চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি
বোরো মৌসুমে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) খালে পানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। পদ্মায় পানির স্তর নেমে যাওয়ায় এবং কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় অবস্থিত তিনটি সেচ পাম্প অচল থাকায় মৌসুমের শুরুতে পানি দিতে সক্ষম হচ্ছে না পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এর ফলে, সঠিক সময়ে ফসলি জমিতে সেচ দিতে না পারায় চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার লক্ষাধিক কৃষক বিপাকে পড়েছেন। অনেক ধান চাষের জমিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। বিকল্প উৎস থেকে তাই সেচ কাজ চালাতে কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছে কৃষি বিভাগ। ফসল চাষে বিকল্প হিসেবে বৈদ্যুতিক মোটর ও ডিজেল চালিত পাম্পের মাধ্যমে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করতে হচ্ছে বলে জানান কৃষকরা। তারা বলেন, জিকে সেচ প্রকল্পের আওতায় উপজেলায় সাড়ে ৬ হাজার একর জমিতে সেচ দেওয়া হয়। বর্তমানে পানি সরবরাহ বন্ধ থাকায় খালের অবশিষ্ট পানিও শুকিয়ে যাচ্ছে। কৃষকেরা মধ্য জানুয়ারিতে বোরো চাষের জমি প্রস্তুত করেন। পানি পাওয়ার আশায়, এবার ফেব্রুয়ারিতে চাষ শুরু করেছেন চাষিরা। ১৫ জানুয়ারি থেকে সেচ প্রকল্পের আওতায় খালে পানি সরবরাহের কথা ছিল। ফেব্রুয়ারির শুরুতে কয়েকদিন পানি আসে। এরপর পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ব্যাহত হচ্ছে বোরো চাষে। চুয়াডাঙ্গা পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী আরিফ আহমেদ বলেন, পদ্মায় পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। এছাড়া, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় তিনটি পাম্পের মধ্যে ১টি সচল ছিল। সেটি দিয়েই পানি সরবরাহ করা হচ্ছিল। সেই পাম্পটিও ফেটে গেছে। এ কারণে পানি সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। স্বাভাবিক পানি সরবরাহে কতদিন লাগতে পারে সে বিষয়টি তিনি নিশ্চিত করতে পারেননি। কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা পাম্পহাউস সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছর ১০ মাস (১৫ জানুয়ারি থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত) দিনরাত ২৪ ঘণ্টা তিনটি পাম্পের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা হয়। বাকি দুই মাস রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পাম্প বন্ধ রাখা হয়। পাম্প দিয়ে ওঠানো পানি ৪ জেলায় ১৯৩ কিলোমিটার প্রধান খাল, ৪৬৭ কিলোমিটার শাখা খাল ও ৯৯৫ কিলোমিটার প্রশাখা খালে যায়। জিকে সেচ প্রকল্পের প্রধান এবং শাখা খাল গুলোতে পানি থাকলে সেচসুবিধাসহ আশপাশের টিউবওয়েল ও পুকুরে পানি স্বাভাবিক থাকে। পদ্মায় পানির স্তর স্বাভাবিক থাকলে প্রতি পাম্পে প্রতি সেকেন্ডে গড়ে ২৮ হাজার ৩১৬ দশমিক ৮৫ লিটার পানি সরবরাহ হয়ে থাকে। আলমডাঙ্গার বাদেমাজু গ্রামের কৃষক আশাদুল হক বলেন, মৌসুমের শুরুতে জিকে খালের পানি না পাওয়ায় দেরিতে বোরো ধান রোপণ করা হয়েছে। এবছর সেচ খালের আওতাধীন আমার ৯ বিঘা জমিতে ধান চাষ করা হয়েছে। বর্তমানে পানি শুকিয়ে যাচ্ছে খালটির। জমিতে দেখা দিয়েছে ফাটল। বিকল্প হিসেবে ডিজেল চালিত ইঞ্জিনের মাধ্যমে পানি দেওয়া হচ্ছে। এতে এক দিন পরপর প্রায় ১ হাজার টাকা তেল কিনতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, পানির অভাবে এ বছর ধানের ফলন কম হবে। খরচও বৃদ্ধি পাবে। ফলে কৃষকের লোকসান হবে। তাই ভরা মৌসুমে দ্রুত জিকে প্রকল্পের পানি সরবরাহের দাবি জানান তিনি। জামজামি ইউনিয়নের ঘোষবিলা গ্রামের কৃষক আহম্মেদ আলী বলেন, এই উপজেলার কৃষকরা সেচ খালের পানির ওপরে বেশি নির্ভর করেন। খালের পানিতে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। সঠিক সময়ে খালে পানি না পাওয়ায় এবার লোকসান হবে।
এই বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রেহানা পারভিন বলেন, ১ থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সেচ পানি সরবরাহ করা হয়েছে। পাম্প ফেটে যাওয়ায় বর্তমানে বন্ধ রয়েছে পানি সরবরাহ। মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে বিকল্প উপায়ে জমি সেচ দিতে কৃষকদের অনুরোধ করা হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাসচন্দ্র সাহা বলেন, গত বছর থেকেই আমাদের কর্মকর্তারা চাষিদের বিকল্প সেচের ব্যবস্থা রাখার পরামর্শ দিয়ে আসছেন। এ বছরও একই পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।