১৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ  । ৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ 

আজ ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ

সুন্দর সাহা
আজ ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ। স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও স্মরণীয় দিন আজ। এই মাসের ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ভাষণটি দিয়েছিলেন। এই মাস এলে বাঙালি জাতি একটু বেশি আবেগপ্রবণ ও স্মৃতিকাতর হয়ে যায়। আবার সাহসের সঞ্চার ঘটে। সবচেয়ে বেশি যে কারণে এদিন বঙ্গবন্ধু যে ভাষণ দিয়েছিলেন, তা আজ আন্তর্জাতিক খ্যাতি লাভ করেছে। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বাঙালি জাতিকে পাকিস্তানি বন্দীদশা থেকে মুক্তি করতে মুক্তিকামী মানুষের জন্য এক অমর বাণী (ভাষণ) দিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেই দিনের ১৮ মিনিটের ভাষণের পরে নিরস্ত্র বাঙালি দেশকে স্বাধীন করতে এগিয়ে যেতে শুরু করে। স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও বঙ্গবন্ধুর সেই মুক্তিকামী ও অনুপ্রেরণাকামী ভাষণের আবেদন আজ এতোটুকুও কমেনি। বঙ্গবন্ধুর এই একটি ভাষণের উপরে অঘাত বিশ্বাস রেখে বাংলাদেশের মানুষ স্বাধিকার আদায়ে একটি স্বাধীন ভূখণ্ড নির্মাণে মুক্তিযুদ্ধ গড়ে তুলে। বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ অনুধাবন করে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন ভাষায় লিপিবদ্ধ করে গবেষণা করা হয়েছে। পাঠ্যপুস্তকেও ঠাঁই পেয়েছে। ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবরে ইউনেস্কো ৭ মার্চের ভাষণকে ‘ডকুমেন্টারি হেরিটেজ’ (বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য) হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এই ভাষণটিসহ মোট ৭৭টি গুরুত্বপূর্ণ নথিকে একইসঙ্গে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ইউনেস্কো পুরো বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ দলিলকে সংরক্ষিত করে থাকে। ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে (এমওডব্লিউ) ৭ মার্চের ভাষণসহ এখন পর্যন্ত ৪২৭টি গুরুত্বপূর্ণ নথি সংগৃহিত হয়েছে। গবেষকরা বলছেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের একটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো এর সার্বজনীনতা এবং মানবিকতা। যে-কোনো নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর জন্য এই ভাষণ সবসময়ই আবেদন সৃষ্টিকারী। এই ভাষণে গণতন্ত্র, আত্মনিয়ন্ত্রণ, স্বাধিকার, মানবতা এবং সব মানুষের কথা বলা হয়েছে। ফলে এই ভাষণ দেশ-কালের গণ্ডি ছাড়িয়ে সার্বজনীন হয়েছে। আর একজন মানুষ একটি অলিখিত বক্তৃতা দিয়েছেন, যেখানে স্বল্প সময়ে কোনো পুনরুক্তি ছাড়াই একটি জাতির স্বপ্ন, সংগ্রাম আর ভবিষ্যতের দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বিশ্বাসের জায়গা থেকে কথা বলেছেন। সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য ভাষায় কথা বলেছেন। সবচেয়ে বড় কথা, বঙ্গবন্ধু সাধারণ মানুষের চাওয়া-পাওয়া বুঝতে পেরেছেন। তাঁরা যা চেয়েছেন, বঙ্গবন্ধু তা-ই তাঁদের কাছে তুলে ধরেছেন। ফলে এই ভাষণটি একটি জাতির প্রত্যাশার আয়নায় পরিণত হয়। এই ভাষণই একটি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ করেছে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালেও এই ভাষণ প্রেরণা জুগিয়েছে। আর এতবছর পরও মানুষ তাঁর ভাষণ তন্ময় হয়ে শোনেন৷ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ বাঙালির স্বাধীনতা মুক্তি ও জাতীয়তাবোধ জাগরণের মহাকাব্য, বাঙালি তথা বিশ্বের সকল লাঞ্চিত-বঞ্চিত নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের মুক্তির সনদ। ৭ই মার্চের ভাষণ বাঙালির পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙার চূড়ান্ত প্রেরণা। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণিক দলিল এবং বিশ্বে সর্বাধিকবার প্রচারিত ও শ্রবণকৃত অলিখিত ভাষণ। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বাঙালি জাতির ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা একটি অবিস্মরণীয় দিন। এই দিনে তৎকালীন ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক উত্তাল জনসমুদ্রে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ডাক দেন। বঙ্গবন্ধু বজ্র কণ্ঠে বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ এই ঐতিহাসিক ভাষণের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচর-নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত নিরন্ত্র বাঙালি জাতিকে মুক্তির মহান মন্ত্রে উজ্জীবিত করেন। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর ডাকে বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রাম জনযুদ্ধে পরিণত হয়। ঐতিহাসিক এই ভাষণে উদ্দীপ্ত হয়ে ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে এক সাগর রক্ত আর ত্রিশ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হয় মহান স্বাধীনতা। বিশ্ব মানচিত্রে প্রতিষ্ঠা লাভ করে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র। এই পটভূমিতে ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে অসীম সাহসিকতায় তাঁর বলিষ্ঠ কণ্ঠে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। বঙ্গবন্ধুর দেওয়া ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণটি বাঙালি জাতির জীবনে অভ্যস্ত গুরুত্ব ও তাৎপর্য বহন করে এবং বাঙালি জাতির অনুপ্রেরণার অনিবার্ণ শিখা হয়ে অফুরন্ত শক্তি ও সাহস যুগিয়ে আসছে। আজ আবার ৭ই মার্চের ভাষণ সাধারণ মানুষকে উদ্দীপ্ত করুক। ৭ই মার্চকে শুধু আনুষ্ঠানিকতা দ্বারা বরণ না করে একে অতীতের সংগ্রামী ঐতিহ্য দ্বারা বরণ করা উচিত। আওয়ামী লীগ সরকার যদি ৭ই মার্চের ভাষণের পথনির্দেশকে আজ যথার্থভাবে অনুসরণ করে, তাহলে তারাও দেশ ও দলকে রক্ষার উপায় খুঁজে পাবেন।

 

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়