খুলনা প্রতিনিধি
এবার ঈদে যারা ভাবছেন খুলনাতেই থাকবেন তারা এ ছুটিতে কাছে কোথাও থেকে ঘুরে আসতে পারেন। খুলনা শহরের আশপাশের দর্শনীয় কয়েকটি স্থান সম্পর্কে জানিয়ে দিচ্ছি। ঈদ সামনে রেখে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে বিশেষ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বিনোদনকেন্দ্রগুলো সেজেছে নতুন রূপে। কোথাও সংস্কার করা হচ্ছে রাইডগুলো, কোথাও পড়ছে নতুন রঙের আঁচড়। ধুয়েমুছে সাফ করা হচ্ছে এখানে-ওখানে থাকা ময়লা-আবর্জনা। কোথাও কোথাও করা হচ্ছে মেরামত। একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে প্রিয়জনদের নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন বেশ কিছু দর্শনীয় স্থানে।
শেখ রাসেল ইকোপার্ক
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপরূপ লীলাভূমিতে পরিণত হয়েছে খুলনার শেখ রাসেল ইকোপার্ক। শহরের কোলাহল ও যান্ত্রিকতা ছেড়ে ক্ষণিকের জন্য হলেও প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যাওয়ার অন্যতম স্থান এখন এ পার্কটি। পুরো এলাকাটি পরিণত হয়েছে সবুজ অরণ্যে। তৈরি করা হয়েছে পরিবেশবান্ধব স্থাপনা। এখানে প্রবেশ করতেই পর্যটক হারিয়ে যাবেন ছায়াশীতল মনোরম পরিবেশে। এখানে লাগানো হয়েছে বনজ, ফলদ ও শোভাবর্ধনকারী বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম লেক। পার্কের প্রবেশদ্বারের এক পাশে রয়েছে পার্কিং প্লেস ও অপর পাশে তৈরি হয়েছে প্লাজা। যেখান থেকে পার্কের একটি অবয়ব দেখার সুযোগ পাবেন যারা পুরো পার্ক ঘূরে দেখার সুযোগ পাবেন না তারা। বিশেষ করে বৃদ্ধ, হাঁটা-চলায় অপারগ ব্যক্তি বা প্রতিবন্ধীদের জন্য এটি হতে পারে স্থাপনা।
খুলনা শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে বটিয়াঘাটা উপজেলার মাথাভাঙ্গা এলাকায় রূপসা নদীর তীরে ৪৩ একর খাস জমিতে নির্মিত হয়েছে পার্কটি। বিভাগীয় প্রশাসনের উদ্যোগে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগ। ইতোমধ্যে প্রকল্পের প্রথম অংশের কাজ শেষ পর্যায়ে।
পার্কের প্রবেশ মুখেই বিশাল দৈর্ঘ্যের লেক নির্মাণ করা হয়েছে। লেকের দুপাড়ে তৈরি করা হয়েছে ব্লকের তৈরি দেড় কিলোমিটার লম্বা রাস্তা। যার পুরোটাই পরিণত হয়েছে সবুজ অরণ্যে। পার্কের প্রবেশমুখের বাম পাশে তৈরি করা হয়েছে ঝাউবন আর ডান দিকে রয়েছে ঔষুধি বাগান। ঔষুধি বাগানে চালতা, হরিতকি, বহেরা, জামসহ বিভিন্ন প্রকার গাছ লাগানো হয়েছে। এখানে আসা ভ্রমণপিপাসুদের ক্লান্তি দূর করতে তিনটি গোলঘর ও বসার জন্য পাঁচটি বেঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছে। পার্কের শেষ অংশে রূপসা নদীর বেড়িবাঁধের পাশেই সুন্দরবনের আদলে ম্যানগ্রোভ জোন তৈরি করা হয়েছে। এখানে গোলপাতা, কেওড়া, সুন্দরি, কাকড়াসহ ম্যানগ্রোভ প্রজাতির বিভিন্ন প্রকার গাছ লাগানো হয়েছে।
বনবিলাস চিড়িয়াখানা ও জাহানাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পার্ক
নিরাপত্তা বেষ্টিত খুলনার একমাত্র চিড়িয়াখানায় দেখা মিলবে সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিতা বাঘ, কুমির, হরিণ, বানর, হনুমান, ভল্লুক, অজগর সাপসহ বিভিন্ন পশু-পাখি। সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিলাস চিড়িয়াখানা উন্মুক্ত।
চিড়িয়াখানাটি সেনানিবাসের লোকজন নিয়ন্ত্রণ করছে বলে যাতে অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটে না। বনবিলাস চিড়িয়াখানার চারপাশ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে লেক, বিনোদনের জন্য রাখা হয়েছে নৌকা ভ্রমণ। জাহানাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পার্কের ভেতরে শিশুদের নানা রকম রাইডও আছে।
