অভয়নগরে নিলামের আগে গাছ কাটছিলেন জেলা পরিষদের সদস্য

0
8

অভয়নগর সংবাদদাতা
যশোরের অভয়নগর উপজেলায় নিলামের আগে গাছ কাটার অভিযোগ উঠেছে যশোর জেলা পরিষদের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য এবং অভয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আব্দুর রউফ মোল্যা বিরুদ্ধে। নিলামের মাধ্যমে বিক্রয়ের জন্য তিনটি সরকারি রেইনট্রি গাছের মূল্য নির্ধারণ করতে সামাজিক বন বাগান কেন্দ্রকে চিঠি দিয়েছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও)। সে অনুযায়ী সামাজিক বন বাগান কেন্দ্রের ফরেস্টার গাছ তিনটির সরকারি মূল্য নির্ধারণ করে প্রতিবেদন দেন। এ ব্যাপারে আর কোনো সিদ্ধান্ত নেননি ইউএনও। কিন্তু নিলামের আগে গাছ কাটা শুরু করা হয়েছে। জানতে চাইলে আব্দুর রউফ মোল্যা বলেন, ‘গাছের কারণে জমির মালিকের বাড়ির কাজ শেষ করতে সমস্যা হচ্ছে।

গাছ তিনটি সরকারি নয়, ব্যক্তি মালিকানাধীন। তিনি তার সীমানার তিনটি গাছ বিক্রি করে টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে চান। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইউএনও সাহেব বন বিভাগের মাধ্যমে গাছের মূল্য নির্ধারণ করেছেন। তিনি এখনও গাছ কাটার অনুমোদন দেননি। কিন্তু আমি শ্রমিক দিয়ে একটি গাছের ডালপালা কেটে ফেলেছি। আমি বিষয়টি বুঝে উঠতে পারিনি। এটা ঠিক হয়নি। তবে অপর গাছের ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই।’ রোববার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, অভয়নগর উপজেলা নওয়াপাড়া থেকে একটি সড়ক মনিরামপুর উপজেলা সদরের সাথে মিশেছে। সড়কটির নাম নওয়াপাড়া-মনিরামপুর সড়ক। সড়কটির নওয়াপাড়া থেকে সুন্দলী পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে বিভিন্ন প্রজাতির অসংখ্য গাছ রয়েছে। সড়কটির নওয়াপাড়া থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে রানা ভাটার পাশে সড়ক ঘেঁষে একটি দোতলা বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে। নির্মাণাধীন বাড়ির সামনে সড়কের পাশে দুটি রেইনট্রি গাছ রয়েছে।

বাড়ির পাশে সড়ক ঘেঁষে আরেকটি রেইনট্রি গাছ আছে। গাছ তিনটি কিছু অংশ ছাল তুলে সেখানে লাল কালি দিয়ে ১, ২ ও ৩ সংখ্যা দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ১ নম্বর গাছের সব ডাল কাটা হয়েছে। ২ নম্বর গাছের দুটি ডাল বাদে সব ডাল কাটা হয়েছে। তবে ৩ নম্বর চিহ্নিত গাছের কোনো ডালপালা কাটা হয়নি। সেখান থেকে প্রায় ২০০ মিটার দূরে সড়কের পাশে আরেকটি বড় রেইনট্রি গাছের গোড়ার মাটি খুঁড়ে রাখা হয়েছে। গাছের কয়েকটি শিকড়ও কাটা হয়েছে। জমির মালিক উপজেলা নওয়াপাড়া গ্রামের নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এই গাছ কাটার ব্যাপারে আমি কিছুৃই জানি না। জেলা পরিষদের সদস্য আব্দুর রউফ মোল্যা এবং বন বিভাগের লোকজন বৃহস্পতিবার এসে তিনটি গাছ মার্কিং করে গেছেন। গতকাল শনিবার ধোপাদী গ্রামের রাজু আহমেদের কয়েকজন লোকজন এসে গাছের ডালপালা কেটেছে।’ রাজু আহমেদ বলেন, আমি শ্রমিক দিয়ে গাছ কাটার কাজ করি। আমাকে জেলা পরিষদের সদস্য আব্দুর রউফ মোল্যা দুটি গাছ কাটতে বলেন। এজন্য শনিবার আমি সাত জন শ্রমিক নিয়োগ করে গাছ কাটা শুরু করেছিলাম।গাছের ডাল কাটার সময় বাঁধা আসে। এরপর আমি শ্রমিকদের সেখান থেকে উঠায়ে নিয়ে এসেছি। আজ সেখানে আবার গাছ কাটতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমি যাইনি।’ জানা গেছে, ১৯৯৩ সালের ১ জুলাই তৎকালিন নওয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ(বর্তমান নওয়াপাড়া পৌরসভার একাংশ এবং সুন্দলী ইউনিয়ন পরিষদ), বেসরকারি সংগঠন(এনজিও) ডেভেলপমেন্ট পার্টনার(ডিপি) এবং সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের সদস্যদের মধ্যে ২০ বছর মেয়াদী ত্রিপক্ষীয় একটি চুক্তি হয়। ২০১৩ সালের ১ জুলাই চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে। চুক্তির প্রথম পক্ষ নওয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ, দ্বিতীয় পক্ষ ডেভেলপমেন্ট পার্টনার এবং তৃতীয় পক্ষ সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের সদস্যরা যাঁদের ৫২ জন নারী এবং একজন পুরুষ। ওই বছর বিশ্ব খাদ্য কর্সূচির সহযোহিতায় ডেভেলপমেন্ট পার্টনারের তত্ত্বাবধানে সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের সদস্যরা নওয়াপাড়া-সুৃন্দলী সড়কের সাত কিলোমিটার অংশের উভয় পাশে বিভিন্ন প্রজাতির ১৪ সহস্রাধিক গাছের চারা লাগান। চারার যত্ন, রক্ষণাবেক্ষণ এবং নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের সদস্যরা। চুক্তির শর্তানুসারে গাছ এবং গাছের ফল বিক্রির টাকা থেকে নওয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ ২০ শতাংশ, ডেভেলপমেন্ট পার্টনার ২০ শতাংশ এবং সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের সদস্যরা ৬০ শতাংশ টাকা পাবেন।

