২৪শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ৯ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

লোকে ভরপুর হবে চিড়িয়াখানা, জাদুঘর-হাতিরঝিলও থাকবে মুখর

প্রতিদিনের ডেস্ক
আর কয়েকদিন পরই মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। এর পরপরই পহেলা বৈশাখ, বাংলা সনের প্রথম দিন। দুটি উৎসব পাশাপাশি হওয়ায় এবার বাড়তি উন্মাদনা দেশবাসীর মনে। ঈদ এবং পহেলা বৈশাখের ছুটিতে রাজধানীবাসী প্রিয়জনদের নিয়ে সময় কাটাবেন রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের বিনোদনকেন্দ্রগুলোয়। এরই মধ্যে বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। দুটি উৎসবের ছুটি একসঙ্গে মিলে যাওয়ায় এবার বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে ভিড় বেশি থাকবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তারা বলছেন, মিরপুরে জাতীয় চিড়িয়াখানা, আশুলিয়ায় ফ্যান্টাসি কিংডম, সিনেপ্লেক্স ছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, হাতিরঝিলসহ পুরো রাজধানীতে ঈদ আনন্দে বেড়ানোর হিড়িক পড়বে।
রাজধানীর বিভিন্ন বিনোদনকেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, ঈদ সামনে রেখে চলছে বিশেষ প্রস্তুতি। চিড়িয়াখানায় চলছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, রাস্তা ও খাঁচা সংস্কারের কাজ। প্রস্তুত হচ্ছে অন্য বিনোদনকেন্দ্রও। ঈদের ভিড় সামাল দিতে বিশেষ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে এসব বিনোদনকেন্দ্রে।
ঈদের দিন চিড়িয়াখানার পাশাপাশি মিরপুরের বোটানিক্যাল গার্ডেন, আগারগাঁওয়ের বিমান জাদুঘর, শ্যামলী শিশুমেলা, ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর, রাসেল পার্কসহ অন্য বিনোদনকেন্দ্রও খোলা থাকবে। ঈদের ছুটিতে এসব বিনোদনকেন্দ্রেও প্রচুর দর্শনার্থীর সমাগম হবে। পুরান ঢাকার ওয়ারিতে অবস্থিত বলধা গার্ডেন, কোতোয়ালি এলাকার আহসান মঞ্জিল খোলা থাকবে। এসব বিনোদনকেন্দ্রে ঢুকতে হবে টিকিট কেটে।
ঈদে মিরপুর চিড়িয়াখানা হতে পারে ঘুরতে যাওয়া সব বয়সী মানুষের অন্যতম বিনোদনকেন্দ্র। ঈদের দিন সকাল থেকেই দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকবে চিড়িয়াখানা। দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা ও ভোগান্তি কমাতে বেশকিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মেরামত করা হচ্ছে খাঁচা, দেওয়াল ও রাস্তা। এছাড়া ভিড় সামলাতে আরও তিন-চারটি অস্থায়ী গেট করার পরিকল্পনা নিয়েছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। প্রাণীদের সুরক্ষায় নেওয়া হচ্ছে বিশেষ ব্যবস্থা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদের দিন থেকে পরবর্তী পাঁচ-ছয়দিনে চিড়িয়াখানায় পাঁচ লাখ দর্শনার্থীর সমাগম ঘটবে। ঈদের তিনদিন দর্শনার্থীর ব্যাপক চাপ থাকবে। এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত বিনোদনকেন্দ্রটিতে দর্শনার্থীদের চাপ থাকবে।
এ বিষয়ে চিড়িয়াখানার পরিচালক ড. মোহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও সকাল থেকেই শুরু হবে দর্শনার্থীদের আগমন। তবে ঈদের নামাজের পরই পুরো মাত্রায় ভিড় শুরু হবে। ঈদে নতুন কোনো প্রাণী প্রদর্শন করছি না। আমাদের টেন্ডার প্রক্রিয়া চলছে। সদ্য জন্ম নেওয়া বাঘ শাবক ও অন্য প্রাণী দর্শনার্থীদের বিনোদন দেবে।
