৬ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ  । ২১শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ 

ডিসি সম্মেলন সফল হোক

মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনে গতিশীলতা আনতে রোববার জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) চার দিনব্যাপী বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে রেকর্ড পঞ্চম মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমবারের মতো তিনি গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) শাপলা হলে সম্মেলন উদ্বোধন করেন। আজ থেকে সম্মেলনের পরবর্তী কার্য অধিবেশন ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনে ২৫টি কার্য অধিবেশনসহ মোট ৩০টি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনে ডিসিদের দেয়া ৩৫৬টি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হবে। প্রসঙ্গত, সরকারের নীতিনির্ধারক ও জেলা প্রশাসকদের মধ্যে সামনাসামনি মতবিনিময় এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেয়ার জন্য প্রতি বছর ডিসি সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মাঠ প্রশাসনের সম্পৃক্ত বিষয়াদি নিয়ে মুক্ত আলোচনা হয় ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারদের। গত শনিবার এক বক্তব্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, ভোটের আগে দেয়া আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের বাস্তবায়নই এবারের জেলা প্রশাসক বা ডিসি সম্মেলনে গুরুত্ব পাবে। এবারের সম্মেলন গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে মাঠ প্রশাসন কীভাবে কাজ করবে, তা নীতিনির্ধারকরা বলবেন। পাশাপাশি তুলে ধরবেন বাস্তবায়নে অগ্রাধিকারের বিষয়টি। যদিও এবার জনসেবা বৃদ্ধি, জনসাধারণের ভোগান্তি কমানো, সড়ক-মহাসড়ক ও সেতু নির্মাণ, পর্যটন সম্প্রসারণ, নিয়ম-কানুন সংশোধন এবং জনস্বার্থ রক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে প্রস্তাবগুলো করা হয়েছে। শীর্ষ এজেন্ডায় রয়েছে ভূমি ব্যবস্থাপনা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান শক্তিশালীকরণ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ কর্মসূচি, স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দারিদ্র্যবিমোচন কর্মসূচি বাস্তবায়ন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি বাস্তবায়ন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার, ই-গভর্নেন্স, শিক্ষার মান উন্নয়ন ও এর সম্প্রসারণ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ, পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ প্রতিরোধ, ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়ন এবং উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের পরিদর্শন ও সমন্বয়। গতকাল ভোরের কাগজে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর ডিসিদের পাঠানো প্রস্তাবের সংখ্যা ছিল ২৪৫টি। সে অনুযায়ী গত বছরের চেয়ে এবার একশর বেশি প্রস্তাব করেছেন ডিসিরা। প্রতি বছর বেশির ভাগ প্রস্তাব থাকে ডিসি ও ইউএনওদের ক্ষমতা বা দায়িত্বের পরিধি বাড়ানো ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিসংক্রান্ত। এবারো প্রস্তাব বাড়ার সঙ্গে ক্ষমতার পরিধি, জেলা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি সংক্রান্ত প্রস্তাব এসেছে। গত বছর বার্ষিক সম্মেলনে মোট ২১২টি স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল এবং এর মধ্যে ১৩০টি বাস্তবায়ন ও নিষ্পত্তি করা হয়েছে এবং ৮২টি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বাস্তবায়ন বা নিষ্পত্তির হার ৬২ শতাংশ। দেখা যাচ্ছে, প্রতিবার ঘুরেফিরে পুরোনো প্রস্তাবগুলোই উত্থাপন করা হয়। বছরের পর বছর প্রায় একই ধরনের অনেক প্রস্তাব ডিসি সম্মেলনে উত্থাপন হওয়া কতটা যৌক্তিক, এ প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়া ঠিক হবে না। বলার অপেক্ষা রাখে না, এর ফলে ডিসি সম্মেলন বৈচিত্র্য হারাতে পারে। ডিসি সম্মেলনের গতানুগতিক এ ধারা ভাঙার সময় এসেছে বলে মনে করি আমরা। আমরা প্রত্যাশা করি, প্রধানমন্ত্রী ডিসি সম্মেলন উপলক্ষে জনগণের সেবায় নিজেদের উৎসর্গ করা এবং জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়ার পাশাপাশি যে বিষয়গুলো আলোচনা করবেন, যা দেশ ও জাতির সামগ্রিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। অতঃপর ডিসি সম্মেলন এর সফলতা কামনা করছি।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়