অভয়নগর সংবাদদাতা
যশোরের অভয়নগর উপজেলার যশোর-খুলনা রুটে ৩০ কিলোমিটার রেলপথে ৪৫ টি রেল ক্রসিং রয়েছে। এর মধ্যে ৩৬টি রেল ক্রসিংয়ে যেমন নেই গেটম্যান, তেমনি রাখা হয়নি কোনো নিরাপত্তা মূলক ব্যবস্থা। এর ফলে এসব উন্মুক্ত রেলগেট দিয়ে ঝূঁকি নিয়ে যানবাহন এবং লোক চলাচল করে। আর প্রতিনিয়ত ঘটছে দূর্ঘটনা। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, অভয়নগর উপজেলার শিল্প ও বন্দর নগরী নওয়াপাড়ার মধ্যে নওয়াপাড়া রেল স্টেশনটি। নগরীতে নদীর তীর জুড়ে গড়ে উঠেছে ঘাট, গোডাউন, বিভিন্ন কলকারখানা, কয়লা ও সারের ড্যাম্প। এ সকল ঘাট, গোডাউন, কলকারখানা, কয়লা ও সারের ড্যাম্প থেকে মাল লোড ও আনলোড করে পরিবহনগুলোকে রেলওয়ের উপর দিয়ে যাতায়াত করে মুল সড়কে উঠতে হয়।
আর সেই সুযোগে রেলওয়ের উপর গড়ে উঠেছে অসংখ্যা অননুমাদিত ও অরক্ষিত লেভেল ক্রসিং। সূত্রমতে, ক্রসিংগুলোর মধ্যে আকিজ জুট মিল রোড ক্রসিং, নওয়াপাড়া গার্লস স্কুল রোড ক্রসিং, ভৈরব সেতু ক্রসিং ও আলীপুর বালিয়াডাঙ্গা ক্রসিং বেশী ঝুঁকিপূর্ণ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নওয়াপাড়া বাজারের ৬ নং ওয়ার্ডে মধ্য দিয়েন ওয়াপদাপাড়া গার্লস স্কুল সড়কের উপর রেল গেটটি। ব্যস্ততম ওই সড়ক দিয়ে সাধারণ পথচারী, স্কুল কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ যাতায়াত করছে ছোট বড় সব ধরণের যানবাহন। এই ক্রসিংয়ে কোন গেটম্যাননা থাকায় ঝুঁকি এড়াতে সম্প্রতি এই রেলগেটে নওয়াপাড়া পৌরসভার উদ্যোগে অস্থায়ীভাবে একজন গেটম্যান নিয়োগ করা হয়েছে। প্রায় একবছর ধরে গেটটি নিরাপদ রাখার দায়িত্ব পালন করছেন মাসুদ শেখ। এই গেটে নেই কোন নিরাপত্তামুলক ব্যবস্থা। কয়েক বছর আগে এখানে কলেজ শিক্ষক এক মোটরসাইকেল আরোহী ট্রেনের সাথে সংঘর্ষে নিহত হন। তাছাড়াও এই চলতি বছরে আর দুইজন ব্যক্তি রেলে কেটে মারা যায়। আকিজ জুট মিল গেট সংলগ্ন রেলগেটটি একে বারই উন্মুক্ত। রেলগেট দিয়ে আকিজ জুট মিলের কয়েক হাজার শ্রমিক ও আকিজ আইডিয়াল স্কুল ও কলেজে শিক্ষার্থীরা চলাচল করে। ফলে এ পথে অনেক ভারি ও হালকা যানবাহন নিয়মিত চলাচল করে। এই ক্রসিং পর হওয়ার সময় গত বছর ২২ জুলাই বাসুদেব সুর নামের এক মোটরসাইকেল আরোহী ও এর আগে ২০২১ সালে ৯ সেপ্টেম্বর জিসান নামের এক স্কুল ছাত্র ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। এর আগে এই ক্রসিংয়ে মারাত্মক কয়েকটি দূর্ঘটনা ঘটেছে।
সূত্র মতে, ভৈরব সেতু চালু হওয়ার পর ২০২০ সালে ট্রেন প্রাইভেটকারের সংঘর্ষে ঘটনাস্থলে দুইজন ও পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও দুইজন মারা যান। এরপর ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট অস্থায়ী একজন গেটম্যান নিয়োগ দেয়। এ বছর ১৫ জানুয়ারী অননুমোদিত আলীপুর ক্রসিংয়ে ঢাকাগামী নকসীকাঁথার সাথে ট্রাকের সংঘর্ষে ট্রাকটি ডুমড়ে-মুচড়ে যায় এবং ট্রেনের ইঞ্জিন ও একটি বগি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। আকিজ জুটমিল গেট সংলগ্ন চা দোকানী গোস্তাগী সরদার বলেন, ‘গেট আর গেটম্যান না থাহায় জাগাটি খুব রিস্কি। গেট দিয়ে আজারো শ্রমিক ও ছাত্রছাত্রী যায়া-আসা করে। তাই ট্রেনের উইসেল শুনার সাতে আমি ঁেচচামেচি করে পতচারিদের তামায়।’ ট্রাকচালক ইকবাল হোসেন জানান, রাতে ট্রেনের আলো দেখে এ রেলগেটের ওপর দিয়ে সতর্কতার সঙ্গে চলাচল করতে হয়। কিন্তু দিনে ট্রেন আসছে কিনাতা বোঝা যায় না। ফলে গাড়ি থামিয়ে দু’পাশ দেখে পার হতে হয়। নওয়াপাড়া গার্লস স্কুল রোড ক্রসিং গেটম্যান মাসুদ শেখ বলেন, প্রায় এক বছর যাবৎ গেট কিপার হিসেবে নওয়াপাড়া পৌরসভার মাধ্যমে এই গেটে কাজ করছি। মাত্র তিন হাজার ৯০০টাকা বেতনে মানুষের যানমালের নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছি কিন্তু আমার নিজের কোন নিরাপত্তা নেই। এখানে বসার জায়গা নেই নেই কোনো নিরাপত্তা বেষ্টনি। নওয়াপাড়া রেল ষ্টেশন মাষ্টার মো. ইয়াছিন আরাফাত বলেন, উপজেলায় নয়টি অনুমদিত রেল ক্রসিং আছে। অনুমদনহীন ক্রসিংয়ের সংখ্যা বলতে পারব না। অননুমদিত ক্রসিংয়ের নানা সমস্যার ব্যাপারে পাকশীবিভাগীয় রেলওয়ের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।