প্রাণীদের সুরক্ষায় নেওয়া নানান পদক্ষেপের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, প্রাণীগুলো যাতে অসুস্থ না হয় সে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রাণীদের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য টিকা ও বুস্টার দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, চিড়িয়াখানার সাজসজ্জা করছি। কিছু খাঁচা মেরামত করেছি। নতুন দুটি ক্যান্টিন ঈদের আগেই উদ্বোধন করেছি। এছাড়া দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার প্রতি আমরা মনোযোগী। তারা যেন সহজে চিড়িয়াখানায় প্রবেশ করতে পারেন সেজন্য টিকিট কাউন্টার ও প্রবেশ গেট বাড়ানোর কাজ করছি। আইনশৃঙ্খলার জন্য ট্রাফিক পুলিশ, র্যাব, সিটি করপোরেশন সব জায়গায় কথা বলেছি।
ঢাকার অদূরে আশুলিয়ায় অবস্থিত ফ্যান্টাসি কিংডম বিনোদনপিপাসুদের একটি পছন্দের জায়গা। ঈদ উপলক্ষে বিশেষ আয়োজন থাকছে বিনোদনকেন্দ্রটিতে। নবীনগর-চন্দ্রা হাইওয়ে রোডের বারইপাড়ায় অবস্থিত নন্দন পার্কে থাকছে ঈদ উপলক্ষে আট দিনব্যাপী আয়োজন। ডিজে পার্টি, ড্যান্স শো, ফায়ার ড্যান্স, ডল শো থাকছে বিনোদনকেন্দ্রটিতে। ঢাকার অদূরে অবস্থিত অন্য রিসোর্ট, হোটেলগুলোও দিচ্ছে আকর্ষণীয় অফার।স্টার সিনেপ্লেক্সের চেয়ারম্যান মাহবুব রহমান বলেন, মার্চ মাসও শেষ হলো, কিন্তু কোনো ভালো বাংলা ছবি পাইনি। এখন বাংলা ছবির প্রতি মানুষের আগ্রহ ও প্রত্যাশা বেড়েছে।
ঈদের সিনেমা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এবার আমরা অনেক ছবি রিলিজ করছি। আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল কোনটা ফেলে কোনটা নেবো, হল সংখ্যা পর্যাপ্ত নয়। এ কারণে ছয়-সাতটার বেশি ছবি আমরা নিতে পারছি না। হলিউডের কয়েকটি ছবি চলবে। ঈদে আমরা বাংলা ছবির ওপর নির্ভরশীল। ভালো ভালো বাংলা ছবি আসছে। আশা করছি ছবিগুলো শুধু ঈদের এক সপ্তাহ নয়, পুরো মাস চলবে। ঈদে আধুনিক নতুন ছবি, নতুন নির্মাতার কাজ দেখতে দর্শকরা পছন্দ করেন। ভালো গল্প হলে মানুষ দেখতে আসবে। ভালো সিনেমাট্রগ্রাফি, স্টোরি টেলিং- এগুলো হলে দর্শক হলে আসবেন।
জানতে চাইলে সেন্টার ফর ট্যুরিজম স্টাডিজের চেয়ারম্যান ও ট্যুরিজম ডেভেলপার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের অ্যাডভাইজার মো. জামিউল আহমেদ বলেন, এবার ঈদের ছুটি অনেক লম্বা। যাদের সামর্থ্য আছে তারা থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ভারত, মালদ্বীপসহ বিভিন্ন দেশে বেড়াতে যাবেন। কেউ কেউ ওমরায় যাবেন। দেশের মধ্যে কক্সবাজার ও সিলেটে অসংখ্য মানুষ যাবে।তিনি বলেন, রাজধানীর বিনোদনকেন্দ্রগুলোর মধ্যে চিড়িয়াখানা, ধানমন্ডি, বিমান জাদুঘর ও হাতিরঝিলসহ অন্য বিনোদনকেন্দ্রে দর্শনার্থীদের পদচারণা থাকবে।
চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের ভিড় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিনোদনকেন্দ্রে যাওয়ার ব্যাপারে একজন দর্শনার্থী তিনটি জিনিস মাথায় রাখেন। স্বাস্থ্য, টাকা ও সময়। এই তিনটির সমন্বয়ের ওপর নির্ভর করে, কে কোথায় বেড়াবেন। যাদের সামর্থ্য আছে তারা ইউরোপ যান, কারও একটু কম আছে তারা ভারতে যাবেন। আর যাদের নেই তারা চিড়িয়াখানা যাবেন, খোলা পার্কে যাবেন।
তিনি বলেন, যাদের সামর্থ্য নেই তারা তো ঘরে বসে থাকতে পারে না। তারা সাধ্যের মধ্যে পরিবার নিয়ে পছন্দের বিনোদনকেন্দ্রে যাবেন।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়