আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করুন

0
25

পাটকে বলা হতো সোনালি আঁশ। তদানীন্তন পাকিস্তানের অর্থনীতিতে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান উৎস ছিল পাট। স্বাধীন বাংলাদেশেও পাট ছিল প্রধান অর্থকরী ফসল। ৮৭টি পাটকলে কাজ করতেন হাজার হাজার শ্রমিক। কিন্তু প্লাস্টিক, পলিথিন বা সিনথেটিক পণ্যের লাগামহীন প্রসারে মার খাচ্ছে পাট। সেই সঙ্গে অতীতের কোনো কোনো সরকারের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তও এই শিল্পের জন্য ক্ষতিকর হয়েছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর পুনরায় পাট ও পাটশিল্পের হৃতগৌরব ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। বেশ কিছু বন্ধ পাটকল চালু করা হয়। পাটের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি পাট গবেষণায় জোর দেওয়া হয়। পাটের জিনোম আবিষ্কৃত হয়। আইন করে অনেক পণ্যে পাটের মোড়ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়। কিন্তু আইনের সঠিক প্রয়োগ না হওয়ায় প্লাস্টিক বা সিনথেটিক মোড়কের আগ্রাসন থামছে না। পাটের হৃতগৌরবও ফিরিয়ে আনা যাচ্ছে না। প্লাস্টিক সারা দুনিয়ায় এখন এক বিভীষিকা। নদী-সাগরের তলদেশে কোটি কোটি টন প্লাস্টিক গিয়ে জমা হচ্ছে। পচনহীন প্লাস্টিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষিজমি। মানুষ ও প্রাণীর দেহে মাইক্রোপ্লাস্টিকের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি চিকিৎসাবিজ্ঞানকে ভাবিয়ে তুলেছে। এমন পরিস্থিতিতে উন্নত দেশগুলো ক্রমেই অধিক হারে প্লাস্টিক বর্জন করতে শুরু করেছে। প্লাস্টিকের নানা ধরনের বিকল্পের ব্যবহার বাড়াচ্ছে। প্লাস্টিক মোড়কের অন্যতম একটি বিকল্প হচ্ছে পাটের মোড়ক। কিন্তু পাটের প্রধান উৎপাদক দেশ হলেও বাংলাদেশে তার ব্যবহার সেভাবে বাড়ানো যাচ্ছে না। ধান, চাল, গম, ভুট্টা, ডাল, আটা, ময়দাসহ ১৯ ধরনের পণ্য সংরক্ষণ ও সরবরাহে পাটজাত মোড়কের ব্যবহার আইনের মাধ্যমে বাধ্যতামূলক করা হলেও সে আইন যথাযথভাবে কার্যকর হচ্ছে না। আর এই দুর্বলতার সুযোগে বেপরোয়া গতিতে বেড়ে চলেছে প্লাস্টিক মোড়কের ব্যবহার। এমন পরিস্থিতিতে গত ৬ মার্চ পালিত হয়েছে ‘জাতীয় পাট দিবস ২০২৪’। এই দিনে সরকারিভাবে অনেক প্রতিশ্রুতি তুলে ধরা হয়েছে। পাট খাতে আমাদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির বড় ফারাক তুলে ধরা হয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যানে দেখা যায়, পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি আয় কমছে। চলতি (২০২৩-২৪) অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসে এ খাতের রপ্তানি আয় কমে হয়েছে ৫৮ কোটি ১৫ লাখ ডলার। এ আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৫ শতাংশ কম। আমরা আশা করি, পাটশিল্পের উন্নয়নে সরকার তার সর্বোচ্চ সক্ষমতা নিয়ে এগিয়ে যাবে।