়েছে।এই রায়কে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, তিনি এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন। ট্রাম্পের পাশাপাশি তার দুই ছেলে ডোনাল্ড জুনিয়র আর এরিককেও ৪০ লাখ ডলার করে জরিমানা দিতে হবে। দুই বছরের জন্য তাদের নিউইয়র্কে ব্যবসা করার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এই জরিমানা বাদেও একটি মানহানির মামলায় লেখক ই জন ক্যারলকে প্রায় সাড়ে আট কোটি ডলার জরিমানা দিতে হবে ট্রাম্পকে। এ পর্যন্ত মোট পাঁচটি মামলার মুখোমুখি হতে হয়েছে তাকে। এর মধ্যে সরকারি গোপন নথি নিজের কাছে রাখা এবং ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গায় উস্কানি দেওয়ার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা চলছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের আইনি ঝামেলা যতই বাড়তে থাকুক না কেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য রিপাবলিকান প্রার্থীদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা একটুও কমেনি। গত এপ্রিলে ট্রাম্প যখন প্রথমবারের মতো অভিযুক্ত হলেন তারপর থেকেই তার পক্ষে সমর্থন বেড়েছে। যদিও ট্রাম্পই হলেন ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হওয়া প্রথম সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট। প্রথমবার গ্রেফতার হওয়া ও আদালতে হাজিরা দেওয়ার পর থেকে ট্রাম্পই পরিণত হয়েছেন রিপাবলিকান ভোটারদের প্রথম পছন্দে। যুক্তরাষ্ট্রে ইপসসের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা ক্লিফোর্ড ইয়ং মনে করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার সমর্থকদের মধ্যে যে একাত্মতাবোধ তা ভাঙা কঠিন হবে। রিপাবলিকান ভোটারদের ৪০ থেকে ৪৫ ভাগই ট্রাম্প সমর্থক এবং তারা ট্রাম্পের চোখ দিয়েই দুনিয়া দেখে। তারা বিশ্বাস করে ট্রাম্পের প্রতি অন্যায় করা হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এ বছরের শুরু থেকেই ট্রাম্পকে একদিকে প্রচারাভিযানের সময়সূচি এবং আরেকদিকে আদালতে হাজিরা দেওয়া- দুটি বিষয়ই সামাল দিতে হচ্ছে। দোষী সাব্যস্ত হলে বা দণ্ডিত হলেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে না দাঁড়ানোর ঘোষণা আগেই দিয়ে রেখেছেন এই রিপাবলিকান।আপাতত যা দেখা যাচ্ছে তা হলো, ট্রাম্প জনসমর্থনের দিক থেকে বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাইডেনের চেয়ে কিছুটা এগিয়েই আছেন। দ্য ইকোনমিস্টের সর্বশেষ জরিপ বলছে, এখন ৪৬ শতাংশ জনমত ট্রাম্পের পক্ষে। আর বাইডেনকে চান ৪৪ শতাংশ মার্কিনি। জরিপে দেখা যাচ্ছে, গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে জনপ্রিয়তায় বর্তমান প্রেসিডেন্টকে ছাপিয়ে যেতে শুরু করেন ট্রাম্প। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে বাইডেনের ফিটনেস নিয়ে আলোচনা অনেক দূর গড়িয়েছে। সাইকেল চালাতে গিয়ে পড়ে যাওয়া কিংবা বিমানে উঠতে গিয়ে হোঁচট খাওয়ার ঘটনাগুলো তার শারীরিক সক্ষমতার ব্যাপারে খুব একটা ভালো ধারণা দেয় না। সবকিছু মিলিয়ে আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এখন পর্যন্ত ট্রাম্পই সবচেয়ে জনপ্রিয় সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।