রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প অনেকের কাছে বিহারি ক্যাম্প নামে পরিচিত। যেখানে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের বসবাস। আর বসবাসের এই ঘিঞ্জি পরিবেশে গড়ে উঠেছে রাজধানীর সবচেয়ে বড় মাদকের বাজার। তথ্য অনুযায়ী, ৯টি সেক্টরে বিভক্ত এই ক্যাম্পের ভেতরে চলাচলের জন্য রয়েছে ৩০টি রাস্তা। প্রায় ৮-১০ ফিট সাইজের ঘরের একতলা, দোতলা ও তিনতলা ভবনে গাদাগাদি করে বসবাস। বিহারি ক্যাম্পের বাসিন্দারা গাড়ির চালক, মাংস বিক্রিসহ নানা কাজে সম্পৃক্ত থাকলেও অনেকের আয়ের মূল উৎস মাদক ব্যবসা। হাত বাড়ালেই মিলে ইয়াবা, হেরোইন ও গাঁজা। মিরপুরসহ বিভিন্ন স্থান থেকে অতিথিবেশে আসা বোরকা পরিহিত নারীরা প্রতিদিন সেখানে পৌঁছে দিচ্ছে তিন ধরনের মাদক। এমনভাবে সেখানে চালান হাতবদল হয় যা দেখে সন্দেহ করা বা বুঝার উপায় নেই অতিথিবেশে ঢুকে কারা কী আনছেন। সন্দেহ এড়াতে অতিথিবেশে আসাদের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে স্বাভাবিক নিয়মে পোলাও-কোরমা রান্না করে আপ্যায়ন করা হয় সেখানে। আর ক্যাম্পে অচেনা কেউ ঢুকলেই নানা বয়সি তরুণ ও যুবকরা ঘিরে ধরে। ঈশারায় জানতে চায় কোন ধরনের মাদক লাগবে। যাদের যা প্রয়োজন তারা তা পেয়ে যান মুহূর্তেই। এমন চিত্র দিন-রাত সব সময়ের। ক্যাম্পে মাদক স্পটের আধিপত্য নিয়ে ভূঁইয়া সোহেল গ্রুপের সঙ্গে পিচ্চি রাজা গ্রুপের গণ্ডগোল নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। মাদক ব্যবসার প্রতিবাদ করে অনেকেই উল্টো মামলা-হামলার শিকার হয়ে চুপসে গেছেন। ক্যাম্পে মাদকের বড় কোনো চলান আটক না হলেও খুচরা বিক্রির অভিযোগে মামলা হয় প্রায়ই। কিন্তু অভিযানে ধরা পড়ে না চিহ্নিত আসামি। তবে তারা ঘুরে বেড়ায় ক্যাম্পে, দিব্যি চলছে তাদের কারবার। মাদক বিক্রির টাকায় ক্যাম্পের বাইরে ফ্ল্যাট, বাড়ি, জমি, গাড়ি কিনে বদলে গেছে অনেকের জীবনমান। অবশ্য কারবারিদের কাছ থেকে সুবিধা নেয়ার অভিযোগ আছে থানা পুলিশ ও ডিবির অনেকের বিরুদ্ধে। এ প্রসঙ্গে র্যাব-২ এর কমান্ডিং অফিসার অতিরিক্ত ডিআইজি ভোরের কাগজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী মাদকের বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণু নীতি অনুসরণ করছে র্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় শুধু জেনেভা ক্যাম্পেই নয়; র্যাব-২ এর আওতাধীন এলাকাগুলোতে নিয়মিত মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। গোয়েন্দারা মাদকের বিস্তার রোধে সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখছে। তিনি বলেন, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছেন। দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত আছে। তারপরও খোদ রাজধানীতে কীভাবে চলছে এই ইয়াবা ব্যবসা? এই প্রশ্ন এখন সর্বমহলে। প্রকৃতপক্ষে, জেনেভা ক্যাম্পের মাদক কারবারিরা সংঘবদ্ধ। ভেতরে অসংখ্য অলিগলি থাকায় তাদের গ্রেপ্তার করে ক্যাম্পের বাইরে আনা কঠিন। এছাড়া স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এখানে মাদক কারবারিদের শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। নিয়মিত মাদকবিরোধী অভিযানে খুচরা বিক্রেতা গ্রেপ্তার হলেও গডফাদাররা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে যান। এই অবস্থা আর কত দিন চলবে? শুধু আইন প্রণয়ন নয়, আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করুন। আমরা চাই মাদক নিয়ে কারোর সঙ্গে যেন কোনো আপস না করা হয়। মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পের মাদক নিয়ন্ত্রণেও আমরা প্রশাসনের কঠোর অবস্থান দেখতে চাই।
জেনেভা ক্যাম্পে মাদক ব্যবসা!
Previous article
Next article
আরো দেখুন
ক্রমেই গভীর হচ্ছে অর্থনৈতিক সংকট
দেশের অর্থনীতি নানামুখী সংকটে জর্জরিত। নতুন বিনিয়োগ প্রায় বন্ধ। প্রতিনিয়ত কর্মক্ষম জনসংখ্যা বাড়ছে, অথচ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না। চালু কলকারখানাও একের পর এক...
নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে ফুলতলায় আলোচনা সভা
এস এম মমিনুর রহমান, ফুলতলা
গতকাল ৩ ডিসেম্বর ১৬ দিনব্যাপী নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ উদযাপন উপলক্ষে ফুলতলা উপজেলার মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের সহযোগিতায় এবং বেসরকারি উন্নয়নের...

