প্রতিদিনের ডেস্ক
সোমালিয়ায় ঈদের দিন ছিল বুধবার (১০ এপ্রিল)। গত ২৯ দিন ধরে দেশটির জলদস্যুদের হাতে জিম্মি আছেন বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক। বুধবার দস্যুদের পাহারায় ঈদের নামাজ পড়েছেন তারা। বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টার দিকে সোমালিয়ার উপকূলে নোঙর করা জাহাজটির ডেকে ঈদুল ফিতরের নামাজ পড়েন নাবিকরা। এ সময় অস্ত্রসহ পাহারা দিচ্ছিল দস্যুরা। নতুন পোশাক পরে নামাজ শেষে সবাই জাহাজের ডেকে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে স্বজনদের কাছে পাঠিয়েছেন। নাবিকদের একাধিক স্বজন ও বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা বিষয়টি বাংলা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেছেন। বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এম আনাম চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সোমালিয়ায় বুধবার ছিল ঈদ। সব নাবিক জাহাজের ওপর ডেকে একসঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। ঈদের নতুন পোশাক অর্থাৎ পায়জামা-পাঞ্জাবি ও টুপি পরেছেন তারা। নামাজ পড়ার পর জাহাজের ওপর একসঙ্গে ছবি তুলেছেন। এ রকম একটি ছবি আমার কাছে পাঠিয়েছেন। ছবিতে ২২ নাবিককে দেখা যাচ্ছে। আরেকজন ছবি তুলেছেন। তারা ২৩ জনই সুস্থ এবং ভালো আছেন।’ নাবিকদের নতুন পোশাক কে দিয়েছে জানতে চাইলে এম আনাম চৌধুরী বলেন, ‘জাহাজটি আরব আমিরাতের আল হামরাহে যাচ্ছিল। ফিরতে দীর্ঘ সময় লাগবে ভেবে নাবিকরা ঈদের জামা-কাপড় জাহাজে উঠার সময় সঙ্গে নিয়ে গেছেন। কারণ সমুদ্রপথে নাবিকদের কোনও না কোনও দেশে ঈদ করতে হতো।’ এক নাবিকের স্ত্রী জানিয়েছেন, তার স্বামী বুধবার বিকাল ৫টার দিকে ফোন করেছিলেন। সকালে জাহাজের নাবিকরা দস্যুদের কাছে নামাজের সুযোগ করে দেওয়ার অনুরোধ করেন। পরে দস্যুরা ঈদের নামাজ পড়তে দেয়। তারা জাহাজের ডেকে নামাজ আদায় করেন এবং এ সময় ভারী অস্ত্রসহ জলদস্যুরা পাহারা দেয়। জাহাজে ওয়েলার পদে কর্মরত শামসুদ্দিনের ভগ্নিপতি বদরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার শ্যালক বুধবার সন্ধ্যায় আমাদের ইফতারের সময় ফোন করেছে। আমার সঙ্গে এবং তার স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে কথা বলেছে। জানিয়েছে, তারা ভালো আছে। সোমালিয়ায় বুধবার ঈদ হওয়ায় দস্যুদের অনুমতি নিয়ে সব নাবিক একসঙ্গে জাহাজের ডেকে ঈদের নামাজ পড়েছেন। পরে তারা সেমাই রান্না করে খেয়েছেন।’ জাহাজটির মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান এসআর শিপিং লিমিটেডের মূল সংস্থা কেএসআরএম গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সব নাবিক আজ একসঙ্গে ঈদের নামাজ পড়েছেন। তারা সে ছবি আমাদের পাঠিয়েছেন। সব নাবিক সুস্থ আছেন। তাদের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। ফিরিয়ে আনতে আমরা সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। দস্যুদের সঙ্গে আমাদের আলোচনায় অগ্রগতি আছে। আশা করছি যেকোনও দিন নাবিকরা বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরবেন।’ এসআর শিপিং লিমিটেডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জাহাজে প্রায় ৫৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা আছে। গত ৪ মার্চ আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকের মাপুতো বন্দর থেকে কয়লা নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল। ১৯ মার্চ সেটি আরব আমিরাতের আল হামরাহ বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল। এর মধ্যে ১২ মার্চ দুপুর দেড়টার দিকে ২৩ নাবিকসহ ভারত মহাসাগরে সোমালিয়া উপকূলে দস্যুদের কবলে পড়ে। ভাড়ার বিনিময়ে মোজাম্বিক থেকে আরব আমিরাতে আমদানিকারকের কাছে কয়লা পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব ছিল নাবিকদের। এই প্রতিষ্ঠানটির অধীনে ২৪টি জাহাজের মধ্যে সর্বশেষ যুক্ত করা হয় এমভি আবদুল্লাহ। ২০১৬ সালে তৈরি জাহাজটির বাল্ক ক্যারিয়ারটির দৈর্ঘ্য ১৮৯ দশমিক ৯৩ মিটার এবং প্রস্থ ৩২ দশমিক ২৬ মিটার। ড্রাফট ১১ মিটারের কিছু বেশি। গত বছর জাহাজটি এসআর শিপিং কিনে নেওয়ার আগে এটির নাম ছিল গোল্ডেন হক। মালিকানা পরিবর্তনের পর নাম বদলে রাখা হয় এমভি আবদুল্লাহ।