ওয়ান্ডারল্যান্ড শিশুপার্ক
খালিশপুর এলাকার চিত্তবিনোদনের একমাত্র স্থান ওয়ান্ডারল্যান্ড শিশুপার্ক। খালিশপুরে ১৯৯৫ সনে ৩.৬৩ একর জমির ওপর ওয়ান্ডারল্যান্ড শিশু পার্কটির আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হয়। পার্কটিতে নতুনভাবে ফ্যামিলি কোস্টার, জেট কোস্টার, সুউচ্চ ওয়ান্ডার হুইল, বৃহৎ মেরি গো রাউন্ড সোয়ান ট্রেন, কিড রাইডস ইত্যাদি সংযোজিত হয়েছে। এছাড়া ওয়াটার পুল নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে।
৬ ও ৭ নম্বর ঘাট
খুলনা মহানগরের কোলঘেঁষে ভৈরব নদের ৬ ও ৭ নম্বর ঘাট এলাকা এখন দর্শনার্থীদের উন্মুক্ত বিনোদন কেন্দ্র, যা রাজশাহীর পদ্মার পাড়ের মতো চিত্তবিনোদনের কেন্দ্র হিসেবে পরিণত হচ্ছে। দিন যতই যাচ্ছে বিনোদনপ্রেমীদের ভিড় ততই বাড়ছে এক সময়ের খুনি এরশাদ শিকদারের আতঙ্কের এ ঘাট এলাকায়। নদীর পাড়ে দৃষ্টিনন্দন বেঞ্চে বসে নদীর সুন্দর ও নান্দনিক দৃশ্য উপভোগ করা সম্ভব।
প্রেমকানন
নগরের জোড়া গেট এলাকায় অনেকটা নির্জন পরিবেশ প্রেমকাননে। এ পার্কে ঈদের ছুটিতে সপরিবারে অনেকেই ঘুরতে আসেন।
শহীদ হাদিস পার্ক
শহীদ হাদিস পার্ক বিভাগীয় শহর খুলনার বাবুখান রোডে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক পার্ক, যা ১৮৮৪ সালে খুলনা মিউনিসিপ্যাল পার্ক প্রতিষ্ঠিত হলেও পরে ১৯৬৯ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি গণঅভ্যুত্থানে শহীদ শেখ হাদিসুর রহমান বাবুর নামে নামকরণ করা হয়। শহীদ হাদিস পার্কে ঢাকাস্থ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের অনুকরণে একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে। হাদিস পার্কে রয়েছে বিশাল লেক। লেকের ওপর শহীদ মিনার ও পানির ফোয়ারা তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া শহীদ হাদিস পার্কে নির্মিত পর্যবেক্ষণ টাওয়ার থেকে এক নজরে খুলনা শহরটাকে দেখা যায়।
জাতিসংঘ শিশুপার্ক
খুলনা মহানগরীর শান্তিধাম মোড়ের কাছে জাতিসংঘ শিশু পার্কটি অবস্থিত। পার্কটির একদিকে খানজাহান আলী রোড আর এক পাশে ইসলামপুর রোড। শিশুদের বিনোদনের জন্য পার্কটিতে রয়েছে দোলনাসহ বেশ কিছু রাইড। খুলনার প্রাণকেন্দ্রের এ পার্কটি সারা বছর সরব থাকে শিশুদের কলকাকলিতে।
খানজাহান আলী (র.) সেতু (রূপসা সেতু)
নান্দনিক সৌন্দর্য ও আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর কারণে রূপসা সেতু বরাবরই খুলনার মানুষের কাছে জনপ্রিয়তার শীর্ষে। বাংলাদেশের যতগুলো সেতুর রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম একটি সেতু হচ্ছে খানজাহান আলী সেতু। বেশিরভাগ মানুষের কাছে খানজাহান আলী সেতু রূপসা সেতু নামে পরিচিত। মূলত এ সেতুর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে দুই প্রান্তের দুটি করে চারটি সিঁড়ি রয়েছে। আর এসব সিঁড়ির সাহায্যে সেতুতে ওঠানামা করা হয়। বর্তমান সময়ে এ সেতুটি দেশের মানুষের কাছে একটি দর্শনীয় সেতু হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
প্রতি ঈদে মানুষের ঢল নামা খানজাহান আলী (র.) সেতু পাদদেশে রয়েছে বিনোদনের চমৎকার পরিবেশ। এখানে বসবে ঈদমেলা। সপ্তাহব্যাপী এ মেলায় হরেক রকমের পণ্য দেখা যাবে। ভয়ানক ডাইনোসরের কথা মনে পড়ে নগরীর মুজগুন্নী পার্কে গেলে। প্রতিটি বিনোদনকেন্দ্রই ঈদ উপলক্ষে সেজেছে নতুন রূপে।
ভূতের আড্ডা
বটিয়াঘাটার মাথাভাঙ্গা এলাকায় রূপসা রিভার পার্ক অ্যান্ড ভূতের আড্ডা অবস্থিত। যেখানে রয়েছে ভূতের আকৃতির সঙ্গে আওয়াজ। পাশে কবুতর, তুত পাখি, চিনা হাঁস ও বানর। পার্কের সব স্থানে কিছুক্ষণ পর পর দেখা মিলবে ৪ ফিট লম্বা বাঘের ড্রেসে মুখোশধারী ভূতের সঙ্গে।