২৪শে আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ৮ই জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যেও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে এশিয়ার প্রযুক্তি খাত

প্রতিদিনের ডেস্ক:
বিশ্ব অর্থনীতি এখন সংকটময় অবস্থা পার করছে। মূল্যস্ফীতি থেকে শুরু করে সরবরাহ সংকট, উচ্চ সুদহার ভোক্তা পর্যায়ের ব্যয়ে প্রভাব ফেলছে। তবে এর মধ্যেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সেমিকন্ডাক্টরের চাহিদা ও ব্যবহার বাড়ছে। আর এর পরিপ্রেক্ষিতে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রযুক্তি খাত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।
বৈশ্বিক বিনিয়োগ ব্যাংক জেপি মরগানের তথ্যের বরাতে সিএনবিসির খবরে এ তথ্য উঠে এসেছে। সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির প্রধান অর্থনীতিবিদ ব্রুস ক্যাসম্যান জানান, প্রযুক্তি খাত পুনরুদ্ধারের পথে রয়েছে, যে কারণে গত বছরের দ্বিতীয়ার্ধে এশিয়া এ খাতে ভালো অবস্থানে ছিল। চীনসহ উত্তর এশিয়া এ খাতে ভালো প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।
কভিড-১৯ মহামারীর সময় বিশ্বের বিভিন্ন কোম্পানি ডিজিটালাইজেশনের দিকে বেশি নজর দিয়েছিল। কিন্তু এর পর ২০২২ ও ২৩ সালে মূল্যস্ফীতি ও সুদহার ঊর্ধ্বমুখী থাকায় ভোক্তা ব্যয় বাধাগ্রস্ত হয় এবং পণ্য ক্রয়ের চাহিদাও কমে যায়। ২০২৪ সালে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর অবস্থা সম্পর্কিত এক প্রতিবেদনে এ কথা জানায় যুক্তরাজ্যের পেশাদার পরিষেবা নেটওয়ার্ক ডেলয়েট। এ সময় ভোক্তা ব্যয় কমার পাশাপাশি কোম্পানিগুলো ব্যাপক হারে কর্মী ছাঁটাই করেছে বলেও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে প্রযুক্তি খাত পুনরুদ্ধার হওয়ার ক্ষেত্রে নতুন আশা দেখা দিয়েছে। অর্থনীতিবিদরা মন্দার ঝুঁকি হার কমিয়েছেন। পাশাপাশি বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন চলতি বছর বৈশ্বিক প্রযুক্তি খাত প্রবৃদ্ধিতে ফিরবে।
আরেক বিবৃতিতে জেপি মরগানের ইএম এশিয়া অর্থনীতি গবেষণা বিভাগের প্রধান অং সিন বেং বলেন, ‘প্রযুক্তি খাতে পুনরুদ্ধারের চিত্র দেখতে পেলেও এর বাইরের খাতগুলো এখনো সেভাবে প্রবৃদ্ধিতে ফিরে আসতে পারেনি।’
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চিপ উৎপাদনকারীদের কার্যক্রমকে প্রভাবিত করছে এবং প্রযুক্তি খাত পুনরুদ্ধারে সহায়তা করছে। এদিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের চিপ ডিজাইনার কোম্পানি এনভিডিয়া ২০২৩ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে আয়ের দিক থেকে ২৫৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখতে পেয়েছে। তবে প্রবৃদ্ধির ধারা পুরো প্রযুক্তি খাতে ছড়িয়ে পড়েনি।
অং সিন বেং বলেন, ‘শুধু সেমিকন্ডাক্টর খাতেই প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। এদিক থেকে কোরিয়ার উৎপাদন কার্যক্রম ভালো অবস্থায় রয়েছে। অন্যদিকে লজিক চিপ উৎপাদনে তাইওয়ান শীর্ষে রয়েছে। আর এ দুটি ক্ষেত্র উত্তর এশিয়াকে এগিয়ে রেখেছে।’ এনভিডিয়ার জন্য চুক্তিভিত্তিক চিপ উৎপাদনকারী হিসেবে শীর্ষে রয়েছে তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি (টিএসএমসি)। যে কারণে গত বছরের শেষ প্রান্তিকে এনভিডিয়ার প্রবৃদ্ধি টিএসএমসিকেও এগিয়ে নিয়ে গেছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার ডির‍্যাম চিপ উৎপাদনকারীদের মধ্যে রয়েছে স্যামসাং ইলেকট্রনিকস ও এসকে হাইনিক্স। এআইয়ের বিকাশের কারণে এ কোম্পানিগুলোও ভালো অবস্থানে উঠে এসেছে। কেননা চ্যাটজিপিটির মতো লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল ব্যবহারের জন্য শক্তিশালী মেমোরি চিপের প্রয়োজন হয়।
অং জানান, সেমিকন্ডাক্টরের চাহিদা ও ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় সিঙ্গাপুরের প্রযুক্তি খাত প্রবৃদ্ধি দেখতে পেয়েছে। সিঙ্গাপুর সেমিকন্ডাক্টর ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন বিজনেস কানেক্ট ২০২২-এ প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, বিশ্বে মোট ব্যবহৃত চিপ সরঞ্জামের ২০ শতাংশই উৎপাদন করে সিঙ্গাপুর।
গত মাসে বাজেট বক্তৃতায় দেশটির ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার লরেন্স ওং জানান, আগামী পাঁচ বছরে সিঙ্গাপুরের এআই সক্ষমতার উন্নয়নে সরকার ১০০ কোটি সিঙ্গাপুরিয়ান ডলার (৭৪ লাখ ৩০ হাজার ডলার) বিনিয়োগ করবে। বিনিয়োগের অংশ হিসেবে এআইয়ের বিকাশ এবং স্থাপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ চিপ ব্যবহারের সুবিধা নিশ্চিতে দেশটি কাজ করবে বলেও জানান তিনি।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়