প্রতিদিনের ডেস্ক:
মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক সচেতনতার প্রসার ও সার্বজনীন স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকারের লক্ষ্যে এশিয়ার মধ্যে প্রথম আঞ্চলিক ওয়েলবিং সামিট হয়েছে বাংলাদেশে। সামিটে মানসিক স্বাস্থ্য ও ট্রমা মোকাবিলায় বক্তব্য দেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলেন, মানসিক রোগ হওয়ার আগেই এর প্রতিরোধ করতে পারি। এজন্য হতে হবে সচেতন। মানসিকভাবে ভালো থাকার কৌশলগুলো শিখে নিতে হবে এবং প্রাত্যহিক জীবনে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। সামিটের আয়োজন করে ইনোভেশন ফর ওয়েলবিং ফাউন্ডেশন। এতে সহযোগিতা করে ফ্রান্সভিত্তিক প্রতিষ্ঠান দ্যা ওয়েলবিং প্রজেক্ট। এছাড়া ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট ফর এডুকেশনাল ডেভেলপমেন্ট, হিরোজ ফর অল এবং ম্যাপ ফটো এজেন্সি ও লিবার্টি ছিল সামিটে।সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। আরও ছিলেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. অভ্র দাস ভৌমিক।‘প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ভালো থাকা’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে রাজধানীর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে শুক্র ও শনিবার এই সামিট হয়। সমাজ পরিবর্তনের লক্ষ্যে যারা কাজ করে চলেছেন তাদের নিজেদের ভালো থাকা, এবং কর্মক্ষেত্রে তারা যেন ভালো থাকার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন সে লক্ষ্যে নানা কার্যক্রম নিয়ে সাজানো হয় এই সম্মেলন। সম্মেলনে শিশু থেকে শুরু করে প্রায় সব বয়সের মানুষ অংশ নেয়। সম্মেলনের সব কর্মসূচি মূলত ‘নিজে ভালো থাকলে ভালো কাজ করা যায়’- এই ইতিবাচক বার্তাকে উপজীব্য করে সাজানো হয়েছে।জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের পরিচালক ডা. অভ্র দাস ভৌমিক বলেন, যেখানে বৈশ্বিকভাবে মানসিক স্বাস্থ্যকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত এই ওয়েলবিং সামিট যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করে।অন্যান্য কর্মসূচির অংশ হিসেবে সুস্থতার ক্ষেত্রে নারীবাদী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আলোচনা করেন সঙ্গীতশিল্পী ফারজানা ওয়াহিদ শায়ান।শরীর, মন এবং আত্মা- এ বিষয়গুলো নিয়ে সংলাপে অংশ নেন বিএসিএএমএইচ’র প্রেসিডেন্ট ড. হেলাল উদ্দিন আহমেদ, পাবনা মানসিক হাসপাতালের সাইকিয়াট্রিস্ট ড. আহসান আজিজ সরকার, পাবনা মানসিক হাসপাতালে প্রফেসর মেহজাবিন হক (পিএইচডি), এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রফেসর কামাল চৌধুরী, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সম্মেলনে শিশুদের জন্য ছিল বিশেষ আয়োজন ‘শিশু ল্যাব’। এটি পরিচালনা করেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট ফর এডুকেশনাল ডেভেলপমেন্টের প্রতিনিধিরা। সম্মেলনে আইডব্লিউএফ’র প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক মনিরা রহমানের নেতৃত্বে মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা এবং উপস্থিত অতিথিরা একটি কল্পতরু উদ্বোধন করেন। যেখানে সম্মেলনে অংশগহণকারীরা তার ভালো থাকা নিয়ে নিজের ইচ্ছাটাকে ঝুলিয়ে দেন।এছাড়া সাংবাদিক শাহনাজ মুন্নির সঞ্চালনায় সম্মেলনের সমাপনী দিনের শুরুর অধিবেশনে থাকে অনবদ্য গল্পকথন। শহীদ বুদ্ধিজীবী আলতাফ মাহমুদের কন্যা শাওন মাহমুদ তার নিজ জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে ট্রমা মোকাবিলার কৌশল তুলে ধরেন। জীবন থেকে নেওয়া গল্প তুলে ধরেন আসিফ ইকবাল অন্তু।সমাপনী পর্বে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোলের (এনসিডিসি) লাইন ডিরেক্টর ড. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন।তিনি বলেন, দেশে ওয়েলবিংয়ের বিষয়টি সামাজিক ও ব্যক্তি জীবনের সমস্ত দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এতো ব্যাপকভাবে এভাবে উঠে আসেনি, যা ইনোভেশন ফর ওয়েলবিং ফাউন্ডেশন ওয়েলবিং সামিট আয়োজনের মাধ্যমে তুলে এনেছে।তিনি আরও বলেন, চিরিরবন্দরে ও নেত্রকোনা সদর হাসপাতালে ওয়েলনেস সেন্টার তৈরি করা হয়। যখন কেউ মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসেন তাদের স্ক্রিনিং করা, চিকিৎসক, নার্সদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। আমরা ১০০০ সাইকোলজিক্যাল কাউন্সেলিং করিয়েছি। যাতে নারী সেবাগ্রহীতার সংখ্যা বেশি ছিল। এই ওয়েলনেস সেন্টারের ধারণা দেশব্যাপী বাস্তবায়নের পরিকল্পনা আছে আমাদের।