কুষ্টিয়ায় অবৈধ ইটভাটার ছড়াছড়ি

0
16

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
কুষ্টিয়া জেলার ছয় উপজেলায় ইটভাটার সংখ্যা ১৭০টি। এর মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে চলছে ২২টি। বাকি ১৪৮টি ইটভাটার পরিবেশগত ছাড়পত্র নেই। পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এসব ইটভাটা কৃষিজমি, বসতবাড়ি, বাজার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে গড়ে উঠেছে। অবৈধ ইটভাটাগুলোর মধ্যে কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় ২৩টি, কুমারখালীতে ২৬টি, মিরপুরে ৩০টি, ভেড়ামারায় ৩৪টি, খোকসায় ৭টি ও দৌলতপুরে ২৮টি রয়েছে। অধিকাংশ ইটভাটায় কয়লার পরিবর্তে প্রকাশ্যে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। সরেজমিনে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের হাউসপুর গ্রামের কেএইচএন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, স্কুলের ক্লাসরুম ও অফিস ঘেঁষে চলছে অবৈধ তিনটি ইটভাটা। সেখানকার আরএইচআরবি এবং এমএএসবি ইটভাটা বিদ্যালয়ের সীমানার সঙ্গে তৈরি করা হয়েছে। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) ২০১৯ অনুযায়ী, বিশেষ কোন স্থাপনা, রেলপথ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও ক্লিনিক, গবেষণা প্রতিষ্ঠান কিংবা অনুরুপ কোনো স্থান বা প্রতিষ্ঠান থেকে কমপক্ষে এক কিলোমিটার দূরে ইটভাটা স্থাপন করতে হবে। কিন্তু স্কুল ঘেঁষে অবৈধ ইটভাটা গড়ে তুলেছে আরএইচআরবি প্রতিষ্ঠানটি। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, স্কুলের পাশে ইটভাটা হওয়ায় তাদের অনেক সমস্যা হয়। কেএইচএন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, অভিভাবক ও স্থানীয়রা জানান, স্কুলের শ্রেণিকক্ষ ও অফিস রুম ঘেঁষে অবৈধ ইটভাটা গড়ে তোলা হয়েছে। ভাটার কারণে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। ভাটার কালো ধোঁয়া, ধুলাবালি শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করে বলে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বিষাক্ত ধোঁয়া ও ধুলাবালির কারণে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ক্লাস করছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। অবৈধ ইটভাটার কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে শিক্ষার্থীরা ও স্থানীয়রা। অবৈধ ইটভাটাগুলো দ্রুত বন্ধের দাবি জানিয়েছেন তারা। কেএইচএন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সোলাইমান হোসেন এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
আরএইচআরবি ভাটার মালিক হানিফ, খয়বার, রফিক মাস্টার এবং এমএএসবি ইটভাটার মালিককে তাদের ভাটায় গিয়ে পাওয়া যায়নি। এমনকি মোবাইলে কল দিলেও তারা রিসিভ করেননি। কুষ্টিয়ার বিভিন্ন উপজেলার কয়েকজন কৃষক বলেন, আইন আছে কিন্তু কেউ মানে না। প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন। প্রতিবছরের মতো এবারও ইট তৈরির মৌসুমে প্রতিদিন ফসলি জমির মাটি ইটভাটায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ কারণে আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। এছাড়া ফসলি জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে ইটভাটা। ধোঁয়া ও ধুলাবালির কারণে ফসল ও পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ইটভাটা মালিক বলেন, লাইসেন্সবিহীন ইটভাটাগুলো প্রশাসনকে ম্যানেজ করে চালানো হয়। কুষ্টিয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. হায়াত মাহমুদ বলেন, কৃষি জমিতে ইটভাটা নির্মাণের অনুমতি কৃষি বিভাগ থেকে দেওয়া হবে না। কৃষি জমিতে ইটভাটা হলে কৃষি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডা. এ এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ইটভাটার ধোঁয়া ও ধুলাবালি স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ইটভাটা থেকে নির্গত ধোঁয়া ও ধুলাবালি শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করলে এজমা ও এলার্জি রোগ হয়। ফলে ইটভাটার আশপাশে বসবাসরত মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি দেখা যায়। অবৈধ সব ইটভাটার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন পরিবেশ অধিদপ্তর কুষ্টিয়া কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক হাবিবুল বাশার। তিনি বলেন, কুষ্টিয়ায় ১৭০টি ইটভাটার মধ্যে ১৪৮টি ভাটাই অবৈধ। বাকি ২২টি বৈধ। সব অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হবে।