চারাগুলো এখন বৃক্ষে পরিণত হয়েছে। এসব গাছের ওপরই দায়ের কোপ পড়েছে। ডেভেলপমেন্ট পার্টনারের(ডিপি) পরিচালক কানিজ শবনব বলেন,‘অনেক আগেই মেয়াদ শেষ হলেও নানা জটিলতার কারণে গাছগুলোর ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়নি। যে গাছগুলো কাটা হচ্ছে সেগুলো ডিপির লাগানো। চারটি গাছের মূল্য দুই লাখ টাকার বেশি হবে। এ ব্যাপারে আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগ দিয়েছি সোমবারে।’ উপজেলা ভূমি কার্যালয় সূত্র জানা গেছে, গত ২ এপ্রিল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার(ভূমি) (অতিরিক্ত দায়িত্ব) কে এম আবু নওশাদ উপজেলা সামাজিক বন বাগান কেন্দ্রের ফরেস্টারকে একটি চিঠি দেন। চিঠিতে তিনি উপজেলার নূরবাগ থেকে সুন্দলী সড়ক সংলগ্ন রানা ভাটার পাশে তিনটি রেইনট্রি গাছ নিলামের মাধ্যমে বিক্রয় করার লক্ষ্যে সরকারি মূল্য নির্ধারণ করে জরুরিভাবে প্রেরণের অনুরোধ করেন। উপজেলা ফরেস্টার তিনটি গাছের মূল্য ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করে গত ৪ এপ্রিল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট প্রতিবেদন দেন। এরপর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গাছ তিনটির ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত দেননি। এ ব্যাপারে উপজেলা সামাজিক বন বাগান কেন্দ্রের ফরেস্টার হাফিজুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। তবে উপজেলা সামাজিক বন বাগান কেন্দ্রের বন প্রহরী আলমগীর হোসেন বলেন, ‘ফরেস্টারের পক্ষে আমি তিনটি রেইনট্রি গাছের মূল্য নির্ধারণ করেছি। তিনটি গাছের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা। অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে এম আবু নওশাদ বলেন,‘গাছ কাটার বিষয়ে আমি এতো কিছুৃ জানি নাই। গাছ তিনটি ব্যক্তি মালিকানা । ঐ ব্যক্তি গাছ তিনি বিক্রির টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে চান। এজন্য ফরেস্টারকে গাছের মূল্য নির্ধারণের জন্য চিঠি দিয়েছিলাম। গাছের মূল্য নির্ধারণের প্রতিবেদনও পেয়েছি। কিন্তু গাছ কাটার ব্যাপারে কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। গাছ কাটার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে তা বন্ধ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’