প্রতিদিনের ডেস্ক:
দীর্ঘ সময় চাকরি না করে এমপিওভুক্ত বেসরকারি মাদ্রাসা থেকে নিয়েছেন সরকারি বেতন-ভাতা। জুনিয়র শিক্ষক হয়ে দাখিল মাদ্রাসায় নিয়োগ নিয়ে পরে আলিম মাদ্রাসায় উন্নীত হলে অবৈধভাবে প্রভাষক হয়েছেন বিনা বাধায়। চাকরির শেষ সময়ে এসে তার এখন ইচ্ছা, অধ্যক্ষ হবেন কলেজের। এই অভিযোগ নিয়েই মো. আজগার আলী বহাল তবিয়তে চাকরি করছেন রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার আলীপুর আলিম মাদ্রাসায়।চাকরি না করে নিয়মিত ছাত্র হিসেবে লেখাপড়া করে কীভাবে নিয়মিত বেতন-ভাতা তুলেছেন জানতে চাইলে প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান মো. আজগার আলী। তবে জালিয়াতি করে অন্য একটি কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে বহাল হওয়ার বিষয়ে নিজের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন তিনি। এইচএসসি ও ডিগ্রিতে তৃতীয় শ্রেণিতে পাস করে কীভাবে এমপিওভুক্ত এবং এইচএসসি পাস করে চাকরিতে প্রবেশ করে কীভাবে সহকারী অধ্যাপক হলেন, জানতে চাইলে মো. আজগার আলী বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী আলীপুর আলিম মাদ্রাসায় এমপিওভুক্ত হয়েছি। আমি এখন সহকারী অধ্যাপক।’ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর মহাবিদ্যালয় থেকে ১৯৮১ সালে তৃতীয় বিভাগ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন মো. আজগার আলী। ১৯৮৪ সালে জুনিয়র সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান উপজেলার আলীপুর ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসায়। ১৯৮৬ সালে এমপিওভুক্ত হন তিনি। এমপিওভুক্তির পর নিয়মিত সরকারি বেতন-ভাতা নেন তিনি। অন্যদিকে বেতন-ভাতা নেওয়ার সময় রেগুলার ছাত্র হিসেবে লেখাপড়া করেছেন চাকরি ফাঁকি দিয়ে। এভাবে তিনি ১৯৮৯ সালে তাহেরপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে তৃতীয় বিভাগে ডিগ্রি পাস করেন। এরই মধ্যে আলীপুর দাখিল মাদ্রাসাটি আলিম মাদ্রাসায় উন্নীত হয়। সরকারি বেতন-ভাতা চলাকালে ১৯৯৯-২০০২ সেশনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে এমএ পাস করেন। তারপর ২০০৩ সালের ১ জুন প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ নেন আলীপুর আলিম মাদ্রাসায় এবং এমপিওভুক্ত হন। অভিযোগ রয়েছে, ফাঁকি দিয়ে চাকরি করে সরকারি বেতন-ভাতা নিলেও প্রতিষ্ঠান থেকে কোনও বাধা দেওয়া হয়নি। উপরন্তু প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটি প্রশ্রয় দিয়ে বেতন বিলে স্বাক্ষর করেছে। লেনদেনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানকে ফাঁকি দিয়ে সরকারি বেতন-ভাতা নিছেন মো. আজগার আলী।এ বিষয়ে জানতে চাইলে আলীপুর আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আবু তালেব বলেন, ‘আপনাকে এত তথ্য এই মুহূর্তে জানাতে পারবো না। তবে কিছু তথ্য আমি দিতে পারবো, যদি আপনি অফিসে আসেন বা চিঠির মাধ্যমে জানতে চান। আপনি যেসব অভিযোগ বললেন, সব সঠিক নয়, কিছুটা সত্য-মিথ্যা দিয়েই তো মিউচ্যুয়াল থাকতে পারে, তাই না?’আলীপুর মডেল কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে আপনার কলেজের শিক্ষক আজগার আলী নিজেকে কীভাবে অধ্যক্ষ দাবি করছেন, জানতে চাইলে আবু তালেব বলেন, ‘একই সঙ্গে দুটি প্রতিষ্ঠানে থাকতে পারেন না। অনেক দিন আগে উখানে নাকি নিয়োগ নিয়েছিলেন শুনেছি, তা নিয়ে গন্ডগোল হয়েছিল, সেখোনে তিনি যাননি। এখন আমার এখানে শিক্ষকতা করেন। সেখানে তিনি চার্জ পাননি, এখানে রেগুলার চাকরি করেন।’ জানা গেছে, মো. আজগার আলীর আর চাকরি রয়েছে ১১ মাস। এ সময় তার ইচ্ছা হয়েছে কলেজের অধ্যক্ষ হওয়ার। কিন্তু জেনারেল লেখাপড়া দিয়ে মাদ্রাসায় অধ্যক্ষ হওয়ার সুযোগ নেই। আর সুযোগ থাকলেও মাদ্রাসায় বর্তমানে অধ্যক্ষ রয়েছেন। তাই জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে অন্য একটি সাধারণ কলেজের অধ্যক্ষ হওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি।গত ২২ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করেছেন আলীপুর মডেল কলেজের অধ্যক্ষ দাবি করে। গভর্নিং বডির রেজুলেশন জাল করে নিজেকে ওই কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে উপস্থাপন করেন।এ বিষয়ে জানতে চাইলে মো. আজগার আলী বলেন, ‘আমি ২০১৫ সালের ডিসেম্বর আলীপুর মডেল কলেজে নিয়োগ পাই। এর কিছুদিন আগে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পান ওই কলেজের এমপিওভুক্ত ইসলামের ইতিহাস বিষয়ের শিক্ষক মো. সাইফুল ইসলাম। বিষয়টি নিয়ে মামলা চলমান রয়েছে।’মামলা সংক্রান্ত সর্বশেষ অগ্রগতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, এক কলেজে দুজন অধ্যক্ষ হওয়ার বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের ওপর দায়িত্ব দেন আদালত। রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের আপিল অ্যান্ড আর্বিট্রেশন কমিটি মো. সাইফুলের পক্ষে সিদ্ধান্ত দেয়। কারণ শিক্ষা বোর্ডে আমি কোনও কাগজ জমা দিলে বোর্ড থেকে কাগজ হারিয়ে যায়। যতবার জমা দিয়েছি, ততবারই হারিয়ে গেছে।’আলীপুর মডেল কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ মো. সাইফুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রেজুলেশন জাল করে হাঠাৎ আলীপুর আলিম মাদ্রাসার শিক্ষক মো. আজগার আলী নিজেকে আমার কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দাবি করেন। বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে আলীপুর মডেল কলেজের বেতন বিল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠালে সেখানে নিজেকে অধ্যক্ষ দাবি করে লিখিত আবেদন করেন। অথচ এখন পর্যন্ত তিনি আলীপুর আলিম মাদ্রাসার শিক্ষক।তিনি আরও বলেন, বিগত সময়ের জালিয়াতির কারণে অবাঞ্ছিত লোক হিসেবে মো. আজগার আলী এই কলেজে প্রবেশ করতে পারেননি, সে জন্য আমি আদালতে মামলা করেছি আগেই। মামলাটি এখন চলমান। মামলায় সুবিধা করতে না পেরে তিনি শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন বন্ধ করতে অধ্যক্ষ দাবি করে লিখিত আবেদন করেছেন।